পাঠকই লেখক ডেস্ক : মধ্যবিত্ত সংসারে আমার জন্ম। বাবা ছিলেন পুলিশের অফিসার। আমি এবং আপুকে নিয়ে আমাদের ছিল সুখের সংসার। আমার বাবার চোখে আমাদের নিয়ে ছিল স্বপ্নের বেড়াজাল।
হঠাৎ এক ঝড় আমাদের সংসারে আসে সিডর এর মত। বাবা স্ট্রোক করেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের সংসার মুখ থুবড়ে পড়ে। এক সময় সম্পূর্ন নিঃস্ব হয়ে পড়ি আমরা। চিকিৎসায় এক সময় বাবা সুস্থ হন। কিন্তু বন্ধ হয়ে পড়ে আমাদের লেখাপড়া। ছোট বেলা থেকেই আমরা দুই ভাইবোন ছিলাম খুব মেধাবী। জীবনের কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হই নি কখনও। আপু ও আমি টিউশনির মাধ্যমে সংসারের হাল ধরি।
এভাবেই চলছিল আমাদের সংসার। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাবা আর নেই। পাথরের মত হয়ে গেলাম সেদিন। একটু ও কাঁদতে পারিনি সেদিন। কারন আমার কান্না আমার মা ও বোনের নির্ভরতা হারাবে। এক সময় সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর।
এই আকুল পাথার মুহূর্তে এগিয়ে আসেন ছোট মামা। দেখে শুনে আপুর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। আমাকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। সংসারের দায়িত্ব তুলে নেন তিনি।
ঢাকায় মামার বাসায় থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকি ক্যাডেট এ ভর্তির জন্য। আপু এইচ এস সি পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনায় ভর্তি হন। দুলাভাই ছিলেন নৌ-কর্মকর্তা। আপু থাকতেন রাজশাহী, দুলাভাই খুলনা আর আম্মু থাকতেন একা একা গ্রামের বাড়ীতে বাবার স্মৃতিকে আগলে রেখে।
ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলাম। ভর্তি হলাম ফৌজদারহাট ক্যাডেট এ। ক্যাডেট জগত অন্য রকম এক জগত। সীমাবদ্ধ নিয়ম-শৃঙ্খলায় অনব্যস্থ আমি নিজেকে ভাবতাম পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোন এক দ্বীপের বাসিন্দা।
সময় গড়িয়ে যায়। এক সময় এইচ এস সি পাশ করলাম। আমাদের সংসার তখন পুরোপুরি মামার উপর নির্ভরশীল। ক্যাডেট থেকে এক সময় বের হলাম। মাথায় চিন্তা সংসারের হাল ধরতে হবে। রেজাল্ট বের হল। খুবই ভাল রেজাল্ট করলাম। মামার সহযোগীতায় বিএমএ লং কোর্সে ( সামরিক অফিসার নির্বাচনী পরীক্ষা) পরীক্ষা দিলাম। সকল পরীক্ষায় উর্ত্তীন হলাম। যোগ দিলাম সামরিক প্রশিক্ষন কেন্দ্রে।
সামরিক প্রশিক্ষন কেন্দ্রে এসে পরিচয় হয় আরেফিনের সাথে। বন্ধুহীন আমার এই জীবনে আরেফিন আমাকে দিল অন্য এক জগতের সন্ধান। যে জগত আমার ছিল সর্ম্পূন আমার অচেনা এবং অজানা। আস্তে আস্তে আমার অনেক ভালো বন্ধু হয়ে উঠে ও। আরেফিনের সঙ্গ, অক্লান্ত পরিশ্রম, আনন্দ আর হাসি খুশিতেই কেটে গেল প্রশিক্ষনের দুই বছর।
প্রশিক্ষন শেষে কর্মজীবন শুরু করলাম কুমিল্লা সেনানীবাসে। চোখে মুখে অনেক স্বপ্ন। এবার বুঝি মায়ের দুঃখ কষ্টের দিন শেষ হবে।
আস্তে আস্তে আমাদের সংসারের অবস্থা ফিরতে শুরু হল। আপু পড়াশোনা শেষে খুলনা ফিরে আসেন। হঠাৎ এক সময় আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েন। টানা ২ বছর চিকিৎসায় আম্মু সুস্থ হন। আম্মুর অসুস্থতার সময়গুলো আপু সামলে নেন।
একবার ছুটিতে বাড়ীতে বেড়াতে যাই মাকে দেখতে। আম্মু আমাকে বিয়ের জন্য বলেন। আম্মুর অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। নিজের পছন্দের কেউ না থাকায় মাকে বলি মেয়ে দেখতে। মা নিজের পছন্দে মেয়ে ঠিক করেন। মায়ের পছন্দকে সম্মতি জানিয়ে রাজী হই বিয়েতে। এক সময় মোটামুটি আয়োজন করে পারিবারিক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পরের প্রেমে বিশ্বাসী আমি মাত্র ২৫ বছর বয়সে সংসার জীবন শুরু করি। স্ত্রী ফারজানা তাশফিয়া তখন এইচ এস সি পরীক্ষাথী। বিয়ের ২০ দিনের মাথায় আম্মু আমাদের ছেড়ে চলে যান এই পৃথিবী ছেড়ে। অনেক কেঁদে ছিলাম সেদিন। পুরোপুরি এতিম হয়ে পড়ি আমি।
বিয়ের ২ মাস পর ফারজানাকে নিয়ে আসি কর্মস্থলে। নতুন সংসার শুরু করলাম। বিয়ের পর থেকেই ফারজানার ব্যবহার আমার কাছে অন্য রকম লাগতো। দিন বদলের সাথে সাথে তার এই অদ্ভুত পরিবর্তন গুলো দেখে আমি অবাক হতে লাগলাম। আমাদের দূরত্ব গুলো লক্ষ্য করতাম। দূরত্ব কমানোর যত চেষ্টা করতাম দেখতাম দূরত্ব তত বাড়ছে। ফারজানার সব কাজে ছিল প্রচন্ড অনীহা। মনে হত অনীচ্ছায় বেচে আছে। ১০ টা প্রশ্ন করলে একটার উত্তর পেতাম। আবার কখনও ও কোন উত্তর দিত না। মাঝে মাঝে বাসায় রান্না করত না। অফিস থেকে বাসায় ফিরে নিজে রান্না করতাম।
ফারজানার কাছ থেকে কারন জানার অনেক চেষ্টা করে ও কখনও জানতে পারিনি। আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতো না। আলাদা বিছানায় ঘুমাতো। আমার কাছে থাকার চেয়ে বাবার বাসায় থাকতে বেশি পছন্দ করত। তার এই আচরনে আমি অনেক কষ্ট পেতাম। কিন্তু কখন ও তাকে কিছুই বলতাম না। আমার কষ্টের কথা কখনও তাকে বুঝতে ও দিতাম না। ফারজানার অমতে কিছুই করতাম না। ও কে সব সময় ওর মত থাকতে দিতাম। ওর ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতাম। ভাবতাম একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। অফিস থেকে বাসায় না ফিরে মার্কেটে গিয়ে তার পছন্দের খাবার, কাপড়-চোপড়, বিভিন্ন জিনিস কিনে আনতাম একটু ভালো ব্যবহার পাবার আশায়। ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসার কাঙ্গাল ছিলাম আমি। ফারজানার কাছে একটু ভালোবাসা আশা করতাম সব সময়। কিন্তু কখনও তা পেতাম না। পেতাম শুধু অবহেলা আর অবজ্ঞা।
এভাবে কেটে যায় আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম বছর। কখন ও কাউকে জানতে দিই নি। একসময় নিরুপায় হয়ে সক কিছু খুলে বললাম আরেফিন ও বড় আপু কে। পরামর্শ দিল বাচ্চা নিতে। বাচ্চা হলে নাকি মেয়েরা খুব দ্রুত বদলে যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম বাচ্চা নেবার। ফারজানাকে জানালাম আমার সিদ্ধান্তের কথা। বরাবরের সব বিষয়ের মত এ ব্যপারে ও সে নিশ্চুপ থাকে। এক সময় রাজী হয়।
কনসিভ করে ফারজানা। কনসিভের পর নিজেকে আরও বেশি ঘুটিয়ে নেয়। আগে যা একটু আধটু কথা হত এখন তা ও বন্ধ। দুজনে একই ছাদের নিচে বসবাস করে ও ছিলাম দু গ্রহের বাসিন্দা। এ অবস্থা দেখে আরেফিন পরামর্শ দেয় কোথায় ও বেড়াতে যেতে। বেড়াতে যাওয়ার কথা ফারজানাকে বলি। রাজী হয়। আরেফিন নেপাল সব যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। নেপাল যাওয়ার ফ্লাইটের দুই ঘন্টা আগে ফারজানা আমার সাথে বেড়াতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রচন্ড কষ্টে হতাশ হয়ে পড়ি।
প্রথমবারের মত আমার সাথে এমন ব্যবহারের কারন জিজ্ঞাসা করি। যথারীতি ফারজানা নিরুত্তর। এক সময় মেনে নিতে বাধ্য হই এই আচরন। ভাবি সবার কপালে হয়ত সুখ জোটে না। কখনও তার অমতে কিছুই করি নি। এবার ও তার ব্যাতিক্রম হল না।
ফারজানার প্রসব বেদনা শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি করি। ডাক্তার জানায় ফারজানার অবস্থা সংকটাপন্ন। আমাকে যে কোন একজন কে চাই কে হবে। হয় বাচ্চা অথবা ফারজানা। আমি ডাক্তারকে বলি আমার ফারজানাকে চাই। আবার চেষ্টা করলে বাচ্চা নিতে পারব, কিন্তু ফারজানাকে হারালে তো আর তাকে পাব না। আল্লাহর অশেষ কৃপা এবং ডাক্তারের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফারজানা বাচ্চা প্রসব করে। দুজন কেই সুস্থ ভাবে আমি ফিরে পেলাম।
আমার মেয়ে ফারহান শাহরিয়ার পৃথিবীতে এলো। সেদিন মেয়ের মুখ দেখে জীবনের সব কষ্ট, সব না পাওয়ার বেদনা ভুলে গেলাম। ফারজানার সকল ব্যবহার ভুলে গিয়ে মন থেকে ওকে ক্ষমা করে দিলাম।
ফারহানের বয়স আট দিন। স›ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি দরজায় তালা দেওয়া। ভিতর থেকে ফারহানের কান্নার শব্দ। আমার কাছে বাসার একটা আলাদা চাবি ছিল। দ্রুত তালা খুললাম। ফারহানকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্ট করি। বাসায় ফারজানার কোন অস্তিত্ব নেই। একটু অবাক হই। ফারহানের বালিশের কাছে ছোট একটা ভাঁজ করা কাগজ খুজে পাই। ফারজানার লেখা ছোট একটা চিঠি।
নিরব,
আমার এই চিঠিটা যখন তুমি পড়বে ততক্ষনে আমি তোমার কাছ থেকে কয়েক লক্ষ মাইল দূরে যাওয়ার সকল আয়োজন সর্ম্পূন করে ফেলেছি। আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি। তোমার স্ত্রী হবার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তোমার প্রতি রাগ, দুঃখ বা অভিমান থেকে আমার এই চলে যাওয়া নয়। আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি। তার সাথে আমার দীর্ঘ আট বছরের সর্ম্পক। সেই সর্ম্পকের টানেই আমি তার কাছে চলে যাচ্ছি। তুমি হয়ত ভাবছো এতদিন তোমাকে কেন বলিনি? কেন তোমাকে বিয়ে করেছি? আমি কেন তোমার সাথে এমন আচরন করেছি? বিশ্বাস কর এর কোন উত্তরই আমার জানা নেই। আমি নিজেই কনফিউজ ছিলাম।
তাছাড়া পারিবারিক সিদ্বান্তের বাহিরে আমার কিছু করার ক্ষমতা ছিল না। আমি তোমাকে এভাবে কথন ও কষ্ট দিতে চাই নি। কিন্তু এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। আর আমার দায়িত্ব নেবার মত যোগ্যতা এত দিন ওর ছিল না। এখন ওর যোগ্যতা হয়েছে বলেই এই চলে যাওয়া। হতে পারে আমি অনেক খারাপ তোমার দৃষ্টিতে। নিজের জন্ম দেয়া মেয়ের চেয়ে নিজের ভালোবাসাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তোমার কাছে আমার অনুরোধ আমার ফারহানকে জীবনে কখনও এটা জানতে দিও না তার মা নিজের ভালোবাসার জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তুমি অনেক ভালো একজন মানুষ। চিরকাল এমনটাই থেকো। ফারহানের খেয়াল রেখো।
--ফারজানা
চিঠিটা পড়ে আমার চারপাশের পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল। প্রচন্ড রাগ, দুঃখ, কষ্ট একাকার হয়ে গেল। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কাউকে কোন কিছু না জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। ছোট্ট ফারহানকে কোলে তুলে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম এই ছোট্ট মানুষটাকে পৃথিবীর সকল বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখব। কারও সাহায্য আমার প্রয়োজন নেই। আমি একাই এই মানুষটার জন্য যথেষ্ট।
৮ দিনের এই শিশুকে কি করে বড় করতে হয় সে শিক্ষা আমার ছিল না। অনেকেই চেয়েছিল দায়িত্ব নিতে। আমি আমার ফারহানের দায়িত্ব আর কাউকে দিতে রাজী হই নি। আফিস থেকে ৬ মাস ছুটি নিলাম। পৃথিবীতে ফারহান ছাড়া আমার আর কোন কিছু প্রয়োজন বা আর্কষন ছিল না। ডাক্তার আর মেয়ে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। মায়ের বুকের দুধ যে পায় নি তাকে বিকল্প ব্যবস্থা করে, সজাগ পাহারা দিয়ে হাত পা ছোঁড়ার আবস্থায় নিয়ে আসলাম।
ওর প্রতিটি ভাঁজ, প্রতিটি ভঙ্গি আস্তে আস্তে আমার এতটা পরিচিত হতে লাগল যে সেগুলোর সামান্য পরিবর্তন আমার বুঝতে অসুবিধা হত না। ওর শরীর থেকে যা বের হতো তা পরিষ্কার করতে আমার একটু ও দ্বিধা ছিল না। বেশি সমস্যায় পড়তাম আসুস্থ হলে। পেটের ব্যাথার কান্না আর অন্য কোন প্রয়োজনের কান্নার চিৎকার আলাদা করতে পারতাম না। আরেফিন ও ফারিয়া ( আরেফিনের স্ত্রী) আমাকে অনেক সাহায্য করে। প্রয়োজনে তাদের দুজনকেই পাশে পেয়েছি সব সময়।
৬ মাস ছুটি শেষ হলে ফারিয়ার কাছে রেখে অফিসে যেতে শুরু করলাম। মন মানত না। কাজে মন বসত না। ছুটি ম্যানেজ করে বাসায় চলে আসতাম।
এক সময় উপুড় হতে শিখল। চিনল আমার গলা। আওয়াজ পেলে মাথা ঘুরিয়ে আমাকে খুজতে শিখল। গলায় স্বর এলো। আদো আধো স্বরে বাবা ডাকতে শিখল। মেয়ে দাঁড়াতে শিখল। পা ফেলল। হাটি হাটি পা পা করে হাটতে শিখল। আমি আদর করলে আমাকে পাল্টা আদর করতে শিখল। আমি আফিসে যাওয়ার সময় কান্না করতে শিখল। আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে শিখল। আমি অফিসে যাবার জন্য তৈরী হলেই পুতুল খেলার বায়না ধরতে শিখল। আমার সমস্ত অস্তিত্বে যেমন ফারহান ঠিক তেমনি তার জন্য আমি।
সময় গড়িয়ে যায়। আস্তে আস্তে আমার মেয়ে বড় হতে লাগল। আদো আদো করে পড়তে শিখল। গল্পের বই পড়ে না শোনালে ঘুমাতে যেত না। প্রতিদিন তার নতুন নতুন গল্পের বই চাই। এক সময় স্কুলে যাবার বয়স হলো। প্রথম যে দিন আমার ফারহান স্কুলে যায় সেদিন স্কুল থেকে ফিরে জীবনে প্রথমবারের মত তার মায়ের কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করল। অনেক কষ্টে চোখের কোনে একফোঁটা পানি জমেছিল। চোখের পানি দেখে মেয়ে কি বুঝেছিল তা কখন ও বুঝতে পারিনি আমি।
কিন্তু তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমার মেয়ে আর কখন ও আমার কাছে জানতে চায় নি তার মায়ের কথা। যে আমি ভাবতাম ফারহানের জন্য আমিই যথেষ্ট সেদিনই প্রথম ফারহানের জন্য ফারজানার অভাববোধ করলাম। ফারহানকে জীবনে কখনও ওর মায়ের অভাব বোধ করতে দিই নি। আমি নিজে ও কখনও ফারজানার অভাব বোধ করিনি। মেয়ে কে শিখিয়েছিলাম আমিই ওর মা বাবা দুটোই।
প্রথম দিকে মাঝে মাঝে ফারজানা ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করত। মেয়ের খবর জানতে চাইত। আস্তে আস্তে তার পরিমান কমতে থাকে। দুই সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই আছে।
আস্তে আস্তে প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরুলো। হাইস্কুল, কলেজের গন্ডি পেরুল অনায়াসে। মেয়েটা চোখের উপর দিয়ে বড় হয়ে গেল।
এখন আমি ওর সবটাই জানি। প্রকৃতি ওর শরীরের যে পরিবর্তন এনেছে তা আমার জানার কথা নয়। কিন্তু এখনও ওর পিঠে ফোঁড়া হলে আমাকে জামা সরিয়ে দেখাতে সংকোচ বোধ করে না। আমি ওকে আমার মত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ঠিক যেমন আমি চাই। আমার সমস্ত ইচ্ছা, ভালোলাগা, পূর্ণতা ওর মধ্যে। আমার সমস্ত স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন ফারহানের মধ্যে।
জীবনের সময়গুলো কত দ্রুতই মেয়েকে নিয়ে কেটে গেল। নিজের জন্য ভাববার সময়ই পেলাম না। আপু, দুলাভাই, আরেফিন অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে আবার বিয়ে করাতে। আমি তা পারি নি। আমার জন্য সেটা কখনও সম্ভব ছিল না।
এক সময় ফারহান হয়ত বা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে। একাকী হয়ে পড়ব হয়ত আমি। সেই একাকী নিঃসঙ্গ জীবন নিয়ে এখন আর ভয় পাই না। কোন না কোন ভাবে কেটে যাবে, যে ভাবে গত বছর গুলো কেটেছে।
লেখক : মোস্তাফিছ মামুন