“ভালবাসার কাউয়া যখন মনের ডাস্টবিনে”
পাঠকই লেখক ডেস্ক : -আম্মা... তুমি আর কাল থেকে আমাকে ডাকতে আসবানা।
-ক্যান রে, কি হলো আবার?
-প্রত্যেকদিন সকালে চোখ খুলেই তোমাকে দেখি, আমার পুরা দিনটাই মাটি হয়ে যায়, না মাটি না একদম বালি, যে বালিতে বাকিটা দিন আর কোন ফসল জন্মায় না, পুরাই কুফা তুমি।
-এহহ নিজে কি আসছিস? আমারও তো প্রত্যেকদিন তোকেই দেখতে হয়, তারপর সারাদিন খেটে মরতে হয়। গত ২৫ বছর ধরে একই দৃশ্য, কে কুফা তাহলে?
-ওরে বাবা, ২৫ বছর ধরে কি শুধু আমাকেই দেখো নাকি? আব্বার সুন্দর চেহারাটা দেখো না? আব্বার উপর এত দরদ ক্যান তোমার? যতই অস্বীকার করনা কেন আমি শিওর তোমরা প্রেম করেই বিয়া করছো।
-ইফতি মাইর খাবি কিন্তু। অসভ্য ছেলে নিজে যেন প্রেম করতে পারিস এইজন্যই বারবার এই কথা বলিস সেটা কি আমি বুঝিনা ভাবছিস?
-আম্মা... জীবনে কত্ত প্রেম আসলো আর গেলো, ইচ্ছা করলেই করতে পারতাম, কিন্তু তোমার আর আব্বার ঢঙ্গের ভালবাসা দেখলে গা জ্বলে তাই করি নাই।
-হইছে এখন চুপ কর। আর তোর দিনটা কে বালি বানাইলো সেটা বল।
-আরে আর বোলনা, নাহিদের মেসে গেছলাম, ওখান থেকে ফেরার সময় দেখি রাস্তায় এক মেয়ে উশটা খেয়ে স্যান্ডেল ছিঁড়ে ফেলছে। মুখটা দেখে মনে হলো এখনি কেঁদে ফেলবে। দেখে মায়া লাগলো তাই আগ বাড়ায় গিয়ে বললাম
-এখানে আসেপাশে কোন মুচির দোকান পাবেন না, আর মার্কেটও নাই যে নতুন স্যান্ডেল কিনবেন, তারচে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় ফিরে যান। মুহূর্তেই সেই মেয়ের কান্নামাখা চোখ দুইটা ডাইনি ড্রাকুলার মতো আগুনে জ্বলজ্বল করে উঠলো। আমি ভাবলাম চোখে বুঝি কোন সমস্যা, তাই বললাম আপনার কি চোখ জ্বালা করছে? এখানে অবশ্য ১ মাইলের ভেতর কোন আই স্পেশালিষ্ট পাবেন না।
আম্মা মেয়েটাকে দেখে ভাবছিলাম না জানি কত্ত কোকিলকণ্ঠী হবে কিন্তু বিশ্বাস করো আম্মা, যেই না সে মুখ খুলছে আর ওমনি আমার আফসোস হইল যে ক্যান আমি বয়রা হইলাম না? ভাগ্যিস ওইখানে কোন কাউয়া ছিলো না, তাইলে সাথে সাথে গলায় দড়ি দিত দুঃখে।
-এত ঢং না করে আসল কথা বলিস না কেনো?
-আসল কথাই তো বলতেছি, কথার মধ্যে ট্রাক চালাও ক্যান? চুপ থাকতে পারো না? আব্বা যখন কথা বলে তখন তো মনে হয় বোবা হয়ে যাও।
-আবার শুরু করলি? আমি গেলাম কিন্তু রান্না ঘরে...।
-আরে দাঁড়াও না, বলতেছি তো, ওই মেয়ে যখন কথা শুরু করলো আমি খালি টাশকি খেয়ে হা করে ওর ঠোঁট দুইটার দিকে তাকায় ছিলাম, মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সব বিষাক্ত সাপের বিষ ওই ঠোঁট দুইটা দিয়া বের হইতেছে। সে কি বলে জানো আম্মা? বলে- আই স্পেশালিষ্ট নাই তো কি হইছে? আপনার চোখ দুইটা আছে না ওই দুইটা তুলে নিবো, আপনার চোখে নিশ্চয়ই কোন সমস্যা নাই? মেয়েমানুষ দেখলে আর মাথা ঠিক থাকেনা তাই না? নিজেকে কি হাজী মোহাম্মাদ মুহসীন ভাবেন? দরদ একেবারে উতলায় উতলায় পড়তেছে না? আমি আপনাকে দরদ দেখাইতে বলছি? দরদ বেশি হয়ে গেলে বোতলে ভরে রাখেন, মিনারেল ওয়াটার এর মতো মিনারেল দরদ বিক্রি করেন। রাস্তাঘাটে ফ্রি ফ্রি দরদ বিলাচ্ছেন কেনো? আর কোনদিন যদি আলগা দরদ দেখি একেবারে দরদের সাগরে ডুবায় মারবো। আম্মা আমার মুখের হা এর সাইজ আরও বাড়তেই থাকলো এইসব শুনে। সে তখন বলে- এত বড় হা করে কি দেখতেছেন? জীবনেও কি মেয়ে মানুষ দেখেন নাই? আমার ছেঁড়া স্যান্ডেলটা ওই মুখের ভেতর ঢুকায় দিবো কিন্তু? -আমি কোনরকমে মেজাজ সামলে বললাম-আস্তে কথা বলেন, কাউয়ারা টের পেলে আপনাকে কাউয়া সমাজের সর্দারনী বানানোর জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল ডাকবে। তাহলে দেশের কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন? ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে যাবে, আর ছোট ছোট শিশুরাও কাক ডাকে কা কা এই শিক্ষণীয় বাণী হতে বঞ্চিত হবে।
-আম্মা বিষমুখিটা তখন বলে- একটা থাপ্পর দিয়ে সবগুলা দাঁত ফালায় দিবো, মশকরা করার আর জায়গা পান না? ফুটেন এখান থেকে। এই কথা শুনে আমি ওই মেয়েকে হুংকার দিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বলছি- আমার কি হাত নাই নাকি? আর জন্মের পর কি আপনাকে গোখড়া সাপের বিষ নিমপাতার সাথে মিশায় খাওয়াইছিলো? কিন্তু আম্মা বিশ্বাস করো কয়েক সেকেন্ড পর আবিস্কার করলাম আমার মুখ দিয়ে কোন আওয়াজই বের হয়নি। আর সেই মেয়ে এই সুযোগে আরও কয়েকটা বিষাক্ত ছোবল মেরে আমার সামনে দিয়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল হাতে নিয়ে চলে গেলো।
-নিশ্চয়ই তুই মুখ ট্যাঁরা করে কথা বলছিস? ভাল কথা বললেও তো মনে হয় যেন খোঁচা মারিস। খুব ভাল হইছে। মেয়েটাকে পেলে একটু আদর করে দিতাম। -আম্মা মেজাজটা আর খারাপ করে দিও না। সবকিছুতো তোমার জন্যই হইছে। কাল থেকে মুখে কাপড় দিয়ে আমাকে ডাকবা সকালে। -হ্যাঁ হ্যাঁ নিজেই ঘুম থেকে উঠিস, উঠেই আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চেহারাটা দেখিস। তারপর দেখবো কেমন ভাল দিন যায় তোর। কত্ত বড় শয়তান ছেলে...নিজের মাকে বলে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে...
উফ, দুনিয়ার সব মেয়ে মানুষই কি পেট নামের ভাঙা রেডিও সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসে? সারাক্ষণ খালি বাজতেই থাকে। আল্লাহ্ মাফ করো, এমন দিন যেন আর না আসে আমার জীবনে।
২ পরের দিন সকাল...
-ইফতি... ওঠ বলতেছি, বাজারে যাবি এখখন।
-আম্মা খবরদার রুমে আসবা না, আমি উঠতেছি।
-আর কত ঢং যে দেখবো এই ছেলের?
-দুই হাতে মুখ ঢেকে বাথরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। নাহ্ চেহারা সুরত মাশাল্লাহ ভালই পাইছি। রাজপুত্র না বললেও অনায়াসে মন্ত্রীপুত্র হওয়ার যোগ্যতা রাখি।
হাতমুখ ধুয়ে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে নাস্তা করতে গেলাম, আজ নিজের চেহারা দেখছি আগে, কোন চিন্তা নাই। আজ আমার জীবনটা উর্বর আর উর্বর... যে বীজই লাগাবো তাতেই ফসল ফলবে। মুচকি হেসে খেতে বসছি, মুখে মাত্র পরোটা ছিঁড়ে দিতে যাবো তক্ষুনি কলিং বেল এর শব্দে কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো।
-ইফতি... দরজা খুলে দে, চুলায় রান্না আমি যেতে পারবো না।
-এই সাত সকালেও শান্তি নাই, কে যে মরতে আসছে। ধড়াম করে দরজা খুললাম, অ্যাই কে? ওহ্ আল্লাহ্ এইটা কি? আমি কি এখনও সেই দুঃস্বপ্নটা দেখতেছি? এই বিষমুখিটা স্বপ্নে আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে আসছে? অ্যাই বিষমুখী কাউয়া...এইখানে কি? আমার বাড়িকে কি ডাস্টবিন মনে হয়? যাহ্ এখান থেকে, নাহলে কিন্তু ডানা কেটে দিবো? ঠাস করে দরজা লাগিয়ে আবার খেতে বসলাম।
-কিরে ইফতি এখনও দরজা খুলিস না কেনো? এত অলস কেন তুই? -কি আশ্চর্য! আমার সাথে সাথে কি আম্মারও হেলুসিনেশন হচ্ছে নাকি? আম্মাও দেখি বারবার বেল বাজার শব্দ শুনতে পায়। আবার দরজা খুলে দেখি বিষমুখীটা দাঁড়ায় আছে, কি যে যন্ত্রণায় পড়ছি, কালকের পর থেকে খালি ধান্দাই দেখতেছি। এবার ভাল মতো ঝাড়ি দিতে হবে যাতে আর আমার চোখের সামনে ওর মুখ দেখতে না পাই। মুখ চোখ বেকায় যেই না গালি শুরু করবো পুরাই আহাম্মক বনে গেলাম...
-এই খবিশ... অসভ্য বেয়াদব কোথাকার... মানুষের সাথে কেমন ব্যাবহার করতে হয় জানা নাই? এইরকম একটা অসামাজিক জীবকে যে কি করে এই বাড়িতে কাজ করতে রাখা হইছে আল্লাহ্ই জানে! খালাকে বলে আজই চাকরি ছুটাবো তোমার। সরো এখান থেকে। এই বলেই ডাইনীটা আমাকে একরকম ধাক্কা দিয়েই ভেতরে ঢুকে গেলো। আর আমি? আমার হা করে থাকা মুখটা দুই হাতে ধরে জোর করে বন্ধ করতে করতে ডাইনীটার পেছন পেছন রান্নাঘরে গেলাম। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার অনেক কষ্টে বন্ধ করা মুখটা আরও প্রশস্ত হয়ে গেলো। বিষমুখীটাকে আম্মা জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খাচ্ছে, আর বিষমুখীটার মুখ দিয়ে বিষের বদলে মধু ঝড়তেছে, কত্ত আহ্লাদ। আল্লাহ্ এই দিন দেখার আগে আমাকে তুলে নিলানা ক্যান? আর সহ্য করতে পারলাম না এইসব নাটক, সোজা নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। দরজা লাগালে কি হবে? বিরতিহীন নাটকের সংলাপ তো চলতেই আছে, মানুষ এত্ত ঢং করতে পারে এই মেয়েকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। দরজা ভেদ করে আমার ঘরে যে বিষ ঢুকলো তাতে এইটুকুই বুঝলাম যে এই বিষমুখীটার নাম মিলি,আম্মার ছোটবেলার বান্ধবীর মেয়ে, অনার্স পাস করে বাসায় বসে আছে। নিজের বাড়ির সবার জীবনটা ডাস্টবিন বানিয়ে ক্ষান্ত নয় সে, এখন আসছে এই বাড়িতে আমার ছোট ভাই ইমনকে পড়াতে। ইমন পড়ে ক্লাস এইট এ। আমি ওর বড় ভাই হওয়ার সুবাদে ওকে অনেকবার পড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ওর মোটা মাথায় পড়া ঢুকানোর সামর্থ্য আল্লাহ্ আমাকে দেন নাই, পড়াতে বসলেই আমার হাতের চড় থাপ্পর খেয়ে আব্বার কাছে নালিশ দেয় ও। নিজের ঘরে খুব ভাব নিয়ে অপেক্ষা করতেছিলাম যে বিষমুখীটা কখন আমাকে সরি বলতে আসবে আর আমি দুই একটা ঝাড়ি দিবো শান্তি করে। কিন্তু না...কার কাছে কি আশা করি আমি? ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের এই বেয়াদব মেয়ে আমার বাড়িতে আমাকেই কাজের ছেলে বলেও একটাবারের জন্যেও আমার সাথে কথা বলতে আসেনি। হায় রে...কাল থেকে ঘুম থেকে উঠে আব্বার চেহারাটা দেখতে হবে। আম্মার সাথে সাথে আমার চেহারাও আমার পোড়া কপালের কাছে ফেল মারলো আজকে।
৩ আমার জীবনটা এখন বালি থেকে ছাই এ পরিনত হইছে। নিজের বাড়িতে আমি এখন মেহমান এর মতো থাকি। মিলি নামের ওই ডাইনীটা তাবিজ করে আম্মা আব্বা আর ইমন কে পটায় ফেলছে। প্রত্যেকদিন বাড়িতে আসে আর সারা বাড়ি মাথায় তুলে নর্তকীর মতো নাচতে থাকে। আর সুযোগ পেলেই আমার গায়ে গুই সাপের মতো বিষ ছিটায়। গত এক মাসে যত ঘণ্টা ও এই বাড়িতে কাটাইছে আমার আয়ু তার থেকে ১০গুন কমছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় গুম করে ফেলি এই মেয়েকে। একবার গুম করলে র্যাব এরও সাধ্য নাই ওরে খুঁজে বের করে, আজ পর্যন্ত ইলিয়াস আঙ্কেল কেই খুঁজে বের করতে পারলো না আর ওর মতো একটা পেইন কে ইচ্ছা করেই খুঁজবে না। কিন্তু ওর ঠোঁট দুইটাকে আমি যমের মতো ভয় পাই।তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করি যেন ওর সামনে পরতে না হয়। যতই দূরে থাকতে চাইনা কেনো এই মেয়ের সামনে আমাকে পড়তেই হয়। সেদিন সন্ধ্যা করে বাড়ি ফিরলাম এই ভেবে যে এতক্ষণে নিশ্চয়ই কাকের সর্দারনী বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই ওর চেহারা দেখতে হলো। আমাকে দেখেই চোখে মুখে এমন একটা ভাব ধরলো যেন আমি একটা ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল। কিছু না বলে চুপচাপ নিজের ঘরে যাচ্ছিলাম তখনই এই কাউয়া মানবী স্বভাবসুলভ কা কা করে ডেকে উঠলো। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ইমনকে বললো- আসছে এই বাড়ির আবদুল, বলেই দাঁত বের করে হাসতে শুরু করলো। মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হলো যখন দেখলাম ইমনও ওই ডাইনীটার সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে শুরু করছে। ঘুরে গিয়ে বললাম- ইমন... কতদিন যেন মাইর খাসনি আমার হাতে? যেই ছেলে আমার এই কথা শুনে ভয়ে আম্মা নয়ত আব্বার কাছে দৌড় দিতো সে কিনা আরও জোরে জোরে হাসতে লাগলো। রাগে দুঃখে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করতেছিলো ওই সময়। নাহ এভাবে আর সম্ভব না, এই মেয়েকে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে হবে। এমন শিক্ষা যেন আর কোনদিন এই বাড়িতে না আসে। কিন্তু কোন বুদ্ধিই মাথায় আসেনা। এই ভেবে ভেবে আরও একটা মাস চলে গেলো। ঘুমাচ্ছিলাম বিকেলে, আম্মার চিল্লাচিল্লির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, গিয়ে দেখি বিষমুখীটা কাঁদতেছে আর আম্মা ঝাড়ি দিয়ে কার যেন চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতেছে। ঘটনা যা বুঝলাম তা হলো পাড়ার কোন এক বখাটে এই বিষমুখীকে কি যেন বলছে তাই সে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্নাকাটি করতেছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না, শুরু হয়ে গেলাম আমি।
-আম্মা একটু জিজ্ঞেস করোতো ওনাকে ছেলেটার নাম জানে কিনা?
-হ্যাঁ রে ইফতি ছেলেটাকে খুব করে বকে দিস তো, আর কোনদিন যেন মিলিকে কিছু বলার সাহস না পায়। কি নাম রে মা ছেলেটার? -নাম তো জানি না খালা।
-আরেহ নাম জানেন না তো কি হইছে? আমি ঠিক খুঁজে বের করবো ওনাকে। কালকের মধ্যেই ওনাকে সালাম করে তারপর ভাল একটা রেস্টুরেন্ট এ কিছু খাওয়াবো। আমি যেই কাজ দুইমাসে করতে পারিনি তা উনি এক দিনেই করে ফেলেছেন। উনার পায়ের ধুলো না নিলে আমার জীবনটাই বৃথা।
-আমার কথা শুনে বিষমুখীটা বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছুটে বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে। আমিও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ওর এই কীর্তিতে। ভেবেছিলাম আমার কথা শুনে কোমড়ে ওড়না পেঁচিয়ে ঝগড়া করবে আমার সাথে কিন্তু...। এরপর আম্মার বিশাল বিশাল ঝাড়ি খেতে হলো আমাকে।
৪
আজ ৫দিন হলো মিলি আসেনা ইমনকে পড়াতে। আমার যেখানে খুশিতে লাফানো উচিত ছিলো সেখানে আমি ওকে মাথা থেকেই বের করতে পারছিনা। সারাটাক্ষণ শুধু ওর জলে ভেজা চোখের সেই অবাক দৃষ্টিমাখা মুখটা চোখের সামনে ভাসছে। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে সবকিছুই। কোন কিছুতেই মন বসাতে পারিনা। গত ৫ টা দিন আমিও বাড়ি থেকে বের হইনি, বারবার মনে হইছে বাইরে গেলেই যদি মিলি আসে, ওর সাথে যদি দেখা না হয়? এরকম অনুভূতির সাথে পরিচিত নই আমি। রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনা, ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলে ঘুম থেকে জেগে আর শ্বাস নিতে পারিনা, ভয়ংকর একটা কষ্ট হয়। শুধু মনে হয় একবার যদি ওর মুখে আবদুল ডাকটা শুনতে পেতাম, একটাবার যদি আমাকে দেখে বাকা করা রাগী রাগী মুখটা দেখতে পেতাম...। আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে এই মেয়েকে ছাড়া আমার চলবে না, আমি কিচ্ছু জানি না কিচ্ছু বুঝি না, শুধু এইটুকু জানি এই মেয়েকেই আমার সারাজীবনের জন্য পাশে চাই। আম্মার কাছে ঠিকানা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে, ওকে আমার এক্ষুনি দেখা চাই, কি বলবো তাও জানি না তবুও ওর কাছে এক্ষুনি যেতে হবে আমার। কলিং বেল টেপার সাথেই হার্ট বিট বেড়ে গেছে, এই মেয়েকে দেখলে না জানি কি হবে?
-আপনি? আপনি ক্যান আসছেন? ওই মাস্তানটাকে কি কি খাওয়াইছেন তা বলতে আসছেন? নাকি ওকে খাওয়ানোর টাকা আমার কাছ থেকে নিতে আসছেন? আপনার মতো অসভ্য মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। আপনার কি একটুও লজ্জা শরম নাই? এইরকম বিশ্রী করে হাসতেছেন কেনো? আপনি কি জানেন হাসলে আপনাকে একদম আবদুল এর মতো লাগে?
-আমি আরও জোরে হেসে বললাম, আবার বলো না প্লিজ। মেয়ে দেখি আমার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো- কি বলবো? আমি বললাম ওই যে আমাকে কিসের মতো যেন লাগে?
-আবদুল এর মতো লাগে বুঝলেন? আপনি এত বেহায়া কেনো? এখনও হাসতেছেন কি করে?
-ইয়া আল্লাহ্ এই মেয়ে এত কথা বলে কেনো? শোনো কাউয়া মানবী এখন কা কা করা বন্ধ করে আমার কথা শোনো।
-কি বললেন? আমি কাউয়া মানবী? আপনি কি? আপনি তো একটা... -অ্যাই চুপ কর...বলেই ওর মুখ চেপে ধরতে এগিয়ে গেলাম আর সে এক লাফে পেছনে পিছিয়ে গেলো চোখ বড় করে। -শোনো মেয়ে, আমি যাই হইনা কেনো প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি তোমাকে আমার পাশে চাই। সারাদিন রাত তোমার কা কা ধ্বনি শুনতে চাই। আমার মনের ডাস্টবিনের যত ময়লা আছে আজ থেকে সব পরিস্কার করার দায়িত্ব তোমার। আর পাড়ার কোন বখাটে তোমাকে কি বলে না বলে তার দায়িত্ব আমার। আজ থেকে তোমাকে ভাবি ছাড়া আর কিছুই বলবে না বুঝেছো? তুমি কি এখন আমার সাথে ওই বাড়িতে যাবা?
চোখ খুলে দেখি মেয়ের চেহারা বাঘিনীর মতো হিংস্র হয়ে আছে। নির্ঘাত একটা থাপ্পর মেরে বসবে, ভয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ওর হাতে থাপ্পর খাওয়ার দৃশ্য আমি দেখতে পারবো না। কিন্তু একি! হাসির শব্দ আসে কেনো? চোখ মেলে দেখি বিষমুখীটা খিলখিল করে হাসছে। ইস মানুষের হাসি এত্ত সুন্দরও হয়? ওর হাসি দেখে আমিও দাঁত বের করলাম কিন্তু...
-অ্যাই খবরদার হাসবেন না, কথায় কথায় এইরকম ক্যালানো একদম পছন্দ করিনা আমি। আর হ্যাঁ, আর যদি কোনদিন ভুলেও কোন মেয়ের দিকে তাকাতে দেখি চোখ তুলে নিয়ে ফরমালিনে ডুবিয়ে রাখবো বলে দিলাম। আর কোনদিন আমাকে কাউয়া বললে কাউয়ার মতো ঠোকর মেরে মাথার সব চুল ছিঁড়ে নেবো। এখন ১০ মিনিট বসে থাকেন, আমি রেডি হয়ে আসছি।
-আল্লাহ্ এইটা কি জিনিস? নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলাম? কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো কুড়ালের কোপ খাওয়াতেও যে এত সুখ থাকতে পারে আগে বুঝিনি। বুঝলে তো এতদিনে হাজার বার কোপ খেতাম............।।
লেখক : হাবিবা বৃষ্টি