সন্ধ্যায় লেকের ভিতরে ফুতপাতে বসেছিলাম। হঠাৎ সামনে দেখি একটা আট-নয় বছরের টোকাই মেয়ে ড্রিংকসের বোতল টোকাচ্ছে।
বিশ-পঁচিশটা বোতল এক করার পরে দেখলাম ২৫০ এমএলের খালি একটা বোতল বের করল সে। এরপর ওই বিশটা বোতল একটা একটা করে উপুড় করে এই বোতলের মুখে ধরে রাখল।
এমন করে সব বোতলের তলানি দিয়ে ওই বোতলটা এক চতুর্থাংশের মত ভরলো। হেভি খুশি হয়ে মেয়েটাকে দুই চুমুক খেতে দেখলাম। পরক্ষণেই কি মনে করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম আরেকটা তিন-চার বছর বয়সের বাচ্চাকে ডাকলো। মনে হলো বাচ্চাটা তার ভাই।
তারপর বাচ্চাটাকে নিজের হাতে বোতলের বাকিটুকু খাওয়াল। দুইজন দেখলাম মহাখুশি। দৃশ্যটা দেখে পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। যা হোক, আমি হাতে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট নিয়ে দুইজনকে ডাকলাম। দুইজনের মধ্যে একজন এগিয়ে আসল। নোটটা দিয়ে বললাম, 'ড্রিংকস খাইও।'
আমি ফোটোগ্রাফার না। তাই পরের দৃশ্যটা তাই হয়তো ক্যামেরাবন্দী করতে পারিনি। কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ টাকা পেয়ে কেউ এত খুশি হতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব না।
নাচতে নাচতে দেখলাম দুইজনে দুইটা ড্রিংকস কিনে খেতে খেতে চলে গেল। আমার এখনো দুইটা দৃশ্য চোখে ভাসছে। একটা হচ্ছে বোতলের তলানির খাবারটা ও ভাইয়ের সাথে কত তৃপ্তির সাথে খাচ্ছিল।
সেই সাথে চোখে ভাসছে মাত্র অল্প কিছু টাকা পেয়ে মানুষ কতটা খুশি হতে পারে যেখানে লাখ লাখ টাকার
উপরে শুয়ে মানুষ মনে করে যে, সে সুখে নেই। এই দৃশ্য দেখার পরে নিজের কাছে খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন জাগে, 'আসলে মানুষ কারা?'
উত্তরটা কি জানি না । তবে এ দৃশ্য দেখে সেই সব আমলাদের কথা ভাবি যারা বড় বড় চেয়ারে বসে লুটপাট করে, দুর্নীতি করে বিলাসিতার মধ্যে জীবনের তৃপ্তি খুঁজে জীবন শেষ করে। কিন্তু আফসোস তারা এখনো জানে না সবার সাথে সুখ ভাগ করার তৃপ্তি, অল্পে তুষ্ট হওয়ার আনন্দ।
আর তাই মনুষ্যত্বের খাতায় লেকের ওই নাম না জানা শিশুটা তাদের চেয়েও অনেক বড় আমলা, তাদের চেয়েও বহুগুণে সুখী।
লেখকঃ আসিফ জামান ।