মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৩৫:৫৮

কবি ভবন সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সময়ের দাবি

 কবি ভবন সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য  সময়ের দাবি

পাঠকই লেখক ডেস্ক: অনেকে ইয়ার্কি শুরু করেছে দেখছি। কবি ভবন নাম হলেও সকল লিখিয়েদের জন্য এ ভবন। বলছিলাম একটি বহুতল বিশিষ্ট কবি ভবনের দাবি তোলা প্রসঙ্গে।  কবিতা বা যত সহজে মানুষের কাছে, হৃদয়ে,মননে পৌছোতে পারে অন্য বিষয় গুলি তুলনা মূলক কম আমার দৃষ্টিতে । তাই নাম   কবি ভবন হওয়াটা সমীচীন । কবি ভবনের দাবিটি ফেসবুকে জোরে শোরে শুরু হওয়ার পর হাতে গোনা কয়েকজন বিদ্রুপ করছেন। অনেকেই আলাদা করে ছড়া ভবন,লেখক ভবন এর কথা ও বলছেন টিপ্পনী  করছেন। ভালো কাজে এই সব কীর্তি নতুন নয়। শিক্ষিতরাই এই সবে আঙুল তোলেন।কারন কি জানেন, ইগো!

 যে কোন বিষয় যে কোন এক জন তোলেন  বা প্রকাশ করেন।হয়তো এ বিষয়টি অনেকের মাথায় ছিলো। এখন শুধু  বাংলাদেশ কবি পরিষদ সভাপতি টিপু রহমান এর  নাম হবে, এ ভেবে বাঁকা চোখে ভালো কাজে বাগড়া দিচ্ছেন। অথচ যদি কোন দিন সফল হয়,কবি ভবন হয় প্রথম আহ্বানকারী বা উদ্যোগতার নাম ভুলে চেয়ার নিয়ে কক্ষ নিয়ে দলীয়  প্রভাব বিস্তার ইত্যাদী কর্ম যজ্ঞে লিপ্ত হবেন। এক্ষন যে দলীয় প্রভাব নেই একেবারে তা নয়.

 সে দিন জাদুঘরে যখন কবিতা পাঠের মঞ্চে জনাব টিপু রহমান বিষয়টি উচ্চারন করেন তার গলা কাঁপছিলো,হাত পা নড়ছিলো।কি ভাবছেন ?ভয়ে,মোটেই না, তিনি একটা দাবী, একটা অধিকার,একটা সৃষ্টির শুরু করছিলেন। তখন শুধু যে আমার মতো নগন্য প্রবাসির চোখ টিপু সাহেবের দিকেই ছিলো তা নয়।চোখ ছিল মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের দিকে,চোখ ছিলো দর্শক সারিতে কবিদের দিকে,আবৃতিকারদের দিকে। আমরা প্রবাসে যারা লেখা লেখি করি  দেশের খ্যাতিমানদের কাছে কতোটা গ্রহনযোগ্য,ব্যাক্তি পরিচয় কতোটা শক্তি ধর তার প্রমাণ যে পাইনি তা  কিন্তু নয়।

টিপু সাহেব মঞ্চে উঠার পুর্বে  আমরা ক্যান্টিনের পেছনে রক্তে নিকোটিন দিতে যাই।সেখানে তিনি বলেছিলেন ,আজ মঞ্চে উঠলে একটা সারপ্রাইজ পাবেন।ভেবে ছিলাম, উনি বোধ হয় আমার সাথে লাগেজ দেখে ভেবেছেন ,আমার থাকার জায়গা নেই ,তাই তার ঢাকায় বাসায় যাবার অফার দেবেন এই রকম ভাবার কারণ বেশ কয়েকবার এক সাথে আড্ডা দেয়ার প্রোগ্রাম হয়েছিলো। আবার ভাবলাম হয়তো তিনি তার স্থলে আমাকে পাঠাবেন কবিতা আবৃতি করতে। না তেমন  হয়নি,হলে এই কবি ভবনের দাবী শুরুটা সে দিন দেখা  হতো না,শোনা হতো না । মিস করতাম ,এই দাবীর প্রথম দিনের শ্রোতা হওয়া থেকে বঞ্চিত হতাম ।

 সে দিন প্রাণের প্রিয় বন্ধুকে দেখেছি আবৃতি করতে। দেখেছি দেশ বরেণ্য কবিদের। আবৃতিকারদের আবৃতি শুনেছি। ফেসবুকের কল্যানে অনেক প্রিয় মুখ ছিলো যাদু ঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে।যেখানে শুদ্ধতার কবি খ্যাত কবি অসীম সাহা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম দিনে বঙ্গোত্তম উপাধি দেন। সারা মিলনায়তনে করতালিতে বার বার বঙ্গোত্তম উচ্চারন করেন।  মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম  উপলক্ষে বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের অনুষ্ঠানে ,বঙ্গোত্তম উপাধির সন্ধ্যায় অনেকেই সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি উদার মনোভাবাপন্ন প্রধান মন্ত্রীর কাছে  এই কবি ভবনের দাবীটাকে আমলে নেন নি।  হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন,নীরব ছিলেন।

আমার কাছে দুটি কাজ ই ভালো লেগেছিলো। কিন্তু মঞ্চের কেউ কবি ভবনের দাবীটাকে সাথে সাথে সাধুবাদ দেননি।কারণটা আমার কাছে মনে  হয় ,তারা দাবী করেননি বা তাদের কেউ এই দাবি উত্থাপন  করেননি বলে ,কেউ  উচ্ছসিত ছিলেন না। এখন এই দাবি তীব্র হচ্ছে দিন দিন।

 ফেসবুক এখন প্রচার প্রসারের সহজ মাধ্যম,কবি ভবনের দাবিতে কবি গন দেশ বিদেশের  বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজের ছবি দিয়ে কবি ভবনের দাবী করছেন ।আমি  সে দিন তাৎক্ষনিক একাত্বতা জানিয়ে পত্রিকায় লিখেছি। আমি চাই সর্ব শ্রেনীর লেখকদের একটা মিলন স্থান হোক। নাট্য মঞ্চ প্রেস ক্লাবের মতো কবি লেখক সাহিত্যিক লিখিয়ে গনের একটা নির্ধারিত স্থান থাক। ব্যাক্তি ছবি দিয়ে কবি ভবনের দাবীটা চোখে লাগছে বটে । কেমন যেন কবি ভবনের চাইতে আত্মপ্রচারটা বেশী।

কবি লেখকদের নিয়ে একটা বৈঠক করে প্রেস রিলিজ দিয়ে কমিটির মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী পর্যন্ত না পৌছালে দাবী আদায় কঠিন হবে।দিন দিন ছড়া ভবন, গল্প ভবন,উপন্যাস ভবনের ও দাবী উঠিতে পারে। গা জ্বালা ধরা মানুষ যারা ফ্রন্ট লাইনে আসেও না,অন্যকে দেখতে চায় না তারা চুলকাবে জায়গা,বেজাগায়। কবি ভবন হলে দলাদলি হবে। ঘরে ঘরে আজ হচ্ছে দলাদলি আরতো সাহিত্যাঙ্গন। ব্যাঙের ছাতার মতো গ্রূপিং দেখে অনুমান করা যায় পদ পদবী কতটা জরুরী।

 কবি ভবন হোক আর সাহিত্য ভবন হোক আসলে একটা স্থান দরকার।আমরা  প্রবাসীরা না হয় থাকবো দর্শক সারিতে।  অবশ্য আরেকটি অনুষ্ঠানে  কবি অভিনেতা সোহেল রশিদের তৎপরতায় ,কবি ইউনুস ফার্সির সহযোগিতায় অনুপ্রাসের অনুষ্ঠানে কয়েকটি লাইন পড়ার সুযোগ হয়েছিলো অনুষ্ঠানের শেষ দিকে। প্রবাসে কাজের মাঝে ব্যাস্ত সময় আমাদের ,ছুটিতে গেলে কখনো সখনো দেখবো মুখ চেনা লোকের হাতে মাইক্রোফোন। তারা পড়বে স্তুতি কবিতা। প্রবাসী দর্শক হিসাবে  তালি দেব ঠাস ঠাস।  ভেদাভেদ ভুলে ,ছড়া ,কবিতা ,গল্প ,উপন্যাস ,ফিচারিস্ট,কলামিষ্ট এর আলাদা ভবনের দাবী না তুলে লেখকদের জন্য একটি স্থানের দাবি তুলি।হোক না ,নাম তার কবি ভবন.এ দাবি কবি টিপু রহমানের একার দাবি নয় , কবি ভবন সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য  সময়ের দাবী।
লেখক: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু (সিঙ্গাপুর প্রবাসী)
(সম্পাদক দায়ী নয়)
১১ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে