শনিবার, ০৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০১:৫০:২১

মাশরাফি এতই সস্তা!

মাশরাফি এতই সস্তা!

শেখ মিনহাজ হোসেন: অপমান মেনে হজম করে শুধু ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে খেলে যাবে? মাশরাফি এতই সস্তা! অপমান মেনে হজম করে শুধু ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে খেলে যাবে? মাশরাফি এতই সস্তা!

অনেকেই বলছেন মাশরাফির অবসর নিয়ে কেন এতো শোরগোল হচ্ছে। এবং এটা তো কেবল টি-টোয়েন্টি অবসর। মাশরাফি নিজেই টি-টোয়েন্টিকে পিকনিক ক্রিকেট বলেন। তার শরীরের সমস্যার কারণে টি-টোয়েন্টির অবসর নেয়া ঠিকই আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি!

হয়তো যুক্তি ঠিক আছে। হয়তো মাশরাফিকে এমনিতেই কিছুদিনের মধ্যেই অবসর নিতে হতো। ওয়ানডেতেও সে বেশিদিন নেই। সব মানলাম! সমস্যা শুধু মাশরাফির অবসর নেয়াতে না। সমস্যা প্রক্রিয়াটাতে।

    পাপন সাহেব বারবার বলছেন যে, মাশরাফি শুধু ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছে, কিন্তু রেগুলার খেলা খেলে যাবে! মাশরাফি কী তাচ্ছিল্যের হাসিটা হেসেছে দেখেছেন? সে যদি দলে খেলেই তাহলে ক্যাপ্টেন থাকতে সমস্যাটা কোথায়?

আপনি সিনিয়র খেলোয়াড়দের ডেকে মাশরাফিকে বলবেন, ‘তোমাকে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে হবে’ আর মাশরাফি সেই অপমান মেনে হজম করে শুধু ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে খেলে যাবে? মাশরাফি এতই সস্তা!

বিগার পিকচারটা আরও অনেক বড়! একটা কথা বলি, তামিম শেষ ম্যাচ খেলার জন্য ফিট ছিল। হালকা ব্যাথা ছিল। কিন্তু এর চেয়ে বেশি ব্যাথা নিয়েও সে অনেক খেলেছে। না খেলার মতো ব্যাথা ছিল না। তবু সে খেলেনি ভয়ে।

কারণ যদি খারাপ করে তাহলে বাদ পড়ে যাবে। তামিমের মধ্যে যদি এমন একটা ইনসিকিউরিটি আসে,তাহলে অন্যান্য খেলোয়ারদের জন্য সেটা কত শংকাজনক একটা বার্তা বুঝেন? হাতুরুসিংহে তামিম, মুশফিক, মাশরাফিকে বাদ দেয়ার জন্য লিস্ট পাঠাইসে। সাকিবের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।

    শুধু সাকিবের স্ট্রং পার্সোনালিটির কারণে টিকে আছে। ইন ফ্যাক্ট, শ্রীলঙ্কার সাথে দ্বিতীয় টেস্টে লিটন ফিট থাকলে তো সাকিবকে বাদ দেয়া একপ্রকার চূড়ান্তই ছিল বলেন অনেকে।

বোর্ড সভাপতি নিজ মুখেই সেই বাদ দেবার কথা বলেছিলেন। আল্লাহ বাঁচাইসে, ওই ম্যাচে সাকিব না থাকলে, সেঞ্চুরি না হলে আমরা টেস্ট জিতি না। (অবশ্য এতে সাকিবের বিকেলের সেই পাগলামি জাস্টিফাই হয় না!)

ভালোর জন্যই বলতেসি। দল নির্বাচনে আর কারও কোন কথাই নাই! হাথুরু লিস্ট পাঠায় পাপন অনুমোদন করে। কোন নির্বাচক, কারও কথাই থাকে না। তারা পুতুল মাত্র! নির্বাচক প্যানেল আসলে হাথুরুর কথামতোই চলে। পাপন তাঁকে বাঁচায়, ‘আমিই নিয়েছি বলে!’

    রিয়াদের ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়া মাশরাফি ঠেকিয়েছিল নিজের শক্ত ব্যক্তিত্বে! মাশরাফির মতো ক্যারিশম্যাটিক পার্সোনালিটি সাকিবের নেই। এতো ঝামেলার মধ্যেও মাশরাফি দলটাকে এক করে রাখছিলো।

এবং সেটা মাশরাফি বলেই পেরেছে, আর কেউ পারতো না। সাকিবের মধ্যে ওইটা নেই। সাকিব পারবে না। তখন যদি দল হারে, তখন আমরা আবার সাকিবকেই বলির পাঁঠা বানাবো।

একটা উদাহরণ দেই। টেস্টের আগে মুশফিক বলেছিলো যে, যদি দল চায় তাহলে কিপিং করবো না, যদি ম্যানেজম্যান্ট মনে করে যে দলে খেলারই দরকার নেই, তাহলে সেটাও ভালো! তখন আমরা মুশিকে খুব দোষ দিয়েছি। মুশি এতো অভিমানী কেন?

    অথচ ওকে দল থেকে বাদ দেবার জন্য হাতুরুসিংহে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা আমরা পরে জেনেছি। মুশি যে সেই সূত্রে বলেছে, ‘আমাকে দল থেকে বাদ দিলেও সমস্যা নেই।’

সেটা আমরা জানতাম না। আমরা মুশিকে দোষ দিয়েছি। একইভাবে আমরা সাকিবকেও দোষ দিব। সিডন্স যখন যাচ্ছিলেন, তখন সবাইকে সরি মেসেজ দিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ দলের কোন্দলের মূল নায়ক ছিলেন তিনি। আমরা দোষ দিয়েছিলাম সাকিব-তামিমকে!

সিডন্সকে সরি বলতে হয়েছিলো। হাতুরু এমন কিছু বলে পার পেয়ে যাবেন হয়তো। কিন্তু আমাদের সিস্টেমে কত বড় সমস্যা হচ্ছে সেটা প্রচণ্ড শংকায় ফেলছে!

    এক মাশরাফির অবসর ইস্যু না। হাতুরুর অতিরিক্ত ক্ষমতা চর্চা,একনায়কতন্ত্রের একটা উদাহরণ মাশরাফির অবসর। অ্যান্ড ট্রাস্ট মি মেনি মোর টু কাম! একটা ভালো কথা বলি, হাতুরুসিংহে ট্যাকটিকাল, টেকনিক্যাল কোচ হিসেবে খুবই ভালো কোচ। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা কোচ।

তাঁর চর্চাটা ট্যাকটিক্যাল, টেকনিক্যাল দিকে থাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেই দলের জন্য, সিস্টেমের জন্য ভালো। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে সিনিয়রদের অবসর নিতে বাধ্য করা পর্যন্ত সব কাজে তার পরিধি থাকলে ফ্রাংকেস্টাইন বড় হয়ে উঠবে। পৃথিবীর সব কাজেই লিমিটটা জানা থাকা ভালো!-খেলাধুলা
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব । এমটিনিউজ২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)
০৮ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে