রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৩:২৯

আমাদের গল্প

আমাদের গল্প

পাঠকই লেখক ডেস্ক : আজ খুব পোলাও খেতে ইচ্ছে করছে। পাশের বাসায় মাংস রান্না হচ্ছে, আমি শুয়ে শুয়ে গন্ধ পাচ্ছি। পেট এর ভেতর খুদায় চোঁ চোঁ করছে। আজ ভাত রান্না হয় নি। চাল বাড়ন্ত। সকালে অল্প ভাত রান্না হয়েছিল। দুপুরের পরে কাজে যেতে হবে।

শরীরটা মোটেও ভাল লাগছে না। গত দু’দিন ধরে জ্বর জ্বর লাগছে। আজ কাজেও যেতে মন টানছে না। কিন্তু কাজে না গেলে তো খাবার জুটবে না।

কিছু চিড়া আর সামান্য গুড় খেয়ে কাজে উঠে গেল শামীম। ঘরে খাবার নেই, তার ছোট ছেলেটা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। বড়টা আগে কান্না করত।

-এই খালি যাবা?
-কই যাইবেন?
-সংসদ ভবন।
-হ যামু....
রিকশায় উঠল এক জোড়া কপত কপতী। সাধারণত এদেরকে রিকশায় তুললে ভাড়া নিয়ে দামাদামি করতে হয় না। যদিও অনেক রিকশাওয়ালা বলে এদের রিকশায় তুললে নাকি ধর্ম থাকে না। কিন্ত শামীম ওসব বিশ্বাস করে না। পেটই শামীমের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্ম। রিকশায় উঠেই ওরা হুড তুলে দিয়েছে। মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে হাসি, আবার মাঝে মাঝে হটাৎ করে কেমন সব চুপ হয়ে যাচ্ছে। শামীম এসব এর কিছু বোঝে না। বুঝতেও চায় না।

রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চলে গেল ওরা। মাথাটা বড্ড ঘুরছে। সূর্যটাকে যেন আজরাইল এর মত লাগছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, কিভাবে তার জন্ম হল? কে এসব নিয়ন্ত্রণ করে? একটা সুযোগ থাকলে তাকে বলত, হয় এইভাবে এরকম কষ্টের মাঝে কাউকে জন্ম দিবা না। আর না হলে যাদের জন্ম দিবে তাদের যেন বেশি দিন বেচে থাকতে না হয় দুনিয়ায়।

একটা গাছের নিচে বসে বিড়ি ধরাল শামীম। বিড়ি খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়ল রিকশা নিয়ে। বড় বড় দালানগুলো দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে যাত্রীর খোঁজে এগোতে লাগল। এরকম একটা বড় দালান করতে কত টাকা লাগে? হিসেবও সে জানে না ঠিক মত। ইচ্ছে ছিল বড় ছেলে টাকে পড়াশোনা করাবে। ৪ ক্লাস পর্যন্ত পড়াতে পেরেছে। তারপর টাকার অভাবে আর হয়ে ওঠে নি।

- এই মতিঝিল যাইবি?
-হ যামু।
লোকটা সেই ওঠার পর থেকে ফোনে কথা বলা শুরু করেছে। কী যেন মাঝে মাঝে ইংরাজিতে বলছে। শামীম ওসব এর কিছু বোঝে না। তবে যাই করুক, তার সাথে অনেক টাকা জড়িত আছে। রিকশায় ওঠার সময় লোকটার হাতে একটা কী যেন দেখেছিল শামীম। কালো রংয়ের বোতলে। নিশ্চয় খুব ঠাণ্ডা হবে। হঠাৎ শামীমের খুব পিপাসা পেয়ে গেল। এক সাইডে রিকশাটা দাঁড় করিয়ে ট্যাপের নিচে হাত দিয়ে আঁজলা ভর্তি পানি পান করল সে।

- এই ব্যটা আহাম্মক এর বাচ্চা, এখনই মরা লাগল তোর?
-খুব পিয়াস পাইসিল সাব।
- তাড়াতাড়ি আয় বেটা, সারারাত লাগাবি এইটুক যাইতে?
এটা শুধু আজকের ব্যাপার না। নিত্য দিনের ব্যাপার। তাই শামীমের এখন আর কিছু মনে হয় না।

ভাড়াটা নিয়ে চলে আসল আজকের মত। আর শরীরে কুলাচ্ছে না। বাসায় এসেই শুয়ে পড়ল শামীম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তার। হঠাৎ ঘুমের ঘোরে চলে গেল শামীম। দুটো কাজের মানুষ এসে তার জুতো খুলে দিল, স্ত্রীর নির্দেশে, মাথায় জল ঢেলে দিল। মাথা টিপে দিতে লাগল তার স্ত্রী। ৫ বোতল ৭ঁঢ় চলে আসল তার জন্য। তার ব্যরিস্টার ছেলে তাকে দেখতে এসেছে ছেলের সব কাজ ফেলে। বাসায় পোলাও রান্না হচ্ছে তার জন্য, ছোট ছেলেটা ডাকছে, ‘বাবা, বাবা, ও বাবা’ ঘুম ভেঙে গেল ছোট ছেলের ডাকে।

এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল। এ স্বপ্ন শুধু তার স্বপ্ন নয়, দেশের ১ কোটি রিকশাওয়ালার স্বপ্ন এটা।

লেখক- সাদমান সাকিব
 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে