পাঠকই লেখক ডেস্ক : জাহিদ, সময়টা বলতে পারবে?
হুম। কেন পারবো না?
বল তাহলে।
এখন সময় সন্ধ্যা সাতটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট।
জাহিদ, তুমি ভালো করেই জানো আমি এই সময়টা তোমার কাছে জানতে চাইনি। চব্বিশ ঘন্টার হিসেব রাখার জন্য দেয়াল ঘড়িটাই যথেষ্ট। টিক টিক করে প্রতি সেকেন্ডের হিসেব দিয়ে যায় সে।
ও! আমি ভাবলাম ব্যাটারী বোধ হয় গেছে! রাগ লাগে রিয়ার। বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বলে,
কোথায় তুমি এখন?
রিক্সায়।
রিক্সায় কি করো তুমি? ইদানিং সন্ধ্যার পর ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে আবার।
আরে চিন্তা করো না। কিছু হবে না। আমি হলাম ম্যান অফ স্টিল! হে হে হে
বাইরে কি করো তুমি?
তেমন কিছু না। রিক্সা করে ঘুরি। সন্ধ্যার পর এই শহরটা সোডিয়ামের আলোয় বদলে যায় রিয়া! দেখলেই মুগ্ধ হতে হয়। লোভ সামলাতে পারলাম না। বেরিয়ে পড়লাম তাই।
রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলে, তার মানে তুমি অনেক সময় ধরেই বাইরে। ঠান্ডা না লাগিয়ে আর ফিরছো না।
ওপাশে জাহিদের নীরবতা। এসব ক্ষেত্রে নীরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। বেশিক্ষন নীরব থাকাটা আবার বোকার কাজ। সময়ের কথা কি যেন বলছিলে রিয়া?
হুম। কিন্তু এখন ছেলেমানুষী মনে হচ্ছে। বাদ দাও। কাল ফিরছো তো?
কি হয়েছে তোমার রিয়া?
-ধুর, কিছু না। বাদ দাও তো। ফিরছো তো কাল?
আচ্ছা, বাদ দিলাম। হুম, কাল ফিরছি।
লোভ সামলে হোটেলে ফিরে যাও দ্রুত।
আচ্ছা।
ফোন রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় রিয়া। তাদের এই বারান্দাটাতে দাঁড়ালে সামনের রাস্তাটা দেখা যায়। ছুটে চলা যানবাহন দেখা যায়। ঘরে ফেরা কিছু মানুষও। আচ্ছা, এমন হতে পারে না, জাহিদ যে রিক্সায় আছে, সেই রিক্সাটা অলৌকিক ভাবে এই রাস্তায় চলে আসলো? দূরের সেই শহরের রাস্তায় সব কিছুই ঠিক ঠাক থাকলো শুধু জাহিদের রিক্সাটা ভ্যানিশ হয়ে এই রাস্তায় চলে আসলো! হোক না সেটা হাইপার জাম্প অথবা ডানা গজানো রিক্সা টাইপের কিছু!
রিয়া হাসে। কি অদ্ভুত চিন্তা ভাবনায় না সে করছে। জাহিদ রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে কিছুদূর এগোতেই রিয়ার মেসেজ পায়।
"আমাদের বিয়ের বয়স তিন বছর সাত মাস বারো দিন। বিয়ের আগে বাদাম চিবিয়ে দিন কাটানোর বয়স তিন বছর চার মাস একুশ দিন। আর এক সাথে বাদাম চিবানোর আগে অর্থাৎ আমি হ্যা বলার আগে তুমি যে কদিন আমার পেছনে, আমার বাড়ির সামনে ঘুরেছো তার বয়স....হি হি হি আচ্ছা যাও, এটা বাদ। রাগ করলে না তো?
মজা করলাম। জাহিদ এত এত দিন এক সাথে থাকার পরও 'তোমায় ছাড়া ভালো লাগছে না' টাইপের কথা বলাটা এখন একটু অদ্ভুতই শোনায়। কিন্তু জাহিদ, এই যে তিন দিন তুমি নেই, ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা, বারান্দায় পাশাপাশি রাখা দুটি চেয়ার, ফুলের টবের নিচে আমায় দেখে লুকিয়ে ফেলা সিগারেটের টুকরো....
সব জায়গায় এক নিঃসীম শূন্যতা জানো?
জাহিদ, তুমি মানে তুমি। একজন জ্বলজ্যান্ত তুমি। ফোনের ওপাশের তুমি নও, দূরের শহরে থাকা তুমি নও। জানি, এসব ছেলেমানুষী। কিন্তু....
জাহিদ, আমি জ্বলজ্যান্ত তুমিটাকে পাচ্ছি না...."
মেসেজটা পড়তে পড়তেই সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠে জাহিদ। বাগেরহাট থেকে চট্টগ্রামের দূরত্বটা বেশ। যাওয়া আসাতেই দুই দিন নেই হয়ে যায়। রিয়াকে বলেছিলো চার দিনের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছে সে। এটা মিথ্যা ছিলো। সত্যটা ছিলো, তিন দিনের জন্য। এই মিথ্যাতে অপরাধ নেই। মিথ্যাটুকুর প্রয়োজন ছিলো। তা না হলে তিন দিনের মাথায় কিভাবে সে বাসায় এসে রিয়াকে চমকে দিতো?
মাঝে মাঝে অপার্থিব কিছু সুখ কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য এটুকু মিথ্যা বলাই যায়। রিয়ার মেসেজটার রিপ্লাই দেওয়া প্রয়োজন। কি লেখা যায়? দরজা খুলে দাও অথবা দু কাপ চা বানিয়ে দরজা খোল?
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দ্রুত টাইপ করে জাহিদ। "বারান্দার চেয়ার দুটি আমার খুব প্রিয়, এ কথা তো তুমি জানোই। চেয়ারে বসে, সামনের গতিশীল রাস্তাটাকে সামনে রেখে তোমার সাথে গুটগুট করে গল্প করা যায়। মাঝে মাঝে চাঁদ নেমে আসে ওপাশের নারিকেল গাছের পাতার ভেতর। আমরা তখনও
গুটুর গুটুর করে গল্প করি। দিনের পর দিন। কেউ দেখলে বলেই বসবে, কি সব ছেলেমানুষী এদের!
হা হা হা রিয়া, চেয়ার দুটি কিন্তু তিন দিন ধরে আমাদের পাচ্ছে না! কি সাংঘাতিক কথা! আজ কিন্তু অনেক্ষন গুটুর গুটুর করে গল্প করবো, কেমন?
তার আগে অবশ্য দরজা খুলতে হবে। দরজাটা খোল তো তাড়াতাড়ি!"
রিয়ার পায়ের আওয়াজ পায় জাহিদ। জাহিদের বুকের ভেতর কেউ একজন ঢিপ ঢিপ, ঢিপ ঢিপ করে শব্দ করে চলেছে তখন। "আহ, এত বছর পরও কি সব ছেলেমানুষী...." বুকের যে স্থানে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে সেখানে একটা হাত রেখে এবং ঠোটে একটা হাসি ঝুলিয়ে দরজা খোলার অপেক্ষায় থাকে জাহিদ।
লেখক : মোস্তাফিজুর রহমান শুভ
২৫ মার্চ ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস