মাহবুব মিলন: উইকেটে আছেন ক্রিস গেইল। বোলারদের আত্নারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট! তার উপর অন্য প্রান্তে যদি থাকেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, তবে কী হতে পারে সম্ভাব্য পরিণতি?
‘ক্যারিবীয় হ্যারিকেন’ আর ‘ব্ল্যাক ক্যাপস আতঙ্কের’ যুগলবন্দীর ফল তো ভয়ঙ্কর কিছুই হওয়ার কথা! ক্রিজে গেইল-ম্যককালামের জুটিবদ্ধ হওয়া মানেই যে বিপক্ষ দলের বোলারদের শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের শীতল নীলস্রোত বয়ে যাওয়া! কারণ, তখন যে বইতে পারে চার-ছক্কার বৃষ্টি!
যা দর্শকদের জন্য অবশ্যই স্বপ্নের মতো একটি ব্যাপার!
এতদিন ধরে বিপিএল প্রহর গুনছিল গেইল-ম্যাককালাম জুটির ঝড় দেখার! অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে! মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা মিলবে সেই বিরল দৃশ্য! রংপুরের শিরোপা-স্বপ্নের পালে বাড়তি ‘রং’ লাগাতে ওই দু’জন চলে এসেছেন। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা রাইডার্সের হয়ে ব্যাট বগলদাবা করে তারা ওপেনিংয়ে নামবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে।
গেইল প্রথম থেকেই বিপিএলের নিয়মিত অতিথি। তবে ম্যাককালাম বাংলাদেশের এই আসরে আগে কখনো খেলেন নি। টি-টোয়েন্টির সফলতম ও সবচেয়ে বিপজ্জনক এই দুই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে নিশ্চয় চমকপ্রদ কিছুই দেখা যাবে, এমন আশা করাই যায়! তারা নিজেরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে দর্শকদের বিনোদন যোগাতে চেস্টা করবেন!
তাদের জুটি এবারই প্রথম নয়!
যদিও গেইল-ম্যাককালামের জুড়িদারী দেখার প্রায় বিরল সুযোগ মিলতে যাচ্ছে রংপুর রাইডার্সের সৌজন্যে। তবে এর আগেও দেখা গেছে দু’জনের জুটি। ২০০৯ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছিলেন তারা। তখন অবশ্য বড় ধরনের কোনো সাফল্য পান নি এবং কলকাতাও ব্যর্থ হয়।
গেইল ৭ ম্যাচে করেছিলেন ২৮.৫০ গড়ে ১৭১ রান, সর্বোচ্চ ৪৪*। আর ম্যাককালামের ব্যাট থেকে ১৩ ম্যাচে এসেছিল ২৮৫ রান, যার গড় ২৩.৭৫, ফিফটি ২, সর্বোচ্চ ৮৪*।
২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অনুষ্ঠিত ‘প্রবাসী আইপিএলে’ শুধু একটি ম্যাচেই গেইলের সঙ্গী ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। অন্য ছয় ম্যাচে ওপেনিং করেছেন গেইল-ম্যাককালাম।
তাদের জুটির রান ছিল এরকম- ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে কেপটাউনে ১ (ম্যাককালাম ৩ বলে ১; গেইল ১২ বলে ১০)। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সঙ্গে ডারবানে ৫৭ (ম্যাককালাম ১৬ বলে ২১; গেইল ২৬ বলে ৪৪*)। রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে কেপটাউনে ২৫ (গেইল ৩৩ বলে ৪১; ম্যাককালাম ৯ বলে ৩)। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে পোর্ট এলিজাবেথে ৮ (ম্যাককালাম ৬ বলে ১; গেইল ১১ বলে ১২)। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর সঙ্গে ডারবানে ০ (ম্যাককালাম ১ বলে ০; গেইল ৩৭ বলে ৪০)। এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথে ২৩ (ম্যাককালাম ৩১ বলে ১৯; গেইল ১৭ বলে ১৭)।
পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা কলকাতা ওই ৬ ম্যাচের মধ্যে জিতেছিল শুধু একটা ম্যাচ এবং গেইল-ম্যাককালামের কাছ থেকে ওপেনিংয়ে পেয়েছিল ১৯.০০ গড়ে মোটে ১১৪ রান। রংপুর রাইডার্স নিশ্চয় আরও ভালো কিছুই পাবে!
মাশরাফির দূঃস্বপ্নের অধ্যায়!
এবার মাশরাফি বিন মর্তূজার নেতৃত্বেই রংপুরে খেলবেন গেইল ও ম্যাককালাম। মজার ব্যাপার হলো, ২০০৯ সালে আইপিএলে মাশরাফি খেলেছিলেন এই ম্যাককালামের নেতৃত্বেই! যদিও সেই অধ্যায়টা ম্যাশের জন্য হয়ে আছে দূঃস্বপ্নের অন্য নাম!
আইপিএল নিলামে বলিউডের দুই লাস্যময়ী নায়িকা জুহি চাওলা ও প্রীতি জিনতার টানাটানির পর মাশরাফির জায়গা হয়েছিল কলকাতায়। নাইট রাইডাসের হয়ে মাশরাফি মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন শুধু একটা ম্যাচেই! জোহানেসবার্গে ডেকান চার্জার্সের সঙ্গে ওই খেলায় মাশরাফির বোলিং ফিগার ছিল ভুলে যাওয়ার মতোই: ৪-০-৫৮-০!
শেষ ওভারে ডেকানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২১ রান। ম্যাককালাম আশা নিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন মাশরাফির হাতেই। নো বলে চার দিয়ে শুরু করা মাশরাফি দিয়ে বসেন ২৬ রান! তৃতীয় বলের পর শেষ বলেও মাশরাফিকে ছক্কা মেরেছিলেন রোহিত শর্মা! সেই ম্যাচের আগেই অবশ্য কলকাতা ছেড়ে গিয়েছিলেন গেইল।
বাংলাদেশে এসে ম্যাককালাম বেশ প্রশংসা করে বলেছেন, ক্রিকেট বিশ্বে সবাই মাশরাফিকে শ্রদ্ধা করে। গেইলও তার অধিনায়কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে, মুখের প্রশংসার চেয়ে তাদের ব্যাটের দিকেই বেশি তাকিয়ে আছেন মাশরাফি ও তার দল রংপুর।
টি-টোয়েন্টির দুই সেরা...
যে কোনো বিবেচনায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা দুই ব্যাটসম্যানের নাম ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম! পরিসংখ্যানই কথা বলছে তাদের হয়ে।
৩৬ বছর বয়সী ম্যাককালাম গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৭১ টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২১৪০ রান, যার গড় ৩৫.৬৬, স্ট্রাইকরেট ১৩৬.২১, সেঞ্চুরি ২, ফিফটি ১৩, সর্বোচ্চ ১২৩। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বাধিক রানের মালিক ম্যাককালাম সব মিলিয়ে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে এ পর্যন্ত ২৯৭ ম্যাচে ৩১.৪৬ গড়ে করেছেন ৮২৪৫ রান, ফিফটি ৪৩, সেঞ্চুরি ৭, সর্বোচ্চ ১৫৮* এবং স্ট্রাইকরেট ১৩৯.৬৫। মোট রানের হিসেবে তার ওপরে আছেন শুধু গেইল।
অন্যদিকে ৩৮ বছর বয়সী গেইল এখনো অনিয়মিতভাবে খেলছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৫২ ম্যাচের ৪৯ ইনিংসে করেছেন ১৫৭৭ রান, গড় ৩৫.০৪, সেঞ্চুরি ২টি, ফিফটি ১৩, সর্বোচ্চ ১১৭ এবং স্ট্রাইকরেট ১৪৫.৩৪। এক্ষেত্রে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তার অবস্থান ১২ নম্বরে। আর সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৩০৯ ম্যাচ, ৪০.৫০ গড়ে করেছেন সবার চেয়ে বেশি ১০৫৭১ রান, ফিফটি ৬৫, সেঞ্চুরি ১৮, সর্বোচ্চ ১৭৫* এবং স্ট্রাইকরেট ১৪৭.৯৭। বিপিএলে চলতি আসরের আগ পর্যন্ত হওয়া ৯টি সেঞ্চুরির ৩টিই দেখা মিলেছে গেইলের ব্যাটে।
অবশ্য ভুলে গেলে চলবে না- ক্রিকেট খেলাটা পরিসংখ্যানের পাতায় হয় না, হয় মাঠে! আজ থেকে নাহয় মাঠেই রান-উৎসবে মেতে উঠে চার-ছক্কার ঝড় তুলুন গেইল-ম্যাককালাম!
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস