রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫৭:২৭

আমার ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে

পাঠকই লেখক ডেস্ক: মা-বাবা কে ও জানে না।জন্মের পরে এক আফার কাছে বড়ো হয়েছে।বয়স কত হবে?এই ৭-৮ হবে আর কি।

নারায়ণগঞ্জ রেলষ্টেশনে বসা।ঢাকা থেকে ট্রেন নারায়ণগঞ্জ প্লাটফর্মে ভিরলো। হঠাৎ করেই এক ছোট ৭-৮ বছরের ছেলে ট্রেন থেকে নামলো।অত:পর
ছেলেটি:আপনে কি এই ট্রেনে আইছেন?
আমি:না। এখন এই ট্রেনে যাবো।কিন্তুুকেনো?
ছেলেটি:না...আওয়ারসম এক আমনের মতন দ্যাকতে এক ভাই আমারে দশটা ট্যাকা দিছিলো।
আমি:তো কি হইছে?
ছেলিটি:ট্যাকাডা না পকেটতে হারাই গেছে।

আমি বুঝলাম যে,ছেলেটি আমার কাছে কিছু টাকা চাইতে এসেছে।আর ছেলেটি দেখলে মনে হয় সারাদিনে কিছুই খায় নি।ছেলেটির পরনে ছিলো একটি হ্যাফ প্যান্ট আর ছেরা ময়লা গ্যানজি।কাধে ঝুলানো ছিলো বোতল কিংবা ভাঙ্গাচূরা ভর্তি ময়লা ব্যাগ।

আমি:এদিকে আস?তোর নাম কি?
ছেলেটি:রাজন।
আমি:থাকিস কই?
ছেলেটি:কমলাপুর।যেনে ট্রেন থামে হেনে থাকি।
আমি:পরাশুনা কিছু করিস?
ছেলেটি :করি...ওই বিদেশি ছারেরা আরো অনেক আফারা ভাইয়েরা ধইরা ধইরা নিয়া পরায়।
আমি:কি কোনো পূর্নবাসন কেন্দ্রে?
ছেলেটি :জানিনা।
আমি:পরাশুনা কেমন লাগে?নিজের নাম লিখতে পারিস?
ছেলিটি :পরাহুনা খারাপ লাগবো কেন...আর মাত্র আমি কয়দিন ধইরা যাইতাছি।এহোনো নাম লিখা হিকি নাই।

আরো অনেক কথা হলো ওর সাথে।শনলাম ও নাকি জন্মের পর থেকেই ওর মা-বাবাকে দেখে নাই।কমলাপুর বস্তির এক আফার কাছেই বড়ো হয়েছে। তবে ওর আফার নাম ও বলতে পারলো না।কেননা ওই আফাকে ও আজ পর্যন্তো নামই জিগ্গেস করে নাই।আর উল্টো আমাকে বললো,
ছেলেটি:বড় মানসের কি নাম জিগাইতে ওয়?...বর মানসের নাম নিলে পাপ হয়।

অনেক আলাপ চারিতার পরে আমাকে জিগ্গেস করলো,
ছেলেটি:আপনে কি করেন?
আমি :অনলাইন নিউজে কাজ করি।
অনলাইন নিউজ এর মানি বুঝলো কি না  জানি না।অতঃপর ওর হাতে বিশটা টাকা দিলাম।ও খুশিই হলো টাকা বিশটা হাতে পেয়ে।
আমাদের কাছে হয়তোবা এই দশ-বিশ টাকা কিছুই না।তবে ওদের কাছে এ যেনো অমুল্য সম্পদ।
চেয়েছিলাম ওর একটি ছবি তুলবো কিন্তু ছবি তুলতে গিয়েই শুরু হলো তার অনিহা।দরকার হলে সে সেই বিশ টাকা ফিরিয়ে দেবে তবু ছবি তুলবে না।কারন জানতে গেলে সে বল্লো,তাকে নাকি কে বলছে ছবি তুলে নাকি এগুলো বিদেশে পাঠানো আর এই ছবি বিদেশিদের পছন্দ হলে গুন্ডা দিয়ে নাকি তাদের তুলে বিদেশে বিক্রি করে দেয়।
কথাটা কতটা সত্যি আমি জানি না। তবে এই কতটুকু সময় ওর সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো তবে মায়াও লাগলো কেননা এইবয়সেই তার কতো কষ্ট করে জীবন পরিচালনা করতে হয়।তবে কি,এই রাজনের মতো হাজারো পথশিশু রয়েছে আমাদের দেশে।যারা দিনের পর দিন সংগ্রাম করে কনোরকমে দিন কাটাচ্ছে।
আরো কিছুখ্যন থাকতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারলাম না।কেননা আমার ট্রেন ছারার সময় হয়ে গেছে।চলে আসলাম আবারআমার গন্তব্যে।
লেখক: আবু সায়েম
১৮ জুন ২০১৫/এমটিনিউজ২৪//এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে