পাঠকই লেখক ডেস্ক : রাত ৩ টা । কাত হয়ে শুয়ে মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে গেমস খেলছে রাকিব । এমন সময় একটা ম্যাসেজ আসলো । কিছুটা অবাক হল রাকিব। এত রাতে তো কারও ম্যাসেজ দেয়ার কথা না । সামিয়ার সাথে ১ টার দিকে লাস্ট কথা হইছে। তখনই ঘুমিয়ে পরার কথা ছিল তার। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গেইমের রানিং লেভেলটা শেষ করেই গেইমটা মিনিমাইজ করে ম্যাসেজটা দেখল সে।
ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশাল একটা ম্যাসেজ, নাম্বারটা অপরিচিত। ম্যাসেজ পুরোটা না পড়েই ওই নাম্বারে কলব্যাক করলো রাকিব।
হ্যালো।
অপরপাশ থেকে একটা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ শোনা গেল।
রাকিবের মনের এক কোণে যেই সূক্ষ্ম আশঙ্কা ফুটে উঠেছিল সেটাই সত্যি হল। কণ্ঠটা উপমার।
-হুম, বল। এতদিন পর?
হুম। কেমন আছ? আমাকে ভুলে গেছ?
এইতো, ভালো আছি, ভুলি নাই । তুমি? দায়সারা উত্তর দিল রাকিব ।
ভালো না। তুমি কি কালকে আমার সাথে কিছু সময়ের জন্য বের হতে পারবে?
কেন? কোথায়?
কোথাও না, এমনি রিক্সা দিয়ে ঘুরব।
উমমমম... ঠিক আছে। না করতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে না করলো না রাকিব।
অনেক থ্যাঙ্কস। তুমি যখন ফ্রী থাকবে তখন এই নাম্বারে ফোন দিও। আমি বের হবো ।
ওকে।
ওকে, রাখি এখন, বাই।
রাকিব আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিল। পরদিন সকাল ১১ টা। রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে রাকিব আর উপমা ।
তোমার সে কোথায়? কথা শুরু করলো রাকিব ।
ব্রেকআপ করছি । আসলে কি জানো, অনেক মানুষ আছে যাদের বাইরে থেকে দেখলে ভালো মনে হয় কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা ততটাই খারাপ ।
হুম, এতদিন পর এটা জানলা? যাই হোক, এখন আমি কি করতে পারি ?
আসলে তোমাকে কীভাবে কি বলব বুঝতেছি না। ওর সাথে সম্পর্কের শেষ কয়েকমাস তোমাকে অনেক বেশী মিস করছিলাম। তোমার কাছ থেকে যতটা ভালোবাসা পেয়েছিলাম ওর কাছ থেকে তার ছিটেফুটোও পাইনি। তার উপর অনেকবার আমার বিশ্বাস নষ্ট করেছে ও । তাই শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটার ইতি টানলাম।
এটা তোমার প্রাপ্যই ছিল । আর এটা না ঘটলে আমার ভালোবাসার গুরুত্ব তুমি বুঝতা না ।
যাই হোক, বাদ দাও। আমি তোমাকে আবার চাই। এইবার বিশ্বাস কর তোমাকে একটুও কষ্ট দিব না। অনেক বেশী ভালবাসবো । প্লিজ রাকিব ।
এখন এইসব কথা বলে লাভ নাই । অনেক দেরি হয়ে গেছে । আমার আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন হইছে ।
কি বল রাকিব! তুমি না বলছিলা আমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবা?
হুম বলছিলাম । কিন্তু সামিয়া মেয়েটা আমাকে পাগলের মত ভালবাসে । কখনও সে আমাকে সামান্যতম কষ্ট দেয়নি । তার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলার সাধ্য আমার ছিল না ।
উপমা কিছু না বলে চুপ করে থাকলো । তার চোখ আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসছে ।
তোমাকে আমি অনেক বেশী ভালবাসতাম । আর কোন মেয়েকে এত বেশী ভালবাসতে পারব না কোনদিন । তিন বছর আগে তোমাকে যতটা ভালবাসতাম সামিয়া মেয়েটাকে ততটা ভালবাসতে না পারলেও তাকে কখনই কষ্ট দিব না। উপমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পরছে ।
ওকে ভালো থেক তুমি । আমাকে এখন যেতে হবে। রিক্সা থামিয়ে নামতে নামতে রাকিব বলল ।
আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি । বাসায় চলে যাও । রিক্সাওয়ালার হাতে একটা ১০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে উপমাকে বলল। উপমা পাথরের মূর্তির মত বসে আছে। চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ঝরছে ।
হোয়াট গোওজ অ্যারাউন্ড কামস অ্যারাউন্ড । উপমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে রাকিব বলল । আর কিছু না বলে উল্টো ঘুরে বাসার দিকে রওনা দিল রাকিব। মনের ভিতর অদ্ভুত এক ধরণের শান্তি লাগছে তার ।
লেখক : মো: জুবায়ের ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস