রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:২৫:৪৪

পথশিশু-পথের শিশু

পথশিশু-পথের শিশু

পাঠকই লেখক ডেস্ক : আমি ভার্সিটি যাচ্ছিলাম।একটা বাচ্চা মেয়ে খুব বেশি
হলে বয়স হবে ৫বছর।
এগিয়ে এল আমার কাছে কিছু ফুল হাতে নিয়ে।বলল ভাইয়া
ফুল নিবেন? ফুল
ভাইয়া নেন একটু একটা ফুল নেন ৫টাকা।
.
.
ভাইয়া আপু কে দিবেন অনেক খুশি হবে। আমি
হাটতেছিলাম আর মেয়েটাও আমার পিছে পিছে
হাটতেছিল। মেয়েটাকে দেখে অনেক মায়া লাগলো।
আমি দাড়িয়ে মেয়েটাকে ডাকলাম। মেয়েটা কাছে
আসলো। মেয়েটাকে নিয়ে পাশের বেঞ্চিতে বসালাম.।
.
.
:নাম কি তোমার?
:আমার নাম বিন্দু কিন্তু এখন সবাই ফুলি বলেই ডাকে।
:ফুল গুলো বেচে কি কর?
:এগুলো আমার ফুল নয়তো..
:কার ফুল বেচ তাহলে?
:ফুলগুলো হল দোকানির, আমি যদি এগুলো সব বেচে দিতে
পারি তাহলে আমাকে দুপুরবেলা খেতে দিবে।
:ও রাতে কি খাবে তাহলে?
:খাই না তো।
:আচ্ছা তোমার মা-বাবা কোথায়?
:আমার তো মা-বাবা নেই।তবে আমার একটা মা ছিল...
.
.
:ছিল মানে? এখন কোথায়?
:আমার ওই মা তো আমাকে ছোট বেলায় রাস্তায় কুড়িয়ে
পেয়েছিল।তারপর আমাকে এতবড় করছে। কিন্তু মা এর তিন
ছেলেমেয়ে আছে মা একা কাজ করে সবাইকে নিয়ে
সংসারে কূল পাচ্ছিল না। তাই আমাকে কিছু কাপড় সহ
যেখানে পেয়েছিল সেখানে রেখে গেছে।
:তুমি সকালে কিছু খেয়েছ?
:না স্যার, আমি সুধু একবেলা খাই, আর ওই খানে একটা
টেবিলে রাতে ঘুমাই।
:লিখাপড়া করতে ইচ্ছে করে না?
:স্যার আমি মা এর কাছে যখন ছিলাম তখন আমার
ছবিওয়ালা বই ছিল আমি রোজ পড়তাম।
.
.
নিজের কান্না চেপে রাখতে পারছিলাম না।
মেয়েটাকে নিয়ে পাশের ১টা রেস্তোরা তে গেলাম।
তাকে বল্লাম যা খেতে ইচ্ছে করে বল।
মেয়েটা অনেক খুশি হয়েছে আজ ভাল কিছু খেতে পারবে
তাই। তারপর বিরিয়ানি মুরগি মাংস দিয়ে তাকে নিয়ে
খেতে বসলাম।
.
.
মেয়েটাকে পেট ভরিয়ে খাবার পর বল্লাম
আমার সাথে যাবে?
তখন বলল কোথায় স্যার
আমি বল্লাম আমাকে স্যার বলবে না ভাইয়া বলবে।
আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে?
আমার আম্মু আব্বু এর সাথে থাকবে লিখাপড়া করবে?
কি হতে চাও বড় হয়ে?
:ডাক্তার হতে চাই ভাইয়া।
:কেন ডাক্তার হতে চাও কেন?
:আমার ওই মা এর অনেক অসুখ ছিল। আমার মা এর কাছে
টাকা ছিল না তাই চিকিৎসা করাতে পারতো না। তাই
ডাক্তার হলে টাকা নিব না।
:আচ্ছা চল
:কোথায় ভাইয়া?
:মার্কেট এ, টোমার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনবো।
.
.
কেনাকাটা শেষ করে আমি ওকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে
বাস এ উঠলাম।
আমি নিলয়। মা-বাবার ছোট এবং সবার আদরের ছেলে।
আমি কিছু করলে কেউ বাধা দিবে না জানি। আমার আব্বু
আম্মু আমাকে সবকিছু করার ইচ্ছা দিছে।
.
.
সন্ধ্যা ৬টা
আমি আর বিন্দু আমাদের বাড়িতে গেলাম।
আম্মু আমাকে দেখে অনেক খুশি হল।
ভাইয়া ভাবি সবাই অবাক আমি হঠাত করে বাড়ি
যাওয়াতে।
আমি সবাইকে বিন্দু এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
আমি আম্মুকে সবকিছু খুলে বললাম
.
.
আম্মু আব্বু ভাইয়া ভাবি সবার অনেক ভাল লাগলো বিন্দু
কে।
আম্মু আমার উপর অনেক খুশি আমি সাহস করে বিন্দু কে
বাড়িতে নিয়ে গেছি তাই। আম্মু বিন্দু এর একটা নাম
রাখলেন "ইচ্ছে"। ওর যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে তাই এই
নাম টা দিলেন।
.
.
পরের দিন আব্বু আম্মু নিজে গিয়ে ইচ্ছে কে আমাদের
এলাকার ভাল স্কুলে ভর্তি করে দিলেন।
ইচ্ছে তো অনেক খুশি।
আমি ২দিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় ফিরে এলাম।
.
.
কিছু কথা: আজ ইচ্ছে একজন ছিল বলেই আমি তাকে আমার
বাড়িতে নিয়ে আমার বোনের মত করে আমার আব্বু আম্মুর
কাছে রাখতে পেরেছি। কিন্তু এরকম ইচ্ছে অনেকজন আছে।
আসেন আমরা এদের জন্য কিছু করি। আমাদের সুস্থ সমাজ
থেকে এদের এতটুকুই চাওয়া মাত্র।

লেখকঃনিলয় আহসান নিশো (বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল)

২০ জুলাই ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে