পাঠকই লেখক ডেস্ক :৭৬ নম্বর বেডের রোগীর রিপোর্ট গুলো একটু আনবেন তো ।
এই নিন আপা ।
(রিপোর্ট দেখার পর) খুব বেশি সময় নেই এই ছেলেটার কাছে ! লাঙ্কস ক্যান্সারে আক্রান্ত একটা মানুষ এখনও লড়ছে ।
জানেন আপা; ছেলেটাকে যখনই দেখি, মনমরা হয়ে বসে থাকে । চোখ দুটো ভেজা দেখি । চোখ দুটো যেন কাউকে খুজে চলেছে । ছেলেটার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছা হচ্ছে, কিন্তু আজ সময় হবেনা ।
ডক্টর আফসানা । এইতো কিছুদিন আগেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছেন । আসার পরেই কাজে যোগ দিয়েছেন । আর প্রথমেই এসেই তার তত্বাবধানে যে ছেলেটি এসেছে সে 'মেঘ ।
আপু তুই তো ডক্টর হবি; তাইনা ?
হুমম; সেজন্যই তো লেখাপড়া করতেছি ।
শোন না আপু; তুই ডক্টর হওয়ার পর আমার চিকিৎসা করবি; ওকে ।
ধুর । তোর কিচ্ছু হতে দিলে তো হবে ।
কেন ? তোর ভাইয়ের কী মৃত্যু হবেনা ?
এবার সত্যিই পিটুনি খাবি । আর আমার ভাইয়ের কিছু হবেনা ।
কিন্তু কিছু হলে তো জানতেও পারবি না !
মেসেজটা দেখল আফসানা । কিন্তু কোনো রিপ্লাই দিলনা । অভ্রবিন্দু' নামের ফেসবুক আইডিটা যখনই এমন করে কথা বলে; আফসানা চুপ হয়ে যায় । আর কথা বলেনা ছেলেটার সাথে । ওর নিজের কোনো ভাই নেই; এই ছেলেটাকে আপন ভায়ের মতই ভালোবাসে । ফেসবুকে পরিচয় যদিও; কিন্তু ভালোবাসা ভাই-বোনের মতই । কিন্তু ছেলেটা ডিপ্রেশনে ভুগছে ।
বিভা নামের একট মেয়েকে ভালোবেসেছিল ঐ অভ্রবিন্দু নামের ছেলেটা । কিন্তু কোনো এক কারনে বিভা ছেড়ে যায় ছেলেটিকে; আর তখন থেকেই এমন করছে অভ্রবিন্দু । . প্রতিদিন দু'এক প্যাক সিগ্রেট না হলে দিন ফুরোয় না । অন্যান্য নেশাও হয় মাঝে মধ্যেই । আফসানা অনেক চেষ্টা করেছে । কিন্তু কথা শুনতো না ছেলেটা । তাই আফসানার সাথেও ঝগড়া হত মাঝে মাঝে । তখন আফসানা ম্যাসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিত ।
অভ্রবিন্দু ছেলেটা আফসানার কাছে কেমন যেন রহস্যময় ! আইডিতে নিজের কোনো ছবি নেই; এমনকি রিয়েল নামটা পর্যন্ত বলত না । তবুও ছোট ভাইয়ের মতই ভালোবাসতো ।
আফসানার সাথে প্রথম পরিচয়ের সময় খুব মজা করত ও । একদিন ছেলেটা বলেছিল- আপু; তুই যখন আমার হাত ধরে বসে থাকবি; কেমন মজা হবে বল ।
হুমম; খুব মজা তো হওয়ারই কথা ।
আমি তখন কি বলব জানিস ?
কি বলবি ?
সুনীল যেমন বলেছিল, 'এ হাত ছুয়েছে নীরার হাত' আমিও তেমন করে বলব, 'এ হাত ছুয়েছে আপুর হাত' ।
কিন্তু সুখের সময়গুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেল । বিভা ছেড়ে চলে গেল আর আফসানার'ও বিদেশে যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হল । . যাওয়ার কয়েকদিন আগে কথা হওয়ার এক পর্যায়ে অভ্রবিন্দু বলল- . -আপু; তোর সাথে দেখা করব ।
ভাই; এখন সম্ভব না । জানিস ই তো আমাকে যেতে হবে । তুই চিন্তা করিস না । আমি ফিরে এসে দেখা করব তোর সাথে ।
হুম । আজ তাহলে আমার নামটা বলেই দিই; হয়ত আর কখনও সুযোগ পাবোনা ।
সত্যি বলবি ? বল ভাই ।
আমি মেঘ
ইশশ; আমার ভাইয়ের নামটা কত্ত কিউট ।
কোনো রিপ্লাই আসেনা অভ্রবিন্দু আইডির মালিক মেঘের কাছ থেকে । এরপর আফসানা অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু যোগাযোগ করতে পারেনি । না ফেসবুক, না ফোন; সবকিছুই বন্ধ !
---কয়েকদিন পর--- . প্রায় মাঝরাত । আকাশে তাঁরাগুলো তখনও জ্বলজ্বল করছে । আফসানা তখন বাড়ির ছাদে; তাঁরা দেখছে । আর মেঘের কথা ভাবছে । . হ্যা মেঘ; সেদিন মেঘ নামের ছেলটির সাথে দেখা করেছিল ও । তখন নিজের মেঘ নামের ভাইটির কথা মনে পড়ছিল । যখন মেঘ নামের ছেলেটির সাথে দেখা করতে গেল; মেঘ একবারই শুধু ওর দিকে তাকিয়েছিল । চোখগুলো ফেরাতে পারছিল না । মেঘের চোখগুলো ভেজা ছিল তখন । . সামান্য কয়েকটা কথা হল ওর সাথে । এরপর চলে এসেছিল আফসানা । আসার পর শুধু একটা প্রশ্নই ওর মাথাই ঘুরছিল- ও কে ! ও কাঁদল কেনো ? . ভাবনায় ছেদ পড়ল ফোনের আওয়াজে । হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে । এত্ত রাতে ! ফোন ধরল আফসানা-
হ্যালো -আপা; জলদি হাসপাতালে আসুন । ৭৬ নং বেডের ছেলেটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।
ওকে আমি আসতেছি ! . . যখন আফসানা হাসপাতালে পৌছল; মেঘের অবস্থা খুব খারাপ তখন । কিন্তু ও যখন মেঘের কাছে পৌছল, তখন মেঘ বেশ খানিকটা শান্ত হল । ও আফসানাকে কাছে ডাকল; এবং আস্তে করে বলল- . -আমি জানি আপনি আমার জন্য কিছুই করতে পারবেন না ।
-চুপ থাকো তুমি । তোমার কিছুই হবেনা মেঘ । তুমি প্লিজ চুপ থাকো মেঘ ।
আপনি কি আমার হাতটা একটু ধরবেন প্লিজ ?
আফসানা নিরবে মেঘের হাতটি ধরল ।
আর মেঘ হাসতে হাসতে বলল- . -"এ হাত ছুয়েছে আপুর হাত । এ হাতে কি আমি কোনো অপরাধ করতে পারি !" কিন্তু আমি যে বেচে থাকলে অন্যায় করবই ! তাই... .
আফসানা বুঝতে পারল এই তার ভাই মেঘ । ঝরঝর করে জল ঝরতে লাগল চোখ থেকে । ও বলল- . -মেঘ ! তুই আমার ভাই ! তুই আমার মেঘ ! ভাই ! আমার লক্ষী সোনা ভাই ।তোর কিছু হবেনা । তোর বোন আজ ডক্টর তো ! তোকে সুস্থ করে তুলব । . . এমনই কথা বলতে বলতে মেঘকে ডাকতে লাগল আফসানা । আর মেঘ ? ও তখন ঘুমিয়ে পড়েছে । মেঘ ওর আপুর হাতে হাত রেখেই চলে গেছে চিরনিদ্রায় ।
লেখক- অভ্রমেঘ