আমি এবং নিরুপমা..
পাঠকই লেখক ডেস্ক: সারাদিন অফিসের ব্যস্ততার শেষে বাসায় ফিরে ব্যল্কুনিতে কফির কাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিলয়। মনটা ভালো নেই তেমন। দুইদিন হল নিরুপমা বাপের বাড়ি গেছে।দুই বছরের সংসার জীবনে এটা নিরুপমার চতুর্থ বার বাবার বাড়ি যাওয়া। নিরুপমা বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। তবুও নিলয়কে ছেড়ে
থাকতে না পারায় বাবার বাড়ি খুব কম যায়। আর থাকতে পারে না বেশী দিন।
.
.
নিলয় এর পরিবার গ্রামে থাকে।বাবা, মা, ভাইয়া, ভাবি, আদরের ভাতিজা শুভ আর ছোট্ট বোন ইচ্ছে।নিরুপমা কে নিলয় এর পরিবার এর সবাই খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে নিরুপমার শ্বশুর-শ্বাশুরী। চাকুরীর জন্য
নিলয় আর নিরুপমা কে ঢাকাতে
থাকতে হয়।
.
.
নিলয় দুর মেঘের দিকে তাকিয়ে
নিরুপমা কেই ভাবছে। ভাবছে চার বছর
আগের কথা ...
.
নিলয় অনেক ভাল লেখক। নামকরা পেইজ সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাতে তার লেখা ছাপা হই। অনেক লেখার ভিড়ে একটি লিখায় নিরুপমা কমেন্ট করল। নিলয় ধন্যবাদ সুচক উত্তর দিল।নিরুপমা নিলয়ের সব গুলো লেখা পড়ল।খুব ভাল লাগল নিরুপমার। আর নিলয় এটা সব সময় খেয়াল করত যে তার সব গল্পতেই সবার আগে লাইক নিরুপমা নামের মেয়েটির পড়ত। যেন তার মনের কোন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যে নিলয়ের গল্পের প্রথম পাঠক সে হবে।
.
.
এভাবেই শুরু হতে থাকে নিরুপমা আর নিলয়ের মাঝে কোন এক অদৃশ্য অনুভবের সম্পর্কে যাত্রা।কিন্তু অদ্ভুত হলেও তারা তাদের কথা বলার শুরু থেকেই একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে থাকত। কেউ কারও কাছে নত হবে না। সব কথার সাথে যুক্তি সাথে সাথে ইগো নামের জিনিস টাও খুব ছিল। নিলয় কেমন জানি
এবনরমালিটি দেখাল নিরুপমাকে কে।
ভাত খাই রাত বারোটা ঘুমায় ভোর
চার টা।
.
.
নিরুপমার একটা ব্যক্তিগত নিয়ম ছিল। তার গোপন একটা আইডি থেকে যাদের সে বন্ধু বলে মনে করত তাদের পরীক্ষা করত আসল আর নকলের ভেদাভেদ বোঝার জন্য। আর ফলাফলও ছিল আশাতীত। সেই নিয়মের হাত ধরে নিলয়কেও সে পরীক্ষা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বারবার যে ঘুঘু ধান খায়না সেটা নিরুপমা সেদিন বুঝেছিল।নিলয় তার কারসাজি খুব সহজেই ধরে ফেলে।
.
.
নিলয় বুঝে গেছিল সে অন্য কেউ না। যার ফলে সেদিন রাতে দুজনের তুমুল ঝগড়া। সম্পর্ক যা হয়েছিল তাও শেষের দিকে কিন্তু সেদিন নিলয় বলেছিল আপনার জন্য একটা একশ বাক্যের তালিকা বানাছি আর নিরুপমা ধরেই নিয়েছিল খারাপ গুণের সমাহার হবে সেটা।
.
.
কিন্তু যেদিন সেই একশো বাক্যের তালিকা সামনে আসল সেদিন ছিল নিরুপমার জীবনের সবথেকে আর্শ্চযের দিন।
একশো ভাষায় একশো বার আমি তোমাকে ভালবাসি লেখা। যা মাঝে মাঝেই নিলয় একটা একটা করে নিরুপমা কে দিত।নিরুপমা জানতে চাইলে বলত কিছু না এমনি।
.
.
হঠাৎ একটা হাতের ছোঁয়া তে ঘোর কাটলো নিলয়ের।রুম এ
গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। কি যে করে
পাগলী টা।নিলয় দরজায় নক করল অনেকক্ষন। দরজা খুলে নিরুপমা তাকিয়ে
আছে নিলয়ের দিকে ।
.
.
:তোমার তো দুদিন পরে আসার কথা?? আজ এলে যে?
:তোমার ফোন কোথায়???
:ফোন..ফোন..মনে হয় অফিসের ব্যাগে থেকে গেছে।
:কত বার কল করেছি আর কত ম্যাসেজ দিয়েছি জানো তুমি।
:খেয়াল করি নি,, সরি নিরুপমা।
:তোমাকে এখন আমার ভাল লাগছে,, তুমি বাইরে যাও পরে আসবে।
বলেই আবার দরজা বন্ধ করে দিল নিরুপমা। নিলয় যতটা পেরেছে অবাক হয়েছে আর ভাবছে বাবার বাসায় মনে হয় রাগারাগি করে এসেছে।
.
.
তাও দু ঘন্টা পরে নিলয় বাসায় ফিরল। কলিংবেল দেবার আগেই নিরুপমা দরজা খুলে দিল। যতটা অবাক হয়ে সে গেছিল তার থেকে শতগুন বেশি অবাক হল সে এখন।
নিরুপমা, লাল রঙের একটা শাড়িতে তার সামনে। নিলয়ের কাছে সে সব সময় সুন্দরী হলেও আজ যেন স্বর্গ্বের অপ্সরী।
.
.
নিলয় কিছু বলতে যাবে তখনই নিলয়কে থামিয়ে তার হাতটা ধরে তাদের বেডরুমে নিয়ে গেল। ঘরটা অন্ধকার। ঠিক ঘরের মাঝে নিলয় দাড়িয়ে আর অালো জ্বলতেই তার চারপাশের দেওয়ালে অনেক সুন্দর সুন্দর বাচ্চাদের ছবি আর সব গুলোতে বড় বড় করে লেখা "নিলীমা"।
.
.
নিলয়ের বোঝার আর বাকি নেই কিছুই। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন গুলোর যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তার মেয়ে যাকে এতদিন কল্পনাতে ভালবাসার চাদরে আগলে রেখেছিল সে অাসছে।
.
আর নিরুপমা ঘরের কোণে মাথা নিচু করে আছে,,,, নিরুপমার ঠোটের কোণে হালকা লজ্জার হাসি,,, নিলয় কাছে আসতেই নিলয়ের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে নিল সে।নিলয়ের বুকটা তার পরম শান্তির জায়গা। নিরুপমাকে আজ অন্য রকম লাগছে নিলয়ের কাছে। এ যে তার মেয়ের মা। তার সুখের প্রদীপ।
.
.
নিলয় বুঝতে পারছে নিরুপমা কাদছে কিন্তু আজ তাকে কাদতে দিল নিলয় কারন এ কান্নার ভার যে বড় সুখের। নিরুপমাকে নিজের সর্বোচ্চ ভালাবাসার শক্তি দিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখল আর অপেক্ষায় থাকল নিলীমার জন্য
লেখিকাঃনিলীমার মা
(সম্পাদক দায়ী নয়)
৩০ আগস্ট, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস