পাঠকই লেখক ডেস্ক : আমার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, ছোট ভাই-বোনদের প্রায়ই সবাই আফসোস করে বলতে দেখি, "ইসসসস আমার কেন যে একটা বোন নেই।" আমি তখন শিউরে উঠে বলি, বোন নাই ভাল আছিস। খুব সুখে আছিস। আমার অবস্থা দেখলে জীবনে আফসোস করা তো দূরে থাক। বরং চিৎকার দিয়ে বলতি, ইয়াহুউউউউউউউ বাঁইচা গেছি আমার কোন বোন নাই।
এই কথা বললে ওরা আমার দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকায়। যেন আমি রাস্তার মোড়ে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছি এবং ট্রাফিক কন্ট্রোল করছি। একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে, নিরুপায় এইসব কথা বলে সেটা ওরা জানেনা বলেই হয়ত চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিংবা ভাবে যার যেটা আছে সে সেটার মূল্য বোঝে না।
কয়েকটা ঘটনা বলি তাহলেই বুঝবেন আমি কতটা অসহায় জীবনযাপন করছি। ধরুন একটা নতুন বডি স্প্রে কিনে আনলাম। অবশ্যই মেইল (মেয়েদের ব্যবহার করার কোন উপায় নেই)। কিন্তু কিসের কি? বডি স্প্রে গায়ে মাখতে না পারলে কি হবে এটা যেহেতু আমার জিনিস সেহেতু এইটা যে কোন ভাবে শেষ করা ফরজ।
বডি স্প্রেকে আমার দুই বোন এয়ার ফ্রেশনার হিসেবে ইউজ করে। রুমে মারে আর বলে বাহ ঘ্রানটা তো খুব মিষ্টি। বড় বোন ছোট বোনের হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে বাথরুমেও মেরে আসে। এসে বলে, বাথরুমে মিষ্টি একটা গন্ধ না থাকলে কেন যেন ভালোই লাগেনা। এই গেল বডি স্প্রে এর কাহিনী।
এক ফ্রেন্ড একটা শ্যাম্পু গিফট করেছে মাসখানেক আগে এটাও ফর মেইল। একদিন গোসল করতে গিয়ে দেখি শ্যাম্পু তলানীতে। আমি মাত্র দুইদিন ব্যবহার করেছি। গোসল শেষ করে বের হয়ে বোনদের জিজ্ঞেস করলাম, শ্যাম্পুর এই অবস্থা ক্যান? বড় বোন বলে, আমার শ্যাম্পু শেষ হয়ে গেছিল তাই ইউজ করা শুরু করলাম। ছোট বোন সাইড থেকে বলে, আপু দেয় তাই আমিও দেই। আপু, দেখো দেখো শ্যাম্পুটা দেয়ার পর আমার চুল আরো সিল্কি হয়ে গেছে।
বড় বোন বলে, হুউউ আমারো চুল পড়া কমে গেছে আগের থেকে। আমি কোন রকমে রাগ সহ্য করে বললাম, এইটা তো ছেলেদের। বড় বোন বলল, এইসব ফাও কথা। শ্যাম্পু শ্যাম্পুই এইটার আবার মেইল ফিমেল কিরে? আগে তো এক শ্যাম্পুই বাসার সবাই ইউজ করত। আমি আর যুক্তি তর্কে না পেরে বিদায় নিলাম।
গরমের দিন বাসায় ঢুকার সময় এক বোতল কোক নিয়ে ঢুকলাম তৃষনা মেটাবো বলে। বাইরে থেকে যেহেতু এসেছি সেহেতু কোকের বোতল টেবিলের উপর রেখে প্রথমে ওয়াশরুমে গেলাম। এসে দেখি কোক তো দূরে থাক বোতলের অস্তিত্ব বলতেও কিছু নাই। বোনদের গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমার কোক কই? বোন বলল, খাইয়া ফালাইছি। আহহ মনে হচ্ছে হৃদয়টা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তুই যা আরেকটা কিন্না নিয়া আয় সবাই মিলে খাই।
গত পড়শু রাতে আমি ফেসবুকিং করতেছি। হঠাৎ করে রুমে ছোট বোন। বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে আছে। দেখেই বুঝলাম মতলব খারাপ। এসে সুন্দরমত আমার টেবিলের উপর থেকে আফটার শেভ নিয়ে চলে যাচ্ছে। পিছন থেকে ওকে ডাক দিলাম এইটা নিয়া কই যাস? এইটা তো শেভ করার পর দেয়। বোন বলল, তোমার তো বডি স্প্রে শেষ। বারান্দা দিয়ে কিসের যেন গন্ধ আসতেছে। আপু বলছে এইটা মারতে। এইটা মারলে বাজে গন্ধ নাকে যাবে না। মাঝে মাঝে আমি খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকি এই বুঝি আমার রুমটাও দখল হয়ে গেল। পরে জানতে পারলাম, আমার রুম একটু বদ্ধ। এরজন্য গরম বেশি তাই এই রুমটা আমাকে দেয়া হয়েছে। নাহলে এইটা ওরাই ব্যবহার করত।
গতকাল গভীর রাতে ছোটবোন এসে বলল, ভাইয়া তোমার কি খিদা লাগছে? ভাবতেছি নুডলস রান্না করব। খাবা? আমি তো খুশিতে আতœহারা। মনে মনে ডিসিশন নিয়ে ফেললাম ওর অতীতের সব ভুল ক্ষমা করে দিব। বললাম নিয়ে আয় খাই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যাবার সময় ছোট বোন বলল, আহহ বাঁচলাম। আমি বললাম কি হয়েছে? বোন বলল, অনেক খিদা লাগছিল। আমি যদি নুডলসে হাত দেই আর আম্মু যদি সকালে টের পায় তাহলে হাতের ডাড্ডি ভেঙ্গে দিবে। তোমার কথা বললে কিছু বলবে না। আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলব, ভাইয়ার খিদা লাগছিল তাই রান্না করলাম। আমার কোনো দোষ নাই। মনের দুঃখে বললাম যা ভাগ। আমার চোখের সামনেও আসবিনা আর কোনদিন। এইরকম আরো হাজারটা ঘটনা আছে। বলে শেষ করা যাবেনা।
তারপরও কেউ যদি আফসোস করে আমাকে বলে, ইসসস আমার যদি একটা বোন থাকত। তাহলে আমি অবশ্যই বলব, আহারে তোর অনেক দুঃখ বুঝি আমি। এক কাজ কর আমার বোন দুইটারে নিয়া যা। তবে... তবে... তবে... ভুলেও এক সপ্তাহ পর এসে বলিস না, ছাইড়া দে বইন কাইন্দা বাঁচি...
লেখক- Hasan Mahmud Tushar
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি