পাঠকই লেখক: বিন মুর্তজা। তা-ও আবার কোনো এক দল থেকে নয়। যখন যেমন দলই তিনি পান না কেন, কাপ পাইয়ে ছেড়েছেন! মাশরাফি জাদু জানেন। আর এই জাদু জানার কথা ধীরে ধীরে জেনে যাচ্ছে বিশ্ববাসীও। এমন জাদুকর দুটো নেই। তাই অদূর ভবিষ্যতে জাদুকর মাশরাফিকে নিয়ে নানান গল্পকথা, উপকথার চল হবে। দেখে নেওয়া যাক সেসব গল্পকথা আসলে কেমন হবে। লিখেছেন আহমেদ খান
আলিবাবা দাঁড়িয়ে আছে গুহার দরজায়। গুহার ভেতরে আছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আলিবাবা জানে, কী বললে গুহার মুখটা খুলে যাবে। সে বলল, ‘চিচিংফাঁক!’ বলেই হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকল। কিন্তু দরজা খুলল না। আলিবাবা আবার বলল, ‘চিচিংফাঁক!’ আলিবাবা হাতের বস্তাটস্তা গুছিয়ে নিল, দরজা খুললেই ভেতরের হীরা-জহরত বস্তায় ভরে নেবে।
কিন্তু না, এবারও দরজা খুলল না। মুশকিল! আলিবাবার জানামতে এটাই তো ছিল পাসওয়ার্ড! আলিবাবা বিচলিত হয়ে নানান শব্দ করল—আলুফাঁক, পটোলফাঁক, মাল্টাফাঁক! কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না। আলিবাবা বুঝল, পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়েছে। এখন উপায় কী? যা থাকে কপালে বলে আলিবাবা বলল, ‘মাশরাফি! মাশরাফি!’ আর সঙ্গে সঙ্গে গুহার ভারী দরজাটা খুলে গেল। ভেতরে জ্বলজ্বল করছে হীরা-জহরত। আলিবাবা হাসল মনে মনে। হ্যাককারীও তার মতোই মাশরাফির ভক্ত!
সুখী মানুষের জামা
লোকটার হলো হাড় মড়মড় রোগ। বিছানায় কোনোভাবেই শুতে পারে না। এ-কাত হলে পাঁজরের হাড় মড়মড় করে ওঠে, ও-কাত হলে পিঠের হাড় ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। ঘোড়ার মতো দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে ঘুমায়। ডাক্তার-কবিরাজ বহুত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত এক চিকিৎসক জানাল, এ রোগ সারবে তখনই যখন লোকটি এক সুখী মানুষের জামা পরবে! লোকটা বেরিয়ে পড়ল সুখী মানুষের খোঁজে। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না সুখী মানুষকে। অনেক ঘুরে ঘুরে যা-ও একজনকে পাওয়া গেল, দেখা গেল তার কোনো জামা-ই নেই। লোকটা বুঝতে পারল, তার রোগ সারানোর আর কোনো উপায় নেই। বিফল মনোরথে ফিরছে যখন লোকটা, তখনই তার মনে পড়ল মাশরাফির কথা। মাশরাফির চেয়ে সুখী আর কে আছে পৃথিবীতে! লোকটা মাশরাফির একটা জার্সি জোগাড় করে গায়ে পরে ফেলল। সেদিন থেকে লোকটার হাড় মড়মড় রোগ সেরে গেল। মাশরাফির জার্সি সে এখন শরীর থেকে খোলেই না।
আঙুর ফল টক নয়
এক শিয়াল মিরপুর থেকে ফিরছিল খেলা দেখে। মাশরাফির অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখে শিয়ালের এতই ভালো লেগেছিল যে সে তার শেষ পয়সাটা দিয়ে গ্যালারির সবাইকে আইসক্রিম খাইয়েছে। এখন নিজেরই খিদে পেয়েছে। খিদেখিদে পেট নিয়ে বাসার দিকে যেতে না যেতেই শিয়াল দেখল রাস্তার পাশে ভ্যানের ওপর থোকায় থোকায় আঙুর সাজিয়ে রাখা। দেখতে খুবই লোভনীয়। খেতে নিশ্চয়ই আরও ভালো হবে। শিয়ালের জিবে পানি চলে এল। কিন্তু এলে কী হবে, তার কাছে তো কোনো পয়সা নেই! শিয়াল ভাবল দোকানি যেহেতু আশপাশে নেই, তাহলে এই সুযোগ! এক থোকা আঙুর চুরি করে খেয়ে ফেললেই হয়। কিন্তু যেই চুরি করতে যাবে, অমনি তার মনে হলো সে তো মাশরাফির ভক্ত! মাশরাফির মতো একজনের ভক্ত হওয়ার পরও যদি সে চুরি করতে যায়, তাহলে সবচেয়ে বেশি অসম্মান হবে মাশরাফির! শিয়ালটা কিছুক্ষণ ভেবেটেবে বাসায় যাওয়ার পথ ধরল। যেতে যেতে বলল, ‘আঙুর ফল আসলে টক না, কিন্তু টক না হলেই সেগুলো চুরি করার কোনো কারণ নেই!’
আলাদিনের আশ্চর্য মাশরাফি
আলাদিন ছোটবেলাতেই রূপকথার বইয়ে পড়েছিল যে দুনিয়ায় এমন একটা আশ্চর্য প্রদীপ আছে, যার ভেতর থাকে এক দৈত্য। এই দৈত্য মহাশক্তিধর। তার কাছে যা চাওয়া যায় তা-ই পাওয়া যায়। সেই থেকে আলাদিন অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে সেই আশ্চর্য প্রদীপের খোঁজে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রদীপের সন্ধানে নাওয়া-খাওয়াও ছেড়েছে প্রায়। অন্য কিছু না করার কারণে পড়েছেও ভীষণ বিপদে। ঘরে চুলা জ্বলে না প্রায়ই। মা-বাবাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে তার। তবু কোনো কাজের প্রতি তার খেয়াল নেই। তার একটাই কথা, আমার লাগবে আশ্চর্য প্রদীপ! এ রকম একটা সময়ে আলাদিনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মাশরাফির। আলাদিনের সব কথা শুনে মাশরাফি বলল, ‘আসলে কি জানো আলাদিন, প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই আছে একটা আশ্চর্য প্রদীপ! সেই প্রদীপের নাম স্বপ্ন! আর সেই প্রদীপ ঘষা দিলেই বের হবে ইচ্ছা নামের এক মহাশক্তিধর দৈত্য! তাই তুমি সেই ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। বাইরের কোনো আশ্চর্য প্রদীপের তোমার কোনো দরকারই হবে না!’ সেই থেকে আলাদিন মন দিয়ে নিজের কাজ করে। এখন সে অনেক ভালো আছে। বিয়ের এই মৌসুমে সে বিয়েও করতে যাচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই সে মাশরাফিকে দাওয়াত দিতে যাবে!-রস আলো।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি