পাঠকই লেখক ডেস্ক: - ব্রেকআপ !!! (চিৎকার করে বলে উঠলো দিয়া)
- মানে?
- মানে বুঝো না? মানে হলো তোমার আর আমার রিলেশনের এখানেই শেষ! বাই বাই!
- আচ্ছা ।
- আচ্ছা মানে? তুমি কিছু বলবা না?
- 'আচ্ছা আজকে কি আমরা শোক পালন করবো? না মানে যেমন ধরো... প্রতিদিন আমরা আইসক্রিম, ঝালমুড়ি, ফুচকা খাই... আজকে বরং তা না করে সিগারেট খাই!' বললো আকাশ ।
- তুমি আমাকে সিগারেট খাওয়াবা !!!
- না মানে... কষ্ট ভুলতে তো মানুষ তা-ই করে!
- তোমার কি মনে হয় আমার কষ্ট লাগবে? মোটেও না!
- ও...
রাগে হাতের ব্যাগটা আছাড় মেরে দিয়া বললো, 'তুমি একটা ছাগল আর একটা ছাগলের সাথে কোনো মানুষের সম্পর্ক থাকতে পারে না!'
কথাটা বলেই বাসার দিকে হাঁটতে লাগলো দিয়া। দিয়ার ফেলে যাওয়া ব্যাগটা হাতে নিলো আকাশ। ভেতরে একটা মোবাইল আর কিছু টাকা আছে। আকাশ একবার ভাবলো দিয়াকে ব্যাগের জন্য ডাক দিবে। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তাটা বাদ দিল। ব্যাগটা হাতে নিয়েই হাঁটা শুরু করলো আকাশ ।
দুটো বাচ্চা মেয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দড়িলাফ খেলছিল। ওর হাতে মেয়েদের ব্যাগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়ে দুটো। ওদের হাসি দেখে আকাশও হেসে দেয়। তবে এবার আর মেয়ে দুটো হাসে না। হয়তো ওকে পাগল ভাবছে!
- হ্যালো, তুমি আমার মোবাইলসহ ব্যাগ চুরি করলা কেন?
-না, না আমি তা করিনি! তুমিই তো ব্যাগটা ফেলে আসলে।
- একদম মুখের ওপর কথা বলবা না! কালকে আমার ব্যাগ নিয়ে সোজা ক্যাম্পাসে চলে আসবা। বাই!
ফোনটা কেটে দিল দিয়া! কাঁদছে ও..! দুটো কারণে ব্যাগটা ও ইচ্ছে করেই ফেলে এসেছে! প্রথমত, এই ব্যাগের অজুহাতে আবার আকাশের সাথে দেখা করা যাবে!
আর দ্বিতীয়ত, আজই আকাশের মেসের ভাড়া দেয়ার শেষ দিন। তাই ব্যাগের টাকাটা রেখে এসেছে যাতে বাধ্য হয়ে ওর টাকাটা দিয়ে মেসের ভাড়াটা মিটাতে পারে আকাশ! এমনিতে সরাসরি দিলে আকাশ তা কোনোদিনই নিতো না! তাই বাধ্য হয়েই ঝগড়াটা সৃষ্টি করছিল ও!
আধঘণ্টা ধরে বসে আছে দিয়া। কিন্তু আকাশের আসার কোনো নাম নেই! যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে এসে দাঁড়ায় আকাশ!
- সরি! এই নাও তোমার ব্যাগ! আর একটা কথা বলবো?
- কি?
- আমি তোমার টাকাগুলো খরচ করে ফেলেছি!
দিয়ার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো! কিন্তু মুখে বললো, 'ফাও কথা বলবা না! ব্যাগে কোনো টাকা ছিল না!'
- না, না, সত্যি ছিল! তোমার ওই টাকা দিয়েই তো জব্বার চাচাকে একটা কম্বল কিনে দিয়েছি! সরি! প্লিজ কিছু মনে করো না! আসলে হাতে কোনো টাকা ছিল না তাই! তবে এ মাসের টিউশিনির টাকাটা পেলেই দিয়ে দিবো! তুমি তো চাচার কথা সবই জানো! তাই আর কি... সরি!
ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রেখেছে দিয়া! যে মানুষটা নিজেই ঠিকমত চলতে পারে না, যার নিজেরই একটা ভালো শীতের জামা নেই, যে নিজেই সারা বছর কষ্ট করে কাটায়, সেই মানুষটাই কিনা আরেকজনকে সাহায্য করে তার জন্য আমার কাছে মাফ চাইছে!
কোনোমতে নিজেকে সামলে উঠে দিয়া বললো, 'তোমাকে মেস থেকে বের করে দেয়নি?'
- না! আরো দুই দিন সময় দিয়েছে ।
- বের করে দিলে খুশি হতাম!
- আচ্ছা আজ থেকে কি তোমার ফোন রিসিভ করবো? না মানে তুমিই তো কাল বললে...
- হ্যাঁ, আজকে থেকে তুমি আর আমার ফোন রিসিভ করবা না! কিন্তু ফোন ঠিকই দিবা! না দিলে চড় দিয়ে আক্কেল দাঁতসহ সবগুলো দাঁত ফালায়া দিবো!' এই বলেই এবার আর কান্না আটকে রাখতে পারলো না মেয়েটা!
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আকাশ! আর দশটা সাধারণ গল্পের ছেলেগুলোর মতো আকাশও বুঝতে পারছে না মেয়েটা কেন কাঁদছে! শুধু মনে মনে বলছে- 'আবার কি করলাম!'
লেখক: জিওর্জিনা পুর্কার ।