পাঠকই লেখক ডেস্ক : “The Bangladeshi Tigers have knocked the England Lions out of the World Cup ” রুবেল হোসাইনের বলে এন্ডারসনের বিদায়ে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে জায়গা নিশ্চিত হওয়ায় এমনভাবেই বলেছিলেন ধারাভাষ্যকার।কোটি বাঙালি সেদিন হেসেছিলো রুবেলের কীর্তিতে, দেশের কীর্তিতে। রুবেল আরও একবার হয়েছিলেন ম্যাচ জয়ের নায়ক, কোটি বাঙালির সুপারহিরো।
১৯৯০ এর ১লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। তাসকিন আহমেদের আগমনের পূর্বে একাই দেখাতেন গতির খেলা। ২০০৯ এ একটি ওয়ার্ম আপ টি২০ তে তিনি বল ছুড়েছিলেন ১৪৯.৫ কি.মি./ঘন্টা। ২০১৫ বিশ্বকাপে গড়ে প্রায় ১৪৫ কি.মি./ঘন্টায় করেছেন বল। শ্রীলংকার বিপক্ষে করেছিলেন ১৪৮ কি.মি./ঘন্টা।
এই গতি তারকা শৈশব কাটিয়েছেন পাড়ার টেপড টেনিস বলে ক্রিকেট খেলে। প্রথম নজরে আসেন একটি ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে। ২০০৭ এ চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে এনসিএল এ ভালো করার পর ডাক পান অনূর্ধ্ব ১৯ দলে এবং তার পরপরই একাডেমি টিমে।
৯৪ তম ওডিআই প্লেয়ার হিসেবে ১৪ জানুয়ারি ২০০৯ এ শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ের সাথে আয়োজিত ট্রাই নেশন টুর্নামেন্টের ৩য় ম্যাচে দলে জায়গা পান এবং ৪ উইকেট নিয়ে দলের ফাইনালে উঠায় অবদান রাখেন। একই বছর ৬ জুন ভারতের বিপক্ষে টি২০ এবং ৯ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় তার। নিজের প্রথম টেস্টে ১ম ইনিংসে তুলে নেন ৩ উইকেট ও ব্যাটিং এ শাহাদাত হোসেনের সাথে ভালো একটি পার্টনারশিপ গড়েন ১০ম উইকেটে।
মাশরাফিকে আদর্শ মানা এই বোলার এর উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। ২৯ অক্টোবর, ২০১৩ এ ৩য় বাংলাদেশি হিসেবে করেন ওডিআই হ্যাটট্রিক। বিপক্ষ দল নিউজিল্যান্ড এবং ব্যাটসম্যানত্রয় ছিলেন কোরি এন্ডারসন, ম্যাককালাম এবং জিমি নিশাম। ওই ম্যাচে তিনি ২৬ রান খরচায় নেন ৬ উইকেট।
সমালোচিতও হতে হয়েছে কয়েকবার। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেসার হয়েও পাননি পর্যাপ্ত সুযোগ। ফলে হয়তো থেকেই গেছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালসহ আরো ২ – ১ টা ম্যাচে।সব থেকে বড় বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে ; হ্যাপি নামক এক দুঃস্বপ্নে। তবে সেখান থেকে ফিরেই সে দেশকে হ্যাপি করে নক আউটে নিতে রেখেছেন বড় অবদান।
২৬ টি আন্তর্জাতিক টেস্টে ২৬৫১ রানের বিপরীতে নিয়েছেন ৩৩ টি উইকেট এবং ২৭ টি টি২০ তে ২৮ টি উইকেট। টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার। টেস্ট ও টি২০ তে পরিসংখ্যান ততোটা সমৃদ্ধ না হলেও ব্যতিক্রম একদিনের ম্যাচে। ৮৮ টি একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে ৩৩.০৫ গড়ে ৫.৬৬ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১১২ টি উইকেট।নিজের প্রিয় এই ফরম্যাটেই আছে হ্যাটট্রিক, আছে ৫ উইকেট। শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। নিজের প্রিয় ফরম্যাটে প্রিয় রুবেলকে দেশবাসী দেখতে চায় আরও আগ্রাসী রূপে।
পরিসংখ্যান হয়তো খুব বেশি সমৃদ্ধ না।পরিসংখ্যান দেখে যে কেউই তাকে সাধারণ একজন বোলার বলে বসতেও পারেন। কিন্তু ক্রিকেটখোরেরা জানে রুবেল দলের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, কতটা দিয়েছেন দলকে। শুভ কামনা রইলো আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপের জন্য।
লেখক:
রবিউল ইসলাম সাকিব
ক্রিকেটখোর গ্রুপ