চার বন্ধু মিলে বাসার ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ আদনান পাশের বাড়ির চারতালার বারান্দায় কিছু একটা দেখে হই হই করে উঠল। ওই দেখ দেখ, মজার দৃশ্য। আমার জানি আদনানের এদিকে ওদিকে তাকানোর স্বভাব আছে। তার দেখা মজার দৃশ্য কি হতে পারে তা আমাদের জানাই আছে।
কিন্তু তাকিয়ে দেখলাম যা ভেবেছিলাম তা না। কিন্তু দৃশ্যটা আসলেই মজার। এক মা তার ছেলেকে শাসন করছেন। ছেলেটা সম্ভবত সেভেন এইটে পড়ে। পরনে লুঙ্গি, খালি গা। মায়ের হাতে ঝাড়ু। সেই ঝাড়ু দিয়ে মা হরদম ছেলেকে পিটাচ্ছেন আর মুখে কিছু একটা বলছেন।
এত দূর থেকে ঠিক আন্দাজ করা যাচ্ছিল না উনি কি বলছেন। সম্ভবত “আর করবি? আর করবি এই কাজ?” টাইপের কিছু একটা বলছেন। ছেলেটা “আর করব না মা, আর করব না” বলে ক্রমাগত ঝাড়ুর বারি ঠেকাতে ব্যস্ত।
চার বন্ধুই নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। এই দৃশ্য আমাদের সবার কাছেই অতি পরিচিত। কতবার লাইফে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছি তার হিসেব নেই। চারজন মিলে গবেষণায় লেগে গেলাম ঠিক কি কারণ ছেলেটাকে তার মা মারছে।
আমি বললাম, “সম্ভবত অংক পরীক্ষায় খারাপ করছে”। এটা মনে হওয়ার কারন আমি নিজে যে অংকে ডাব্বা মেরে এসে মায়ের হাতে কত মার খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।
টাঙ্কিবাজ সুমন বলে উঠল, “মনে হয় পাশের বাসার মাইয়ার লগে টাঙ্কি মারতে গিয়া ধরা খাইছে”।
আমরা বলে উঠলাম। “হ! সবাইরে নিজের মতো মনে কর তো!” আমাদের সুমন আবার সেই বাল্যকাল থেকে প্রেম ভালবাসা করে আসতেছে!
আদনান দিল আজব থিওরি। “মনে হয় বিছানায় প্রস্রাব করছিল”।
শুনে একচোট হাসলাম সবাই!
রবিন আর কিছু বলল না। যার যার নিজের ফলস বেরিয়ে আসতেছে গবেষণা করতে গিয়ে!
ওদিকে মিনিট দুয়েক পিটিয়ে মা ক্লান্ত হয়ে চলে গেলেন। ছেলে একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গজগজ করছিল। সম্ভবত মায়ের উদ্দেশ্যে গাল ছুঁড়ছে। আমরা এবার জোরে চিল্লায় বললাম, “কি হইছে বাবু? আম্মা মারছে কেন তোমাকে?”
ছেলে আমাদের দেখে লজ্জা পেল। বুঝল তার বেদম প্রহারের সম্মুখীন হওয়ার দৃশ্য আমরা দেখে ফেলেছি। দ্রুত বারান্দা ছেঁড়ে পালাল।
আমরা কিছুক্ষন হাসাহাসি করলাম। যার যার নিজের মনে কিছুটা সময়ের জন্য সবাই চলে গেছি সেই শৈশব জীবনে। আহা! কতদিন মায়ের হাতে মার খাই না। ছোট বেলায় যা অপরাধ করতাম, তারচেয়ে অনেক বড় অপরাধও মাঝে মাঝে করে ফেলি। মা শুধু বকা দেয়, আগের মতো আর মারে না।
মায়ের হাতে মার খাওয়াও যে কত সুখ, তা আজ উপলব্ধি করলাম।...
লেখকঃ নাজিমউদ্দৌলা ।