রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৬:২০

নারী মহাযোগ পৃথিবীর; কর্মে আর যাবতীয় মহাযজ্ঞে

নারী মহাযোগ পৃথিবীর; কর্মে আর যাবতীয় মহাযজ্ঞে

নাজমুন নাহার : নারী এবং পুরুষ । বিভাজন আমার পছন্দ নয় । আমার পছন্দ এভাবে ভাবতে যে আমরা গঠনগত দিক থেকে দু'রকম কিন্তু মূলত আমরা মানুষ । এখানে কেউ কারো চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ নই । জীবনের জন্য আমাদের দু পক্ষকেই সমান প্রয়োজনীয়।

 

আমার ছোট খালাকে দেখেছি তার স্বামী বিহীন জীবনে অপরিসীম দুঃখ কষ্টের মধ্যে জীবন পার করতে । আবার আমাদের পাশের ভদ্রলোককে দেখেছি স্ত্রী বিহীন কি অসহায় জীবন তার । ছেলেমেয়েদের লালন পালন , তাদের খাবার দাবার , তাদের পছন্দ অপছন্দ , তাদের পড়াশোনা সব একা সামলানো কি অসম্ভব কষ্টের ব্যপার । আবার সন্তানের কাছে মা খুব কাছের বলে তাদের আদর আহ্লাদের বিষয়গুলো মায়েরা খুব ভালো বোঝেন । ভালোবেসে পড়াশোনা করানো , জীবনের আদর্শ দেখিয়ে দেয়া এবং সর্বোপরি জীবনের প্রতিটি পলে জীবনকে শিখিয়ে দেয়া মা যতটা ভাল করতে পারেন এর চাইতে আর কে পারে এত ভালো ?

 

আবার এই যে একটা মেয়ে ঘরে বাইরে দুদিকেই কাজ করে তখনো সে সফল । চাকুরী থেকে এসে সে আবার সুন্দর করে সংসারের সব ধরণের কাজ করে , আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক রাখে , শ্বশুড় বাড়ি , নিজের বাড়ি সব দিকেই ভালো যোগাযোগ রাখা এবং অফিসের দায়িত্বপূর্ন কাজগুলো মেয়েরা বেশ দক্ষতার সাথেই করে এভাবে ঘর বাহির দুদিকেই ব্যালান্স করে।

 

আমরা বলতে পারি ব্যালান্সিং একটা ব্যপার এটা মেয়েদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ থাকে বলেই মেয়েরা ঘর বাহির দুটোকেই চমৎকার ভাবে সামলাতে জানে । আজকে মেয়েরা কাজ করছে অফিসে আদালতে সব জায়গায় ।

 

তুরীন আফরোজ একজন সফল আইনজীবি । যুদ্ধোপরাধী মামলা গুলোর বেশ কটি তিনি লড়েছেন , এই মামলাগুলোর স্থবির অবস্থা থেকে এগুলোকে গতি দিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন ।

 

আজকে মেয়েরা সবগুলো জবের ক্ষেত্রেও ভালো করছে । ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , বৈমানিক ,পুলিশ , ব্যাঙ্কার , সাংসদ এমনকি একটা দেশের নেতৃত্ব দেয়া কোন ক্ষেত্রে নেই সে !! লেখালেখির ক্ষেত্রেও নারীর অংশগ্রহণ সেও কম কিছু নয় । এক্ষেত্রে সেলিনা হোসেন , মহাশ্বেতা দেবী , রিজিয়া রহমান ,কবি রুবী রহমান , প্রতিভা বসু , সেকালের কামিনী রায় অনেকে আছেন ।

একজন মেয়ের পড়াশোনার দিক থেকে এগিয়ে আসতে হবে । যে টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে একজন ছেলে তার জীবনে সফল হতে পারে সেই টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে একজন নারীও সফল হতে পারে । এবং পারেই । যেমন গুগল সার্চ ইঞ্জিনে সমান ভাবে বেশ কয়জন মেয়ে ভালো প্রোগ্রামিং করছে । বেশ কজন মেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আছে যারা সফল ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে । সিভিল, আর্কিটেকচার সব গুলো টেকনোলজিতে মেয়েরা পড়ছে । এবং সফল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে ।  

 

সুখের বিষয় হলো মেয়েরা এগিয়ে আসছে পড়াশোনার ক্ষেত্রে , চাকুরীর ক্ষেত্রে , এবং উদ্যোক্তা হিসেবেও নারীরা এগিয়ে আসছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখনো গ্রামগুলোতে মেয়েরা পিছিয়ে আছে ।

 

পড়াশোনার ক্ষেত্রে, চাকুরীর ক্ষেত্রে মেয়েরা পড়াশোনা করছে নাম মাত্র । লক্ষ্য যেখানে শুধু বিয়ে শাদি হওয়া এবং যৌতুকের মাধ্যমে শ্বশুর বাড়িকে সুখী করার ব্যবস্থা করা । মেয়েরা পড়াশোনা যাই করুক এরপর বিয়ে এবং সংসার পালনই একমাত্র কর্ম । যদিও সংসার পালন ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম, কিন্তু একই সাথে পড়াশোনা , এবং কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসতে পারে ।

 

কারিগরি শিক্ষার জন্য একই সাথে সরকারী এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসছে । তা স্বত্তেও দেখা যায় সেখানে এখনো ১০ % মেয়েও এগিয়ে আসে নি । এবং প্রায় প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য ছাড় আছে এক সেমিস্টার বা দুই সেমিস্টার ফ্রী । এর পরিমাণ প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা । তবুও দেখা যায় অভিভাবক এগিয়ে আসছেন না মেয়েদের পড়াশোনার জন্য । অথচ কারিগরি শিক্ষা যেখানে কর্ম মুখী শিক্ষা সেক্ষেত্রে মেয়েরা যত এগিয়ে আসবে ততই সে উপকৃত হবে , তার পরিবার উপকৃত হবে ।

 

শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন ছেলের জন্য যতটা এগিয়ে আসা দরকার ততটাই মেয়ের জন্যো এগিয়ে আসা দরকার । দেখা যায় বিশেষ করে গ্রাম এবং মফস্বল গুলোতে এক একটা মেয়ে বিয়ে দেয়ার পেছনে লক্ষ টাকা খরচ করেন । এই টাকা তার পড়াশোনার জন্য খরচ করলে মেয়েটা প্রতিষ্ঠিত হলে তার মা বাবার জন্য সুখকর । এবং পড়াশোনার সাথে যদি তার একটা জব থাকে তবে তার একই সাথে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে । সে ক্ষেত্রে সে প্রতিবাদী হতে শিখবে , নিজেকে রক্ষা করতে শিখবে এবং একই সাথে সে জানবে কি করে মা বাবাকেও সাহায্য করা যায় ।

 

একটা ছেলেকে যে দায়িত্ব এবং বোধ দিয়ে বড় করেন সেই একই দায়িত্ববোধ স্বপ্ন দিয়ে একটা মেয়েকেও বড় করা হোক । ছেলে মেয়ে যেই হোক তাকে সমান স্নেহ , ভালোবাসা , স্বপ্ন , মনুষ্যত্ববোধ দিয়ে বড় করা হলে সেই ছেলেমেয়েই অভিভাবককে কতভাবে যে সাহায্য করতে পারবে সে কল্পনাও করতে পারবেন না । অনেকগুলো বখাটে ছেলে মেয়ে হবার চাইতে একটা আদর্শ ছেলে বা মেয়ে হোক । সেই আদর্শ ছেলে মেয়ে হবার জন্য তাকে তৈরী করতে হবে ছোটবেলা থেকেই । এবং সেই সন্তান মানসিক শান্তি ,আর্থিক স্বাচ্ছন্দ , সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে। লেখক : নাজমুন নাহার, কবি ও প্রফেসর

৩০জুন, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে