পাঠকই লেখক ডেস্ক : দীর্ঘদিন বাসায় যাওয়া হয় না। আব্বু-আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছিল। মেস এ সেই ছয় মাস আগে যে এসেছি, তখন থেকে আর যাওয়া হয়নি।
ইদানিং প্রায় বাসার কথা মনে পড়ছে। আব্বু-আম্মু আর আদরের ছোট্ট বোনটাকে দেখার খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। সামনে পরীক্ষা। এই মুহুর্তে বাসায় যাওয়াও সম্ভব না। অথচ পরিবারের সবার কথা প্রচন্ডভাবে মনে পড়ছে।
তাই গতকাল সন্ধ্যায় মন খারাপ করে রুমে বসেছিলাম। পড়তেও ইচ্ছে করছিল না। এমন সময় আব্বু আমার নাম্বারে কল দিল। আমি কল রিসিভ করে সালাম দিলাম। তারপর কিছুক্ষন কথা হল ভালমন্দ নিয়ে। আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা, কোন কিছু লাগবে কিনা সব জানতে চাইল আব্বু। আমি বললাম, "কোন সমস্যা নেই। আমার কিছুই লাগবে না।"
এরপরও আব্বু বলল, "কালকে তোর নাম্বারে দুই হাজার টাকা বিকাশ করে দিচ্ছি। তুলে নিস। তুই তো আবার এরকমই। সমস্যা হলেও বলবি না। কিছুদিন পর আরো টাকা পাঠিয়ে দিব।"
আমি বললাম, "আচ্ছা, ঠিক আছে আব্বু। আমি কালকে টাকাটা তুলে নিবো।"
তারপর, আব্বু বলল তোর আম্মু তোর সাথে কথা বলবে। তোর আম্মুকে ফোনটা দিচ্ছি। নে কথা বল। এরপর, আম্মু ফোন ধরল। আম্মুর সাথেও কথা হল অনেক্ষন। আম্মু শুধু বারবার একই প্রশ্ন করছিলেন, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? খাওয়া দাওয়া কেমন হচ্ছে? খেতে পারছি কিনা? এসব প্রশ্ন।
আমি খেয়াল করলাম আম্মুর কন্ঠটা একটু পরিবর্তন লাগছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
--"আম্মু তোমার কন্ঠটা চেঞ্জ লাগছে কেন? কোন সমস্যা নাকি? তুমি কি অসুস্থ?"
--নারে বোকা। আমি একদমই ঠিক আছি। এই জাস্ট ঠান্ডা লেগেছে আর কি! সেরে যাবে। তুই ঠিক আছিস তো? সাস্থ কেমন আছে? মোটা হয়েছিস নাকি আরো পাতলা হয়ে গেছিস? ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া করিস বাবা। বাইরে থাকলে একটু কষ্ট করাই লাগবে।
--ঠিক আছে আম্মু। আমি একদম ঠিক আছি। খাওয়া-দাওয়াও করছি ঠিকমত। তুমি একদম চিন্তা করো না।
--আচ্ছা বাবা। ভাল থাকিস। রাখি।
--ঠিক আছে আম্মু। রাখি বাই।
ফোনটা রাখতে যাবো এমন সময় আম্মু বলল,
--মাহিন শোন, একটা কথা।
--হ্যা বলো আম্মু।
--কালকে তোর আব্বুর টাকাটার সাথে আমি আরো এক হাজার টাকা দিয়ে দিবো। এগুলো দিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে ভাল কিছু খাবি।
আমি মনে মনে হাসলাম। ভাবলাম, এই বুঝি আম্মুর মন। দুনিয়ার সকল আব্বু-আম্মুরাই বুঝি এরকমই হয়। আমি "আচ্ছা, ঠিক আছে আম্মু" বলে লাইনটা কেটে দিলাম।
কিছুক্ষন পর, আম্মুর নাম্বার থেকে একটা মিসকল আসলো। আমি বুঝতে পারলাম, এটা আমার ছোট বোনের কাজ। আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলেই ও আব্বু-কিংবা আম্মুর নাম্বার থেকে মিসকল দেয়। আমি কল ব্যাক দিলাম। কিছুক্ষন কথা বললাম।
হঠাৎ মনে পড়লো আম্মুর কথা। তখন কন্ঠটা কেমন যেন লাগছিল। তাই ছোট বোনকে জিজ্ঞাসা করলাম আম্মুর কী হয়েছে। সে বলল,
--ভাইয়া, আম্মু তো বেশ কয়েকদিন থেকেই খুব অসুস্থ। সর্দি, কাশি, জ্বর ছাড়াও এখন আবার জন্ডিসের সমস্যা।
--কিন্তু আমাকে যে বলল, আম্মু নাকি ঠিক আছে।
আমার ছোট বোনটা বিজ্ঞের মত জবাব দিলো,
--দুনিয়ার কোন মা কি চায় তার সন্তানকে টেনশন দিতে। আম্মুর অসুস্থতার কথা শুনলে তুই টেনশন করবি তাই তোকে কিছুই বলেনি।
আমি বুঝতে পারলাম সবকিছুই। চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল আমার অজান্তেই। মনে মনে ভাবলাম, "হায়রে অভাগা আম্মু, সন্তানের সুখের জন্য তুমি কত কিছুই না কর। নিজের সমস্ত কষ্ট লুকিয়ে রেখে সন্তানকে সুখি রাখতে চাও। এই জন্যই দুনিয়ার সকল সন্তান অনেক ভালবাসে তোমায়। আমিও অনেক ভালবাসি আম্মু তোমায়। আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিও। তোমার মহানুভবতা ছাড়া সমস্ত সন্তানের ইহকাল পরকাল যে অচল।"
লেখক: Jeffy Mahin.
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি