পাঠকই লেখক ডেস্ক : আজ একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। বসের নির্দেশে সন্ধ্যার সময় এক ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে এনে বসের রুমে হাত কড়া পরিয়ে রেখেছিলাম। বস আসলেন রাত ১১টার দিকে। বস রুমে ঢুকেই একটা বাঁশে লাঠি দিয়ে ছাত্র নেতার দু’হাতে সজোরে পেটাতে লাগলেন। এমন সময় বিদ্যুত চলে গেল। জেনারেটর চালু হতে প্রায় মিনিট দশেক দেরি হল। লাইট জ্বলে উঠতেই বসের চিৎকার শোনা গেল-ভুত, ভুত। কামরান, সোহেল তোমরা কোথায়? এদিকে আস।
আমি জেনারেটর রুমে গিয়েছিলাম। চিৎকার শুনে দৌঁড়ে আসলাম বসের রুমে। দেখলাম বস মেঝেতে পড়ে আছেন। ছাত্র নেতার পাশে এক উলঙ্গ ব্যাক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি চমকে উঠি। ভুত-টুতে আমার বিশ্বাস নেই। তারপরেও কেমন যেন ভীতি কাজ করছিল। ভাল করে দেখছিলাম লোকটিকে। লোকটির গায়ে পোড়া মবিল মাখানো বলে মনে হচ্ছিল। ধারনাটি বদ্ধমূল হল ছাত্রনেতার মুখে আঙুলের ছাপ দেখে।
দু’হাত দিয়ে ছাত্রনেতাকে আদর করেছে বলে মনে হল। আমি সজোরে বাঁশি দিলাম। চিৎকার করে অন্যদের ডাক দিলাম। কয়েকন ছুটে আসল। এমন মুহুর্তে লোকটি চিৎকার করে উঠল এই কেউ এগোবি না, সবাইকে মেরে ফেলব। আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম। ওকে কিভাবে ধরা যায় সে পরিকল্পনা করছিলাম।
লোকটি ছাত্রনেতার কাছে গিয়ে তার মাথার উপর হাত রেখে গলা ফাঁটিয়ে বলছিল তোমরা এই ভাল মানুষটাকে ধরে এনেছ কেন? আমার ভাই কি চোর না ডাকাত? লোকটি ছাত্রনেতার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাত দিয়ে তার মুখখানা ধরে চুমু খাচ্ছিল। এ সুযোগে আমি ইশারা করতেই কনস্টেবল আরমান লোকটিকে জাপটে ধরল। কিন্তু গায়ে তৈলাক্ত মবিল থাকায় পিছলে গেল। লোকটি দৌঁড়ে বাইরে চলে গেল।
কনস্টেবল রাকিব ও সোহেল পিছু নিল । কয়েক পা এগুতেই ওরা পিছলে পড়ে বাবাগো-মাগো করছিল। রানার মাহমুদ পিছলে না পড়লেও তার সাথে দৌঁড়ে পারল না। পারবেই বা কি করে? বিগত দুই বছর ধরে নিয়মিত পিটি প্যারেড একেবারেই বন্ধ হয়ে আছে। লোকটি সবাইকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে গেল।
আমরা সবাই বসের রুমে ফিরে আসলাম। এস আই ফরিদ বসের পাল্স চেক করে চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফেরাল। বস উঠে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসলেন। আমি ছাত্রনেতাকে দেখিয়ে বসকে বললাম স্যার একে আমি নিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। বস মাথা নেড়ে সাই দিলেন। ছাত্র নেতাকে পাশের একটা রুমে এনে লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই মুচকি হেসে বললেন, ও হচ্ছে আনুু পাগলা।
আনুু পাগলা এখানে আসলো কেন?
ও আমাকে খুব ভালোবাসে। আব্বুর কাছে আমার গ্রেফতারের খবর শুনে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।
ও পাগল হলে আমাদের অফিস চিনল কি করে?
আসলে ওকে সবাই পাগল বলে কিন্তু আমার কাছে তেমনটি মনে হয় না। তবে ওর বাবার মুখে শুনেছি পাঁচ বছর আগে ছিনতাইকারী ভেবে পুলিশ নাকি ওকে থানায় এনে বেদম প্রহার করে। তারপর থেকেই ও পাগলামী করে বেড়ায়। পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে এ কথা শুনে আমাকে দেখতে ও সরাসরি এখানে চলে এসেছে।
ছাত্র নেতার কথা আমার কিছুটা বিশ্বাস হলো। এলাকার পরিচিত কয়েকজনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে আনুু পাগলা সম্পর্কে জানলাম । পরে স্যারের রুমে ঢুকে সব খুলে বললাম। সব শোনার পরেও স্যারের মধ্যে কেমন যেন ভীতি কাজ করছিল। স্যার আমাকে ছাত্র নেতাকে লক-আপে ঢোকাতে বললেন । ছাত্র নেতাকে লক-আপে আনার সময় একটা কথা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলছিল- যে ছেলেটি একজন পাগলের কাছে এতো প্রিয়, সে না জানি অন্যদের কাছে আরো কত বেশি প্রিয়।
লেখক : মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ
ফটোগ্রাফি : আই.এম উত্তম
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪/এমটিনিউজ২৪/এসবি