শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:০৪:১৭

আমি অকৃতি অধম বলেও তো কম কিছু মোরে দাওনি

আমি অকৃতি অধম বলেও তো কম কিছু মোরে দাওনি

নাজমুন নাহার : মাঝে মাঝে এমন হয় যে হয়তো একটা গানই শুনতে থাকি এর সুর কথা আর নিবেদনের কারণে । যেমন এই রকম অনেকগুলো রবীন্দ্র সংগীত আছে। ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনেরও ধ্রুবতারা, চরনো ধরিতে দিও গো আমায় নিও না নিও না সরায়ে’ - ‘মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো’ ইত্যাদি ।

কিন্তু এরপরে বিশেষ একটা গান রজনীকান্ত সেন এর একটু স্পিরিচু্য়েল অসাধারণ তার সুর আর বাণী এবং আত্মউপলদ্ধি - ‘আমি অকৃতি অধম ব'লেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি’ এই যে আমি এত ছোট, এত ক্ষুদ্র, এতো অযোগ্য কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাকে দু হাত ভরে দিয়েছেন । আমার কিই বা যোগ্যতা আছে এত কিছু পাবার। প্রতি মূহুর্তেই ভাবি যে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার কত যে অকৃতজ্ঞতা, যে আমি প্রতিদিন তাঁকে ভুলে থাকি, তাঁর তাতে তো কোন অভিমান নেই , রাগ নেই - তিনি তাঁর নিয়মে আমাকে দিয়ে গেছেন।

‘যা দিয়েছ, তারে অযোগ্য ভাবিয়া/কেড়েও তা কিছু নাওনি।’ কিন্তু আমি তো এত সুখ এত সম্পদ মেধা এত ভালোবাসা পাবার যোগ্য নই। তিনি বুঝেছেন আমার অযোগ্যতা। কিন্তু তিনি আমাকে শুধুই দিয়েছেন। ভালোবেসে দিয়েছেন আমাকে উদার চিত্তে, দু অঞ্চল ভরে । আমি বার বার অন্যায় করেছি - যতটুকু তাকে স্মরন করার, করিনি তো - মনেও তো রাখিনি তাকে,সব সময় অস্থির হয়েছি -

‘আমি আরও চাই, আরো চাই’- তিনি দেখেন বোঝেন এবং অপেক্ষা করেন। এই পার্থিব সুখের জন্য কি করিনি আমি? তাকে ভুলে থেকেছি, উম্মাদের মত ছুটেছি। আমি আরো সম্পদ চাই, আমার আরো সুখ চাই, ভালোবাসা চাই - সব চাই আমার। এই চাওয়ায় কোন ক্লান্তি নেই। এই যে পার্থিব চাওয়া, এর জন্য আমার প্রতিটি পদে ভুল করা সকলি তিনি দেখেন। এবং ক্ষমা করে দেন। সন্তানের মা এর মতন। তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় তিনি আমাকে বেঁধে রাখেন। অপরাধ ক্ষমা করে দেন।

 

‘তব আশীষ কুসুম ধরি নাই শিরে,
পায়ে দলে গেছি, চাহি নাই ফিরে;
তবু দয়া করে কেবলি দিয়েছ,
প্রতিদান কিছু চাওনি।।’
 

সময় যখন ছিলো তাঁর আশির্বাদ এর দিকে ফিরেও আমি চাই নি। বার বার পেয়ে দলে গেছি। তবু তিনি তাঁর স্নেহচ্ছায়া ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেন নি। সন্তান যতই ভুলে করে মা তাঁর সন্তানকে ভুলে যান না। ভুলতে পারেন না। সন্তানের যা কিছু প্রিয় তাই তিনি তাঁর সন্তানের জন্য শত অসুবিধা সত্ত্বেও এনে দেন সন্তানের জন্য নিজের জীবন দিতে দ্বিধা করেন না। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিকে আরো বেশী ভালোবাসেন। বার বার ক্ষমা করে দেন। প্রতিদান তো কিছু চান নি।

 

‘আমি ছুটিয়া বেড়াই, জানিনা কি আশে,
সুধা পান করে মরি গো পিয়াসে;
তবু যাহা চাই সকলি পেয়েছি;
তুমি তো কিছুই পাওনি।।’
 

যতই তিনি আমাকে বাঁধতে চেয়েছেন আমাকে আমি বন্ধন কেটে বেরিয়ে যেতে চেয়েছি। জানি না কিসের আশায় আমি ছুটে বেড়াই উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরুতে, পৃথিবীর এই প্রান্ত থেকে সেই প্রান্তে। তবু তিনি রাগ করে আমাকে শাস্তি দেন নি ,অনেক অনেক অন্যায়ের পরেও আমাকে তাঁর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেন নি। যা পাওয়ার যোগ্য নই তিনি তাও আমাকে দিয়েছেন। এত এত অন্যায়ের পরেও আমাকে ক্ষমা করেছেন। আশার চাইতে আরো অনেক বেশী দিয়েছেন কিন্তু কেড়ে তো নেন নি।

এর শেষ প্যারা আরো অসাধারণ - বার বার মুগ্ধ হয়ে শুনি, পড়ি, অন্তর দিয়ে অনুভব করি প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি কথা - প্রতিটি লাইন -

 

আমায় রাখিতে চাও গো, বাঁধনে আঁটিয়া,
শতবার যাই বাঁধন কাটিয়া।

ভাবি ছেড়ে গেছ, ফিরে চেয়ে দেখি,
এক পা-ও ছেড়ে যাওনি।।’
 

ভাবি ছেড়ে গেছ, ফিরে চেয়ে দেখি, এক পা-ও ছেড়ে যাওনি।। তিনি আমায় বাঁধতে চেয়েছেন তাঁর সাথে সকল সময় ভালোবাসায়,আশায়, সুখে, দুঃখে - অথচ আমি একটা বল্গা হরিণের মতন ছুটছি তো ছুটছি, ধরে রাখতে পারেন না তিনি আমাকে, ক্ষমার অযোগ্য অন্যায় আমি করি এবং করেই যাই-এক সময় যখন বুঝতে পারি লজ্জিত হয়ে ভাবি এত এত যে অন্যায় আমি করলাম তার তো ক্ষমা নেই। তিনি আমাকে ছেড়ে গেছেন নিশ্চয় - কিন্তু দ্বিধা সংকোচ নিয়ে চেয়ে দেখি তিনি তাঁর সেই স্নেহচ্ছায়া থেকে এতটুকুও আমাকে বঞ্চিত করেন নি। আমি ছেড়ে গেছি তাকে বার বার, অথচ তিনি আমাকে এক পাও ছেড়ে যান নি - তাঁর সেই মমতা ভালোবাসা দিয়ে আমাকে আস্টেপৃষ্ঠে আটকে রেখেছেন - আহা কি কথা, কি সুর, কি নিবেদন, স্রষ্টার প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং ফিরে আসা এবং  প্রতি পদে পদে ভুল করা মানুষ তাঁর স্রষ্টাকে বুঝতে পারা - সেই অসাধারন কথা বানী সুর মূর্ছনায় আপ্লুত করে হৃদয় । অন্তর ছুয়ে যায় এই গান - আমার প্রিয় গান - আমি অকৃতি অধম বলেও তো কম কিছু করে মোরে দাও নি । লেখকঃ নাজমুন নাহার, কবি ও প্রফেসর
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে