পাঠকই লেখক ডেস্ক : কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো সূর্যটা ডুবে যাবে। কিন্তু সারাদিনের তেজক্রিয় আধিক্যটা তার বিরাজমান থাকবে। সফলতা আর ব্যর্থতা মিলিয়েই মানুষের জীবন। আর পরিশ্রমেই সফলতার চাবিকাঠি। এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন সানি। সাদা-মাটা গড়নের দেহটা আর পেরে উঠছে না।
স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে এখন ব্যস্ত কর্মজীবনে। কিভাবে সাজানো যাই নিজের জীবনটা। আধ্যাত্মিক নয় বরং বাস্তবতাকেই বেশি ভালোবাসেন সানি। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে স্টাটাস দিলেন আমার বন্ধুরা চাইলে আমার সাথে এই নাম্বারে..... যোগাযোগ করতে পারো। অতপর ব্যস্তময় কর্মজীবনে তার আনন্দের আধিক্যটা খুবই সীমিত।
তাছাড়া অফিসের কর্মময় সময় বাদে যতুটুকু সময় পান বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। হঠাৎ একদিন রাতে ফোন এলো। রীতিমত সানি কিছুটা বিস্মিত হলো, কেননা এটা তার অফিসিয়াল কিংবা পরিচিতদের মধ্যে কেউ নয়। কে হতে পারে? যা হোক ফোনটা রিসিভ করলেন।
আর তৎখনাৎ ফোনের অপর প্রান্ত হতে ভেসে এলো সুললীত একটি মেয়ের কন্ঠ। সানি হঠাৎ চমকে উঠলেন, কে বলছেন আপনি? কেন আমি একটি মানুষ। সেটা তো বুঝলাম, তো কেন ফোন দিয়েছেন?
আমার ইচ্ছা তাই। কেন আপনার এত ইচ্ছা। সেটা জানি না। তবে আপনার কন্ঠটা অনেক সুন্দর। একটু কথা বলতে পারি। এটা কোন কথা হতে পারে। আপনি তো ভারি বেসরম একটা মেয়ে। চেনা নাই জানা নাই রীতিমত একটা ছেলেকে কথা বলার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। আপনার লজ্জা করলো না। লজ্জা করলে তো আর আপনাকে ফোন দিতাম না।
অতপর মেয়েটি তার পরিচয় দিলেন। নাম সাদিয়া, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। আর তার দেওয়া ফেসবুকের স্টাটাস হতে নম্বরটি সংগ্রহ করেছেন। সানি তখন কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল ভালো। কিন্তু আমরা কাওকে চিনি না, জানি না আর এভাবে তো কথা হতে পারে না। কেন আপনি তো বলেছেন আপনার বন্ধুরা চাইলে আপনার সাথে কথা বলতে পারবে। আর আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি না।
তাছাড়া আমি কি আপনার অন্য কিছু হতে চেয়েছি নাকি যে তো তো করতে হবে। আপনি তো দেখি সুন্দর করে কথা বলেন। এতো সুন্দর সুন্দর উপমা কোথায় পান স্যার আপনি। তবে সানির মনে এই বিষয়টি নিয়ে কেনো যেন কৌতুহুল সৃষ্টি হচ্ছে। আসলে মেয়েটি কে? আর কেন-ই বা আমার সাথে কথা বলতে চাই।
এখন কথা হয় আবার মাঝে মধ্যে দেখা ও হয় সাদিয়ার সঙ্গে। কিন্তু মেয়েটি অনেক চঞ্চল আর বন্ধুত্বের সংখ্যা নেহাত কমও নয়। তবে যে সব বন্ধু সে গুলোকে মানুষ বলে সানির মনে হয় না।
পড়ালেখা নাই, ভবিষ্যত জীবন নিয়ে কোন চিন্তাও নাই। কি করবে ওরা! আর কিভাবেই বা সাজাবে ওদের পরবর্তী জীবন। শুধু ক্যাম্পাসে এসে আড্ডা আর টইটই করে ঘুরে বেড়ালে তাঁতে যে জীবনে সফলতা আসে না সেটা কে বোঝাবে ওদের?
কিন্তু ওরা যে সময়টা বাজে নষ্ট করছে এটা যদি কোনো বিষয় নিয়ে নষ্ট করতো সেটা ওদের অনেক উপকার হত। আর সাদিয়া সে তো সুন্দরী এক তমালিকা। পুরা ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি ছেলেকে পেছনে ঘোরানো এটাই তার সফলতা। কোটিপতি বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে।
জন্মের পর হতে না পাওয়ার বেদনা হয়তো তার পাওয়াই হয়নি। এখন আর মাঝে মাঝে নয় প্রতিদিন বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এ তাদের স্বাক্ষাত হয়। কিন্তু কেনো যেন সানির মনে হচ্ছে দিনদিন সাদিয়া তার উপর অধিকার হরণের চেষ্টা করছে।
হয়তো আবেগ নয়তো ভালোলাগা। আর ও যদি এটাকে ভালোবাসায় রুপ দিতে চাই তবে সেটা হবে ওর ভুল। কেননা আবেগ দিয়ে কখনো ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসতে গেলে সুন্দর দুটি মনের প্রয়োজন হয়। যেটা খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর।
এরই মধ্যে একটি সামাজিক কাজে কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে যেতে হয় সানির। কিন্তু বন্ধুত্বের সেই অভাবটা মনে হয় বড়ই কষ্ট দিয়েছে সাদিয়াকে। তাইতো দেশে ফেরার পর যখন সাদিয়ার সঙ্গে সানির কথা হলো তখন অভিমানে সাদিয়ার দিকে তাকানোই দুষ্কর।
কি হয়েছে ম্যাডাম আপনার? এমন ব্যবহার করছেন যেন আপনি আমাকে চেনেন ই না। আর মনে হয় আমি আপনার একজন অপরিচিত মানুষ। আচ্ছা থাক তুমি, আমি গেলাম। হঠাৎ সানি লক্ষ করলো সাদিয়ার দু-চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। সেটা বন্ধুত্বের হোক আর ভালোবাসার হোক।
এটাই বুঝি প্রকৃত বন্ধুকে কাছে না পাওয়ার বেদনা । আর তখন সাদিয়া বললো, মানুষের জন্য কাজ করে কি লাভ? জবাবে সানি বললো, তুমি জানো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে কতটুকু সুখ নিহিত থাকে। কখনো কি ভালোবাসার মর্যাদা বুঝেছ যদি বুঝতে তবে মানুষকে ভালোবাসার মর্যাদা দিতে।
অসহায় মানুষগুলোকে নিয়ে এমন কথা বলতে না। আমি এটা তোমার কাছে আশা করিনি। তুমি ধনীর মেয়ে হতে পারো কিন্তু কখনো সুখ পাওনী। প্রকৃত সুখ কি সেটা তোমার কাছে এখনো অজানা। কখনো কি তোমার মনে পড়ে কাওকে সাহাষ্য করেছো।
কিন্তু বন্ধুদের নিয়ে নিয়মিত বড় বড় রেস্টুরেন্ট এ সময় কাটিয়েছ। আর রাস্তার পাশে হাত পেতে বসে থাকা মানুষগুলির কথা একবারও খাওয়ার সময় চিন্তা করনি। তারা খেয়েছে কিনা, ঠিকমত ঘুমাতে পারছে কিনা, রাস্তার পাশে মশার কামড়ে তারা কিভাবে রাত কাটাচ্ছে।
কৈ তাদের তো ঠিক-ই ঘুম হচ্ছে আর রাত ও চলে যাচ্ছে। কিন্তু জানো তাদের মনে ভালোবাসা আছে। আছে অফুরন্ত সুখ। যেটা তোমাদের মত বড়লোকের নেই। সাদিয়া জানো,সুখ কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না এটা ভালোবাসা দিয়ে অর্জন করে নিতে হয়।
সাদিয়া বললো, দেখ সানি তুমি কিন্তু আমাকে একটু বেশি বলছো। আমি কিন্তু তোমাকে তেমন কিছু বলিনী। আচ্ছা আমরা আজ উঠি। ওকে। সারারাত সাদিয়ার ঘুম হলো না। ও একটা সাধারণ ছেলে নয়। ওর মধ্যে আছে মনুষ্যত্ব। যা টাকা দিয়ে কেনা যাই না।
হঠাৎ সানির ফোনে কল এলো, সাদিয়া বললো আমি দুঃখিত তোমাকে কথাটা বলার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। আচ্ছা সাদিয়া তুমি কি চাও আমার কাছে? আমি সামান্য কিছু টাকা বেতনের একটি চাকরি করি। না আছে অর্থ না আছে সম্পদ। তুমি ধনীর দুলালী। তোমার আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা।
আর যদি তুমি আমাকে নিয়ে কিছু ভেবে থাকো তবে সেটা ভুলে যাও। কেননা তেল আর জল কখনো এক হয় না। কথাগুলো শুনে সাদিয়া কষ্ট পেল, কাছে পেয়ে না পাওয়ার বেদনা কতটা করুণ সেটা আজ সে অনুভব করছে। সাদিয়া কথার কোনো উত্তর না দিয়ে লাইনটা কেঁটে দিলেন। সানি চিন্তা করলো আদৌ কি কাজটা ঠিক হলো।
এভাবে মেয়েটিকে কষ্ট দেওয়া কি আমার উচিত হলো। কিন্তু কবি নীরব। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। আর সেটাকে মানতেই হবে। ওরা যাকে ইচ্ছা ভালোবাসতেও পারে আবার সেটাকে ছুড়ে ফেলতেও জানে। কিন্তু আমরা পারিনা। ধনী আর গরীবের মাঝে বরাবরই একটা বৈষম্য থাকে সেটা যা নিয়েই থাক না কেনো।
কয়েকদিন পর হঠাৎ সাদিয়ার ফোন এলো।কি হলো আমাকে কি ভুলেই গেছ নাকি।না সেটা হবে কেন? এখন তো আর ফোন কিংবা আগের মত খবর নাও না। আমি মনে হয় পর হয়ে গেছি। দেখ অযথা কিন্তু শুধু আমার সাথে ঝগড়া করা হচ্ছে। মানুষ ব্যস্ত থাকতে পারে।
আর সেটার জন্য কাওকে ভুল বোঝা উচিত নয়। তো কিছু বলবে? আরে আজব তো! মানুষ তো কিছু বলার জন্যই কাওকে ফোন দেয় তাই না। হ্যাঁ সেটা অবশ্যই। তুমি জানো আজ আমার ভার্সিটির রেজাল্ট দিয়েছে।তাই নাকী? তো ফলাফলটা অবশ্যই সবার চেয়ে ভালো করেছে। মিষ্টি খাওয়াবে না। আর বাসায় তো নিশ্চয় সবার বাহবা পেয়েছ। কি তাই না?
অপর প্রান্ত হতে কোনো সদুউত্তর নেই। সাদিয়া কি হয়েছে তোমার কথা বলছ না কেনো? হঠাৎ কান্নার শব্দ ভেসে এলো সানির কানে। যে মেয়েটি কখনো গোমরা মুখে কথা বলেনী কিংবা কাঁদতে দেখিনী সেই মেয়েটি আজ কাঁদছে কেন? কি হয়েছে ওর। কি হয়েছে আমাকে বলো তুমি কাঁদছ কেন।
কিন্তু কিছুই বলছে না। আজ সাদিয়ার কান্নার কাছে হেরেই গেল সানি। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারলেন ভার্সিটিতে সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট করেছে সে। কিন্তু তাঁর কাছে কখনো কেউ এটা আশা করেনী। যে পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বুঝত না আজ তাঁর একি অবস্থা।
একবার সানি বলেছিলো, তুমি ভালো করে পড়ালেখা করো। সবসময় ফেসবুক আর মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকলে অনেক খারাপ রেজাল্ট করবে। ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা বলে অন্য কোথাও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে ক্লাস করো তাঁতে তোমারই ভালো হবে।
অপরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে সারারাত চ্যাট করে যে সময়টা নষ্ট করো সেই সময়টা তুমি কিছু শিখতে পারো। যা তোমার পরবর্তী কর্মজীবনে সফলতা দিবে। আসলে সাদিয়া কি জানো? তোমাদের মত ধনীর দুলালীরা আবেগের বশে হোক আর খেয়ালেই হোক।
যেটা করো সেটা বাস্তবতা নয়। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। তোমার জীবন হতে যে মূল্যবান সময়টা হারিয়ে ফেলেছ সেটা চাইলেও তুমি আর ফিরে পাবে না। তোমার আজকের এই ফলাফলের জন্য কি কারণ জড়িত সেটা তুমি ভালো করেই জানো। তোমাদের কোনো বাঁধা নেই, যখন যেখানে যা ইচ্ছা তা করতে পারো।
কিন্তু আমরা পারিনা। কেননা আমরা তোমাদের মত ধনী শ্রেণির নয়। কখনো কি ভেবেছো আজ যদি তুমি ভালো রেজাল্ট করতে তোমার বাবা-মা কতো খুশি হত। সেটি বোধ হয় কখনো ভাবার সময় হয়নি। আসলে অর্থ দিয়ে সবকিছু হয় না কিছু জিনিস মেধা দিয়ে অর্জন করতে হয়।
যার ভাগ কেও নিতে পারেনা যা শুধু তোমার নিজস্ব সম্পদ। আজ হয়তো সাদিয়া আমি তোমার কাছে সবচেয়ে একজন খারাপ মানুষ। সাদিয়া কিছুক্ষণ নীরব থেকে একটি কথাই বললো, সানি তুমি আমার অনেক ভালো একটা বন্ধু। সেটার প্রমাণ আজ আবার দিলে।
আমি সেদিন তোমাকে না বুঝে ভুল করেছিলাম। তোমার কথাকে নির্ঘাত শুধু নীতিকথা মনে করেছিলাম। ভালোবাসার পরিবর্তে যখন তুমি শোনাচ্ছিলে নীতিকথা তখন বড়ই বিরক্তি হচ্ছিলো। কিন্তু সেই কথাগুলো যে আমার ভালোর জন্যে বলেছিলে, সেটা বোধ হয় আমি কখনো ভাবিনী।
সেদিন যদি তোমার কথাকে অবহেলা না করতাম আজ মনে হয় আমার এ অবস্থা হতো না। আমি হেরে গেলাম তোমার কথার কাছে। অতপর কয়েক বছর পর রাস্তায় সাদিয়ার সঙ্গে সানির দেখা। দু-জনই হতবাক। কিন্তু পরবর্তন অনেক।
সাদিয়া এখন বাবার অফিসে জয়েন করেছেন আর সানি সেই আগের মতই।আর তখন সাদিয়া একটি কথা বললেন জানো সানি, আমরা তোমাদের মত সাধারণ মানুষের কথাকে সম্মান দিতে জানি না। ভাবি আমাদের ত অনেক আছে এই নীতিকথার কিবা মূল্য আছে। কিন্তু তুমি বুঝিয়ে দিয়েছো বন্ধুত্বের মাঝে কোনো ধনী-গরীব নেই। ছোট্ট একটি কথায় মানুষের জীবন পরিবর্তন হতে পারে।
আবার হতে পারে ধ্বংস। সেটার নিতান্তই প্রমাণ তুমি। সানি বলে থাক আর বাহবা দিতে হবে না ম্যাডাম। সাদিয়া বলে আজ তুমি একটা কথা বলবে, কেনো কথা কি বলছি না। আচ্ছা তুমি কি আমাকে ভালোবাসো। কই না তো। এমন তো কখনো ভাবিনী। তবে একজন ভালো বন্ধু ভেবেছি।
অন্যদিকে হৃদয়ের অন্তরালে সানিকে ভালোবাসার বন্ধনে নিমজ্জিত করলেও মনের মানুষকে বলা হয়নি কখনো। কিন্তু সাদিয়া এটাও ভাবছে, ভালোবাসার মানুষের চেয়ে মনের মত একজন বন্ধু অনেক ভালো। যে আমার সমসময় পাশে থাকবে।
সেটা সুখ কিংবা দুঃখ যাই হোক না কেনো। আর এটাই তো বন্ধুত্বের ভালোবাসা। বন্ধুর সুখে তার সাথী হব আর বিপদে নয় এটা বন্ধুত্ব নয়।
লিখেছেনঃ- শেখ জাহিদুজ্জামান
১০ মার্চ ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/শাম/সিয়াম