নিশাত পারভেজ: রোকেয়া দিবস গেলো কয়েকদিন আগে। তিনি পার্টনার বা হাজবেন্ডকে স্বামী বলার বিরোধিতা করেছেন বহুকাল আগে। স্বামী নামের সাথে প্রভুত্ব জড়িত থাকায় বেগম রোকেয়া তো বটেই তার পরে বহু নারী আন্দোলনের সংগ্রামীরা এর বিপক্ষে কথা বলেছিলেন। রোকেয়ার কথা শত বছর পরেও মনে নাড়া দেয়। সম্প্রতি অপু বিশ্বাসের সাক্ষাৎকার পরে রোকেয়াকে আরও বেশি করে মনে পড়ে গেলো।
তালাকনামা পাওয়ার পর অপু বিশ্বাসের সাক্ষাৎকারগুলো পড়ছিলাম। প্রতি পরতে মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমার চির দু:খিনী শাবানা। ‘স্বামী যা-ই করুক সে তো স্বামীই।’ এরকম ডায়ালগের মতো অপুর কথা, ‘আমি স্বামী, সংসার দুটোই চাই। .. .. স্বামীর লজ্জা তো আমারই লজ্জা।’ আবার সন্তানের জন্য বলছেন মৃত্যুও মেনে নিতে পারেন।
বাংলা সিনেমা নিয়ে গবেষণা বা পড়াশোনা করতে গিয়ে একটা জিনিস নিয়ে দারুণ খটকা লাগে, যতই আমরা জেন্ডার, সমতা এগুলো আওড়াই, তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমায় সব সেই নব্বই দশকের শাবানা। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে, তবে পরিবর্তনটা খুবই কম।
অপু বিশ্বাস বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়িকা, অনেকের কাছে হতে পারেন আইডলও। যৌন নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের যে দীর্ঘদিনের আন্দোলন, সেই আন্দোলনের আগুনে অপু পানি ঢেলে দিতে যথেষ্ট। প্রথম সারির নায়িকা হয়েও তার বক্তব্য অনেকটা ‘ভাসতে থাকা কচুরিপানা’র মতো। নারীর ক্ষমতায়নের এই যুগে এসে কেউ যদি তালাককে জীবনের শেষ ধরে নেয়, তাকে কি বলা উচিত!
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি আইনের পথে যাবেন না। কারণ তিনি মামলাবাজ না। বাংলা সিনেমার নারী ভিলেনদের কথা মনে পড়ে গেলো: হাতাকাটা ব্লাউজ, ডিস্কোতে যাওয়া, পুরুষ মানুষকে মদ খাওয়ানো কিংবা মিথ্যা সাক্ষী দেয়া-এগুলো তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আইনি উপায়ে না গিয়ে তিনি তবে নায়িকা ‘শাবানা’ই থাকতে চাইছেন!
শাকিবের অভিযোগ ছিলো তিনি চাহিদামতো সমর্থন পাচ্ছে না স্ত্রীর কাছ থেকে। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, স্ত্রী কি সুপার মার্কেট, যা চাহিদা তা-ই পাবেন? এমনকি অভিযোগ করেছেন, তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। দেনমোহরের টাকা নিয়েও চলছে দুইপক্ষের বাগ-বিতণ্ডা। উভয়পক্ষ আবার সন্তানের ভালো চান। জন্মের পর থেকে যে সন্তান টানা-হেঁচড়ার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে, সে কি করে ভালো থাকবে?
দীর্ঘ বছরকাল বিয়ে করে সন্তানকে গোপন করার অপরাধেই শাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করার দরকার ছিলো অপুর। কিন্তু বাংলা সিনেমার ফিমেল প্রোটাগনিস্ট সতী সাবিত্রী নায়িকার মতো বারবার ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েছেন অপু, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতে চাই।’ এটাই কী তবে নারী ক্ষমতায়নের যুগ? এক অনলাইন গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অপু বলছেন, তালাক দিয়ে তিনি উদাহরণ হতে চান না। তবে কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেও তার উদাহরণ হতে ইচ্ছে করছে না। বাংলাদেশের প্রথম সারির দু’একটি গণমাধ্যম নাকি শাকিবের পক্ষ নিয়েছে। যদি তাই হয়, তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা আর বৈষম্য প্রতিরোধ কেবল কাগজ-কলম আর হ্যাশট্যাগেই থাকবে, বাস্তবে আর কোন কাজে আসবে না।
অপু বিশ্বাসতারকাদের ব্যক্তি জীবন সাধারণ মানুষের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ সবকিছু নিয়েই সবার আগ্রহ থাকে। এ কারণেই তারকাদের যেমন নিজের জীবন নিয়ে সাবধানী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তেমনি মিডিয়ারও উচিত নির্মোহভাবে এই ধরণের সংবাদ লেখা। সেনসেশনাল না করে সত্যটা জানতে পাঠক বা দর্শককে সাহায্য করা।
বেগম রোকেয়াকে আবার স্মরণ করি। নারী স্বাধীনতা তথা নারী শিক্ষার জন্য তিনি কঠোর সংগ্রাম করেছেন। তারই একজন উত্তরসূরী অপু বিশ্বাস-যে নিজে একজন তারকা, সে কিনা নিজের ভরণ পোষণ আর ভবিষ্যতের জন্য আরেক তারকার উপর নির্ভর করতে চান। নিজের গুণ-প্রতিভায় ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি! নাকি পুরুষচালিত চলচ্চিত্র সমাজে ডিভোর্সী তারকার জায়গা নেই সেটা ভেবেই বসে আছেন। নাহলে বহু বছর আগের নির্যাতিত বধূ চরিত্রের শাবানার মতো স্বামীর পথ চেয়ে থাকবেন কেন? এক অপু কিন্তু চেষ্টা করতে পারতেন চলচ্চিত্র গোষ্ঠীকে পরিবর্তনের। অপুর প্রতি রোকেয়ার ভাষায় অনুরোধ রেখে যাই, ‘জাগো গো ভগিনী’।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। এমটিনিউজ২৪.কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস