রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪১:২৪

‘আমার ধার্মিক স্বামী’

‘আমার ধার্মিক স্বামী’

পাঠকই লেখক ডেস্ক :মানুষের জীবনে কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা কাউকে বলা যায় না। আবার জীবনে চলার পথে নিজের ইচ্ছে না থাকলেও এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা প্রথম দিকে খারাপ মনে হলেও পরে আর্শিবাদ মনে হয়।  নিজের জীবনের এই রূপ একটি গল্প পাঠিয়েছেন এক বোন। শুনুন তাহলে-

কখন ভাবনি আমাকে কখনও হুজুর টাইপের কাউকে বিয়ে করতে হবে।  ইচ্ছা না থাকা সত্তেও পরিবারের চাপে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়।  আমি মর্ডান মেয়ে আর বিয়ে করব কিনা হুজুরকে? ভাবতেই কেমন যেন সংকোচ বোধ হচ্ছিল। এমনিতেই বিয়ে করতে ইচ্ছা করছিল না তাতে আবার এক বান্ধবি এসে বলল, কিরে রিয়া তুই হুজুরকে বিয়ে করলি আর পাত্র খুঁজে পাসনি। আর এক ভাবি এসে কানে ফিসফিস করে বলল, তোর বরের তো সারা মুখেই দাড়ি কিস করবি কোথায়? খুব বিরক্ত লাগছিল। ইচ্ছা করছিল এখুনি আসন থেকে উঠে যাই। হটাৎ পায়ের ঠক ঠক আওয়াজে ঘোমটার ফাঁক দিয়ে আর চোখে দেখলাম একজন লোক আসছে। তার বেশভুষা আর গঠন দেখে বুঝলাম উনি আমার স্বামী। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উঠে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম। থাক থাক বলে আমার বাহুতে হাত দিয়ে তুলে বিছানায় বসাল আর বলল, তোমার নাম কী? খুব ইচ্ছা করছিল বলতে আমার নাম না জেনেই আমাকে বিয়ে করেছেন?

বললাম, রিয়া- সুন্দর নাম কিন্তু তুমি কি জানো রিয়া নামের অর্থ কি ? মেজাজটা খারাপ হওয়ার উপক্রম বললাম, না -শোনো, আরবিতে রিয়া শব্দের অর্থ অহংকার। আর মানুষকে যে জিনিসগুলা ধ্বংস করে দেয় তার মধ্যে রিয়া অন্যতম। তাই আজ থেকে আমি তোমাকে মিম বলে ডাকব। নাহ আর মেজাজটা ঠিক রাখতে পারছি না। বাসর রাতে আমার স্বামী আমাকে অর্থ শেখাচ্ছে কারও মাথা ঠিক থাকার কথা? একটু বিরক্ত সুরে বললাম, আপনার যেটা ভাল লাগে সেটাই ডাকিয়েন। বুঝতে পারছে মনে হয় বলল তোমার মনে হয় খারাপ লাগছে তুমি ঘুমিয়ে পড়। ‘আমার ধার্মিক স্বামী’ (২) ঘুমটা ভাঙল গুন গুন আওয়াজে। কান খাড়া করে আওয়াজটা শুনতে চেষ্টা করলাম, বুঝলাম কেউ কোরান পড়ছে। তাকিয়ে দেখলাম আমার স্বামী। তার সুমধুর কণ্ঠে কোরান তেলাওয়াত শুনতে ভালই লাগছিল। তাই একটু উঠে বসলাম।

আমাকে উঠে বসতে দেখে তেলাওয়াত বন্ধ করে বলল, আসসালামু আলাইকুল। শুভ সকাল, ঘুমটা কেমন হলে? সালাম নিয়ে বললাম জি ভাল হয়েছে। এভাবেই কাটছিল দিনগুলা। এর মাঝে উনি আমাকে নানাভাবে নামাজ পড়ার কথা বলত। এত ধৈর্য আর এত ভাল করে বুঝিয়ে বলত যে আমি নিজেই খুব অবাক হয়ে যেতাম। তার সব চেষ্টাকে সফল করে একদিন নামাজ পড়া শুরু করলাম। দেখলাম তার মুখটা খুশিতে ভরে উটেছে। তার হাসি-মাখা মুখটা দেখতে ভালই লাগত। নামাজ ৫ ওয়াক্ত হলেও আমি ৪ ওয়াক্ত পড়তাম। ফজরের নামাজ পড়তাম না। খুব আলসেমি লাগত। উনি আমাকে ডাকতেন শুনেও জাগতাম না। এটা উনি বুঝতে পেরেছিল যে আমি ইচ্ছা করেই উঠি না।

তাই আমাকে কাছে ডেকে পাশে বসিয়ে বলল, দেখো তুমি এভাবে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে ঘুমাও তাহলে দিনের ৩ ভাগের ১ ভাগ তুমি ঘুমিয়ে কাটাচ্ছ। যদি তোমার আয়ুকাল ৬০ বছর হয় তাহলে তুমি ৩ ভাগের এক ভাগ মানে ২০ বছর ঘুমিয়ে কাটাচ্ছ। আল্লাহ তো তোমাকে এই দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে কাটাতে পৃথিবীতে পাঠাননি। তারপর অনেকগুলা ভাল ভাল কথা আর কোরানের বাণী শুনালেন। এত ভাল কথা শুনিয়েছিলেন যে শুনে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ১ ওয়াক্ত নামাজও আমি কাজা করিনি। সর্বদাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি। আজ আমি অনুতপ্ত নয় গর্ববোধ করি আমার স্বামীর জন্য। সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী।
আলহামদুলল্লিাহ!

লিখেছেন বোন "ব্যাথার দান"
১১ মে,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/আরএম

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে