স্থানঃ টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সময়ঃ আনুমানিক দুপুর ১২.৩০; ক ইউনিটের পরীক্ষা শেষ হবার বেশ কিছুক্ষণ পর।
চারিদিকে বিভিন্ন রকমের মানুষ।
বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। এই মাত্র পরীক্ষা শেষ হল। শিল্পপতির ছেলে থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালার ছেলের ভাগ্য ইতোমধ্যে নির্ধারণ হয়ে গেছে। হঠাৎ একই ফ্রেমে দুইটি চিত্র দেখে আঁতকে উঠতে হল। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা?
অতি সাধারণ প্রিন্টের জামার উপর কার্ডিগান পরিহিত একটি মেয়ে। দেখলেই বোঝা যায় দেশের অতি সাধারণ কিছু মেয়ের মধ্যে সেও একজন। হাতে একটা ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিকের ব্যাগে সে তার প্রবেশপত্র আর রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে বসে আছে।
সমানে পা দুলিয়ে যাচ্ছে। পা দোলানোর ভাবভঙ্গি দেখে যে কেউ বলতে পারবে মেয়েটি কারো জন্য অপেক্ষা করছে। চেহারায় সামান্য যত্নটুকুরও ছোঁয়া নেই। চুলে নেই দামী কোন কালারের ছাপ। বেশ খানিকটা নারিকেল তেলে চিপচিপে হয়ে আছে অযত্নে বড় হওয়া চুলগুলো।
পাশে একটা বড় ব্যাগ রাখা। যেখানে সম্ভবত তার একদিনের ঢাকা সফরের আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র। একটু পর বৃদ্ধমতন একজন লোক এলেন। নিঃসন্দেহে মেয়েটির বাবা। সম্ভবত রংপুরের ভাষায় মেয়েটিকে কিছু একটা বলতে লাগলেন।
একই দৃশ্যপট। অন্য একটি মেয়ে এই মেয়েটি আর তার বাবার পাশে বসে আছে। তার চুল নারিকেল তেলে জবজবে না। দামী কোন পার্লার থেকে স্ট্রেইট করানো। গায়ে সবুজ রঙের দামী শাড়ি। সাথে পাঞ্জাবী পরা একটি ছেলে।
পাশে বসে থাকা সাধারণ মেয়েটি আড়চোখে শাড়ি পরা মেয়েটিকে দেখে যাচ্ছে। ছেলেটি মেয়েটির শাড়ি একটু পরপর গায়ে হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে। শাড়ির কুঁচি ঠিক আছে কিনা সেটাও দেখে দিচ্ছে।
একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়ছে। গালে হাত দিয়ে আদর করছে। মেয়েটি একটা টিস্যু দিয়ে তার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে ছেলেটিকে দিল। ছেলেটি সেটা তার ঠোঁটে লাগালো। এ যেন এক নিষিদ্ধ আনন্দ!
ঠিক এই মুহূর্তে এই বাবার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে? সে কি তার এই সাধাসিধে মেয়েটিকে এই দৃশ্য দেখার পরেও ঢাকায় পড়ানোর মত সাহস পাবে? একটি বারও কি তার মনে শঙ্কা হবে না তার মেয়েটিকে নিয়ে?
সে কি একবারও ভাববে না তার নিরীহ মেয়েটি হয়তো এ শহরের পাল্লায় পড়ে এই মেয়েটির স্থান নেবে? এই বাবাটির দুশ্চিন্তা কে কমাবে? কে তাকে নিশ্চয়তা দেবে তার মেয়েকে নিরাপদ রাখার? সত্যিই কি আমরা আধুনিক হচ্ছি? নাকি মূল্যবোধগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলছি?
কার্টেসিঃ মেহেদি হাসান দিনার ।