'অই পিচ্চি, ডাল নিয়া আয় যা' এই বলে সবজী দিয়ে ভাত মাখাতে থাকে রনি।
আলুভর্তার পার্ট শেষ হয়েছে। ডাল দিয়ে পুরো খাওয়াটা শেষ করবে। সাথে আছে বন্ধু জনি। ডাল চলে আসে। গোগ্রাসে গিলতে থাকে দুজন। এমন সময় বেজে ওঠে রনির ফোন।
- হ্যালো ডার্লিং।
- হাই। কি করছো সোনা?
- এইতো জনিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি।
- তাই? কি খাচ্ছো সোনা?
- এইতো স্ম্যাশড পটেটো উইথ রাইস ভেজিটেবল, লেন্টিল স্যুপ।
- ওয়াও। অনেক দামী খাবার।
- হ্যাঁ জানু। তুমি কি করছো?
- এইতো ভাত রাঁধছি। তুমি না বলেছো রান্না শিখতে তাই শিখছি।
- সো সুইট ডার্লিং। এখন রাখছি, পরে কথা হবে।
ফোন রাখার পর জনি বলে, দোস্ত এইগুলা যে করতাছস তা কি ঠিক হইতেছে?
- তোরে এতো ঠিক ভুল হিসাব করতে হবেনা। খাওয়া শেষ কর। বাপে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় পাঠাইছে ভালো কথা কিন্তু বিয়া করায়া দিছে। তাও আবার গ্রামের এক অশিক্ষিত মাইয়ার সাথে। এইডা কিছু অইলো? আমার কি পছন্দ অপছন্দ নাই?
- থাকবো না কেন? কিন্তু ভাবীতো সুন্দরী লক্ষ্মী এবং আচরণও মাশাল্লাহ। এসএসসি পাশ। তাইলে ঝামেলাটা কই?
রনি নিরুত্তর বসে থাকে। এসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে ওর ভালো লাগে না। জনিও আর কথা বাড়ায় না।
খাওয়া শেষে ভাঙা হোটেল ছেড়ে বের হতেই আবার রনির ফোন বেজে ওঠে।
- হ্যালো।
- আপনে খাইছেন?
- হ.. খামু না কেন? আল্লায় মুখ দিছে হাত দিছে তো খাওয়ার জন্যই।
- আপনে এমন কইরা কথা কন কেন?
- তো ক্যামনে কথা কমু? অখন ফোন রাখো। বিরক্ত করবা না।
খুট করে লাইনটা কেটে যায়। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে আমিনা। মানুষটাকে খুব ভালোবাসে ও। কিন্তু রনি ওকে পাত্তাও দেয়না । বাসর রাত থেকে আজ পর্যন্ত মিষ্টি করে দুটো কথা বলেনি ওর সাথে। ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলে ও। ভালোবাসায় অনেক কষ্ট। কষ্ট সইবার ক্ষমতা হয়তো সবাইকে সমান দেন না বিধাতা।
পার্কে বসে আছে রনি। পকেট বেশ ভারি। শপিংয়ে যাবে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে। এখনও আসছেনা দেখে ফোন দেয়। সুইচড অফ। অপেক্ষায় প্রচণ্ড বিরক্তি রনির।
হঠাৎ চেয়ে দেখে ওর গার্লফ্রেন্ড আরেকটা ছেলের হাত ধরে হাঁটছে। দুজন একটা গাছের নিচে বসে। ঘটনা বোঝার জন্য ওদের ফলো করে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ায় ও। প্রতিটা কথা ওর কানে আসে।
- জানো সেই গাধাটাকে আজ ফোন দিয়েছিলাম। ব্যাটা আলুভর্তা দিয়ে খাচ্ছিল আর আমাকে বলে স্ম্যাশড পটেটো দিয়ে খাচ্ছে। হা.. হা.. হা..। ওটাকে ঘুরিয়ে খুব মজা পাচ্ছি। গাঁইয়া খ্যাত একটা।
- হা.. হা.. হা..। যাই হোক। ওকে বেশি পাত্তা দিও না।
- কি যে বলো ডার্লিং। চলো এনগেজমেন্ট রিং কিনে দেবে।
রনি স্তব্ধ হয়ে কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দেখা হয়ে যায় ওর। বুঝতে পারে অনেক বড় ভুল করেছে সে এতোদিন। ভুল শুধরাতে ফোন দেয় আমিনাকে।
স্ক্রীণে রনির নাম্বারটা ভেসে উঠতেই আমিনা খুশিতে ডগমগ করে ওঠে। সত্যিই সে আজ অনেক খুশি। মানুষটা কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। আনন্দেও যে মানুষ কাঁদে তা সেদিনই টের পেল দুজন। ফোনের এই প্রান্তে থাকা অপেক্ষারত প্রিয়া আর ওই প্রান্তে থাকা দিকভ্রষ্ট নাবিক।
লেখক: অন্তু আহমেদ ।