এ গল্প শুধুই ভালোবাসার
পাঠকই লেখক : "মন খারাপ?" -দুই শব্দের একটি ক্ষুধে বার্তা আমার ফোনে এসেছে।ইচ্ছে করেই একটু দেরিতে মেসেজের উত্তর দিই,যেন সিন্থি বুঝতে পারে আমার সত্যিই মন খারাপ।
"নাহ" বলে আমিও মেসেজের উত্তর দিই। সিন্থি বুঝতে পারে আমার মন খারাপ।আমার মন ভালো করার জন্য অনেক কথা বলে। আমি উত্তর দিইনা।
-কি করলে মন ভালো হবে তোমার?
-জানোনা?
-না জানিনা
-না জানলে ভালো।
-বলোনা কি করলে?
-ভালোবাসি বললে।
সিন্থি চুপ হয়ে যায়।আর মেসেজ দেয় না। সে সব বলতে পারে শুধু ভালোবাসি বলতে পারেনা। সে জানে আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বার বলেছি, আমাকে একটু ভালোবাসতে। সে বাসে না।
সিন্থি আমাকে সুযোগ দেয়। আমার প্রতি তার অনুভুতি জন্মানোর সুযোগ দেয়। সিন্থির সাথে আমার সম্পর্কটা না বন্ধুত্বের, না ভালোবাসার!
অনেক দিন ধরে তার সাথে আমার যোগাযোগ। কথার মার প্যাচে একটা সময় মনের অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেলি। ভালোবাসি বলতে বলতে মুখের লালা ঝরালেও সিন্থির মুখ থেকে আজ পর্যন্ত আমি বের করতে পারিনি। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। তখন সিন্থি বোঝায়,"এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি বললে সেটা মিথ্যে হবে। আমি চাইনা আমার মিথ্যে কথায় তুমি সাময়িক সুখ পাও, আমি চাই আমার ভেতর থেকে তোমার জন্য ভালোবাসা উপচে পড়ুক!"
তখন আর সিন্থির প্রতি রাগ হয়না।ভালোবাসাটা বেড়ে যায়। সিন্থিকে আরো বেশী ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা।
সিন্থিকে যেদিন প্রথম দেখি,অদ্ভুত একটা মুগ্ধতায় পেয়ে বসেছিলো আমাকে। থুতনীতে হাত দিয়ে,কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সাদা ড্রেসে আমার সামনে এসেছিলো। মনে হচ্ছিলো মেঘের কোল থেকে নেমে আসা এক মেঘ পরী! আকাশের এক গুচ্ছ সাদা মেঘ শরীরে জড়িয়ে,আমাকে সুখের বৃষ্টি এনে দিয়েছিলো।
আমার মুখ থেকে কথা বেরুয় নি। সুন্দরীদের সামনে কথা বলা যায় কিন্তু মায়াবী দের সামনে কথা বলা যায় না। এরা আসেই পুরুষদের বোবা করতে,পুরুষদের বাকশক্তি কেড়ে নিয়ে এরা অলংকার বানায়।
মেয়েটা আমাকে ভালোবাসেনা! অথচ,মেয়েটা আমার খোঁজখবর রাখে। ক্লাস থেকে এসে আমাকে জানায়। দেখা করতে গেলে চুপ করে থাকে। আমার উদাস মনে নানান রকম বাস্তবতা তুলে ধরে। আমাকে ভালোবাসেনা অথচ আমার সামাণ্য স্বর্দি জ্বরে ও কান্নাকাটি করে । ওষুধ খেতে বলে। নাছোড়বান্দা আমি সেই একই কথাই বলে যাই।
-ওষুধ খেয়ে নাও
-না খাবোনা
-কি করলে ওষুধ খাবে?
-ভালোবাসি বললে।
সিন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়। কথা বলেনা আর। সিন্থি শুধু এ শব্দটাই আমাকে বলেনা। অথচ সে বোঝেনা আমি শুধু এ শব্দটারই কাঙ্গাল!
মাঝে মাঝে সিন্থি হাসে। আমার পাগলামী দেখে হাসে। বলে,"এত্ত সুইট কেন তোমার পাগলামি?"আমার পাগলামী তখন আরো বেড়ে যায়।
"পিপড়ে হবে?
মিষ্টি পাগলামী চুষে নিতে?
বউ হবে?
মিষ্টি ভালোবাসা বুঝে নিতে?"
সিন্থিকে প্রায়ই এরকম মেসেজ দিই আমি। হয়তো বা হাসে, হয়তোবা বিরক্ত হয়।
সিন্থির পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আমি জানতাম না। যথারীতি আমি তার সাথে পাগলামি করে যাই। প্রতিটি মেসেজের উত্তরে দিই, "ভালোবাসবা না?"
সিন্থি সেদিন বিরক্ত হয়। আমি নাকি তার উপর মানসিক অত্যাচার করি। আমিও মেসেজ দিয়ে যাই,"তুমি বলতে পারবে,তুমি আমাকে ভালোবাসোনা? যদি বলতে পারো তাহলে আমি আর জ্বালাবোনা। আমার মেসেজের উত্তরে "ভালোবাসি" অথবা "ভালোবাসিনা" লিখবে। এছাড়া কিছুনা। যদি উত্তর না দাও,তাহলে ভাববো ভালোবাসো কিন্তু বলতে পারছো না"।
সিন্থি উত্তর দেয়নি প্রথমে। পরে "ভালোবাসিনা" লিখেছিলো। আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমার মাথায়।কান্না আসছিলো অঝোরে। যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন আকা শুরু করেছিলাম,সে কেন রাবার হয়ে মুছে দিচ্ছে সব!
দুই দিন কেটে যায়। আমি সিন্থির কোন মেসেজের উত্তর দিইনি। ফোন ও ধরিনি। সে আমাকে ভালোবাসেনা,আমি কেন ভালোবাসবো? কাউকে নিয়ে আবেগী হয়ে যাওয়া আর সীম গাছ একই কথা। এরা দুটোই খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। গোড়াপত্তন করাই শ্রেয় ।
সিন্থি দেখা করতে বলে। মেসেজটার উত্তর না দিয়ে থাকতে পারলাম না আমি। ওকে দেখার জন্যই যে আমার চোখের সৃষ্টি, ওকে অনুভব করার জন্যই তো আমার মস্তিষ্ক, ওকে ভাবার জন্যই তো আমার মন!
মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে সিন্থি। দখিনা বাতাসে ওর চুল উড়ছিলো। এই প্রথম আমি ওর চুল দেখি। ওড়নার আড়ালে থাকতো সবসময়। সত্যিকারের সুন্দরীরা তাদের সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রাখতেই ভালোবাসে। কেউ যখন তাদের দেখে মুগ্ধ হয় তখন এরা সৌন্দর্য ঢেকে ফেলে। সিন্থিও তাই করলো। আমার চোখের পলকে ওড়নায় ঢেকে ফেললো সিল্কি, ছোট করে কাটা ঘন চুল।
চশমার লেন্সের ওপারের দুটো চোখ নাচাচ্ছিলো।
-কি সমস্যা?
-কই সমস্যা?
-আমার সাথে কথা বলোনা কেন?
-কি করলে মন ভালো হবে?
-ভালোবাসি বললে।
সিন্থি রেগে যায়। গাল লাল করে বলে,"সেটা সম্ভব না,আমি তোমাকে ঠকাতে পারবোনা। "
-মানে?
-এই যে চশমার লেন্স,লেন্সের আড়ালে দুটো চোখ,এ দুটো চোখের কোন দাম নেই। লেন্সটা খুলে ফেললেই আমি অন্ধ! একসময় লেন্স ও পারবেনা আমার অন্ধত্ব দূর করতে। একটা অন্ধকে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে পারবে তুমি?
আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। সাবলীল ভাবে বলে দেয়া কয়েকটা বাক্য আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি।
সিন্থি পা বাড়ায়। "আমি আসি" বলে পিছু হটে। বুকের ভেতর এক হাজার ছুরি দিয়ে কেটে দিয়েছে কেউ।
নাহ..পারিনা। আবেগের কাছে পরাস্ত হই। দৌড়ে গিয়ে সিন্থির হাত ধরি।
-তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি অন্ধ নও!
-হ্যা,আমি অন্ধ নই। লেন্স আমার চোখ তবে এক সময় অন্ধ হয়ে যাবো।
-যেদিন হবে সেদিন দেখা যাবে।
-সেদিন আমি তোমার কাছে বোঝা হয়ে যাবো।
-না হবে না।
সিন্থি চুপ থাকে। আমি মাথা চুলকাই। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। থুতনী ধরে আমি তার দিকে চাই। গাল ভাসানো চোখের পানি উৎসর্গ করি তাকে। ভালোবাসা চাই।
সিন্থি শক্ত হয়ে থাকে।আমার নাম ধরে বলে,"এটা সম্ভব না"।
আমি কাতর গলায় বলি,"আমার চোখ দিয়ে বাকি জীবন দেখতে পারবে না? সারাজীবন তোমাকে দেখাবো। আমি বলবো আর তুমি কল্পনা করবে। "
সিন্থি কেদে দেয়। ভাঙ্গা কন্ঠে, হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে বলে,"কয়েকদিন পর তোমারই সহ্য হবে না"
-আমার সহ্য হবেনা কেন?আমি তো তোমাকে দেখবো।
-আমাকে দেখলেই হবে?
-আর তো কোন কাজ নেই।
-পেশা হবে,"সিন্থিকে দেখি"
-না। "আমার বউকে দেখি"।
সিন্থি আবারো কাদে। আমি ওকে বোঝাই,"এখনি তো তোমার কিছু হয়নি। কিচ্ছু হবে না তোমার। কেন কান্না করছো?"
সিন্থি আমাকে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করে বলে,"বোঝনা তুমি কেন কান্না করছি? তুমি আমাকে দেখবে অথচ আমার প্রতি তোমার চাহনীটাই এক সময় আমি দেখবোনা। "
আমি বুঝতে পারি। আমি বুঝতে পারি মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। ওকে শান্ত করি। বোঝানোর চেষ্টা করি ওর কিছু হয়নি।
শান্ত মেয়েটা মাথা থেকে ওড়না সরায়। আমার বুকে মাথা রাখে। আমাকে মাতাল করে দেয়া চুলের ঘ্রাণ নেয়ার সুযোগ দেয়। চুলে হাত বুলাই। বিরক্তি নিয়ে বলে,"চুল ছাড়ো"।
-ছাড়বো না।
-কি করলে ছাড়বে?
-ভালোবাসি বললে।
সিন্থি ভালোবাসি বলতে যায়। ঠোটে হাত দিয়ে ওকে বাধা দিই আমি। এখন যে ওর চুলের ঘ্রাণ নিবো আমি।
লেখক : Alaxender Abir
২৯ অক্টোবর ২০১৪/এমটনিউিজ২৪/এসএস/এসবি