মানুষ স্বপ্নের চেয়েও বড়
আরিফুর রাজু : বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবী হারহামেশই পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তন হচ্ছে শিক্ষা-চিকিৎসা, জীবনযাত্রা, চলাফেরা থেকে শুরু করে মানুষের চিন্তা-ভাবনার। সে সাথে পরিবর্তন হয়েছে তাদের স্বপ্নেরও।
হয়তো হাজার বছর আগে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, সে কিভাবে বন-জঙ্গল ছেড়ে নিরাপদ স্থানে বসবাস করবে, কিভাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য আদান-প্রদান করবে। কিভাবে জীবন-জীবিকা ও অত্যাধুনিক সমাজ ব্যবস্থা গড়বে। সময়ের ব্যবধানের সেই স্বপ্নের বীজে এক সময় ডাল পালা গজিয়ে মানুষ সভ্য সমাজে বসবাস শুরু করলো। ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে শুরু করলো পরিবার কাকে বলে, বুঝতে শুরু করলো সামাজিকতা কি জিনিস, আরো বুঝতে শুরু করলো শিক্ষা-চিকিৎসা ও প্রযুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়াদি।
কালের প্ররিক্রমায় বর্তমান যুগে এসে মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে কিভাবে চাঁদের বুকে পা রাখার পর অন্য গ্রহে পা রাখবে। কিভাবে নেপচুন জয় করে ইউরেনাস জয় করবে। এ সবই স্বপ্ন মনে হলেও বাস্তবে ঘটছে। নতুন প্রাণের সন্ধানে মরিয়া অতি উৎসাহী বিজ্ঞানীরা। এভাবে চলছে উৎসুক মানুষের চ্যালেঞ্জিং অগ্রযাত্রা। আর এ সবই হলো তাদের চিন্তা ও স্বপ্নের ফসল ।
মেসিডিনের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার হয়তো স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন সে গোটা পৃথিবীটা চষে বেড়াবেন। পুরো পৃথিবীটা থাকবে তার হাতের মুঠোয়। তাই তো সে সকল বাঁধা অতিক্রম করে জয় করেছিল পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি রাজ্য। আর তা হলো আলেকজান্ডারের চিন্তা ও স্বপ্নের ফসল। যদিও সে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলুষিত করেছিল নিজেকে।
ইতিহাস বলে, আলেকজান্ডার ও তার সৈন্যদের বন্দুকের বায়োনেট ও তরবারির খোঁচায় রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি নগরী। তারপরও সে তার চিন্তা-ভাবনাকে জয় করতে সফল হয়েছিল।তার দিক থেকে সে অনেকাংশে সফল। এ ক্ষেত্রে সে অনেকাংশ নয় বলতে হবে পুরোপুরি সফল।
মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। কথাটি সবাই জানি ও মানি। আর তাই তো বারাক ওবামার মত একজন কৃষাঙ্গ বালক বনে যায় আমেরিকার মত ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। জাতগত, প্রথাগত ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে আজ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট। এক বাক্যে বলতে গেলে বিশ্বের সার্বিক উন্নয়নে প্রথম সারির সিদ্ধান্তদাতা সে। যে ছেলে ছোটবেলায় পায়নি পরিবারের অনেকেরই আদর স্নেহ ও ভালোবাসা। আজ সে লক্ষ্য কোটি আমেরিকানদের ভালোবাসায় সিক্ত। এটাই তো মানুষের প্রকৃত জয়।
ঘোড়া দৌঁড়ের সময় প্রতিযোগী ঘোড়াদের নাকি চোখের দু’পাশে কাপড় বেঁধে দেয়া হয়। যাতে সে দেখতে না পারে তার পাশের প্রতিযোগীকে।তার পাশের প্রতিযোগী কি তার চেয়ে পিছিয়ে না এগিয়ে সেটি বুঝতে না দেয়ার জন্যই মূলত এ কাজটি করে থাকেন ঘোড়ার মালিক। প্রতিযোগী ঘোড়াটির চেয়ে অন্য ঘোড়ারা পিছিয়ে থাকে তাহলে ওই ঘোড়ার মনে একটা অহংকার বোধ চলে আসবে, আর যদি ওই ঘোড়ার চাইতে অন্য ঘোড়ারা এগিয়ে যায় তাহলে সে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। আমাদের বাস্তব জীবনও তাই।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তো আমরা অনেক স্বপ্ন দেখি।আসলে তা কি স্বপ্ন? আর তা কি কেউ কোন দিন বাস্তবে পরিণত করতে পেরেছে? কখনই না। স্বপ্ন সেটাই যা মানুষ কল্পনা করে এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পিছনে তাকানোর মতো সময় তার নেই। তার নেই কোন ঘুম। সে থাকবে স্বপ্ন জয়ে বিভোর। যে কোনো মূল্যে চাই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
লেখক: সাংবাদিক ও অধ্যয়ণরত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিস ডিপার্টমেন্ট)। ই-মেইল:
[email protected]
১৯ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ