সেদিন দুপুরে এক বিশ্ববদ্যালয়ের (নাম বলতে অনিচ্ছুক) সামনে দিয়ে যেতেই দেখলাম বিরাট জটলা আর ভ্যানের উপর অত্যাধুনিক পিএ সিস্টেমে উচ্চস্বরে বাজছে হালের কোনো হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় গান।
থমকে দাঁড়ালাম বাধ্য হয়েই। "বিশেষ এক দিবস" পালন করছে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরা। রংবেরঙের পোশাক আর হাসিহাসি অজস্র মুখ। প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট আলাদা আলাদা ব্যানার নিয়ে ৱ্যালি করছে।
বিস্ময়ে বিমূঢ় আমি! সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সচেতন শিক্ষার্থী-শিক্ষক নিজেদের আনন্দ উদযাপন করছে হিন্দি গান বাজিয়ে!
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি... আমাদের সময়েও হিন্দি গানের আগ্রাসন ছিলো, আমাদের অনেক সহপাঠী সেইসব গানের ভক্তও ছিলো কিন্তু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমরা কোনো অনুষ্ঠানে হিন্দি গান বাজিয়ে আনন্দ করি নি... করার কথা ভুলেও মনে আসে নি। আমাদের কাছে এটা মনে হতো রুচি বিবর্জিত একটি কাজ।
হায়রে বাংলাদেশ, হায়রে আত্মঘাতি বাঙালি! হিন্দি সিরিয়াল আর হিন্দি সিনেমার খোর বলে খামোখা স্বল্পশিক্ষিত গৃহবধুদের দোষ দেই। সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তো ঢুকে পড়েছে "শিলা কি জাওয়ানি!" এই জাওয়ানি যারা মেনে নিতে পারবে না তারা বুড়ো ধাম!
আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো এক তরুণ। এতোক্ষণ খেয়াল করি নি। চোখে চোখ পড়তেই তরুণ বলে উঠলো, যেনো সে আমার মনের কথা পড়ে ফেলেছে: "এরা পহেলা বৈশাখেও এমন কাজ করেছে!"
কেন জানি মুখ ফসকে বলে ফেললাম, "আপনি কি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন?" তরুণ কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো।
আমার বিশ্বাস সে ঐ প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। কিন্তু সংখ্যায় এতোটাই লঘু যে আমার মতো মর্মাহত দর্শক হওয়া ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়ালাম।
সত্য-সুন্দর-কল্যাণ... এগুলোকে ধারণ করার মতো মানুষের সংখ্যা ক্রমশ লঘুতে পরিণত হচ্ছে এ দেশে। সব ধরণের সংখ্যালঘুদের জন্যই খুব মায়া হলো... আমিও যে তাদের দলে!
লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন