পাঠকই লেখক ডেস্ক: বেশ কিছুক্ষণ হলো রহমান সাহেব মারা গেছেন। চারপাশে কান্নার রোল পড়েছে। কারা যেন তাঁকে গোসল করিয়ে মৃত্যুর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছেন। একটু পরে জানাজার নামাজ হবে, কালিমা পড়ে কফিন বহন করবে একদল লোক। শবযাত্রা শেষে কবরে শুইয়ে দেয়া হবে তাঁকে। এই কবর হবে নিজের ঘর, এই ঘর নিয়ে রহমান সাহেব তার ভাইবোনদের সাথে আর কখনো ঝগড়া করবেন না। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কাজের লোকের বেতন দেয়ার চিন্তাও থাকবে না।
রহমান সাহেব সবকিছুই দেখছেন, চিৎকার করে কথা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। যে রহমান সাহেবের কথায় উঠবস করেছেন এলাকার প্রতিটি মানুষ, আজ নিজেকেই অসহায় দেখাচ্ছে তাঁদের সামনে। একা একা কাঁদছেন আর নিঃশ্বাস নিচ্ছেন জোড়ে জোড়ে অথচ কেউ এ বিষয়টি দেখছে না।
অতীত পাপকর্ম গুলি এক এক করে চোখের সামনে নিমিষেই ভেসে উঠছে, মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন আরেকটিবার সুযোগ দেয়ার জন্য, এ জনমে আর পাপকর্ম করবেন না। নামাজ রোযা আর কখনো বাদ যাবে না বলে ওয়াদাও করছেন। দোজখের আগুনের কথা বারবার মাথায় ঘুরাফেরা করছে, মৃত্যুকে ঠেকাতেই হবে যে এবার।
সময় শেষ হয়ে এসেছে, রহমান সাহেবকে দাফন করাতে হবে এখন, কালিমা পড়ে সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর হস্তান্তর করা হবে। রহমান সাহেব না চাইলেও এ ঘরে থাকতে হবে, রহমান সাহেবের খুব ইচ্ছে করছে বেঁচে থাকার জন্য। মরণ কামড় দিয়ে বলছেন, আমাকে এই অন্ধকার ঘরে রেখে যেও না প্লিজ, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচতে দাও......!
ঘুম ভেঙে গেছে রহমান সাহেবের, চিন্তা করছেন কি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছেন তিনি। এক গ্লাস পানি সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা শান্তি প্রদান করছে। হাত মুখ ধুয়ে ঘর থেকে বের হলেন, চেয়ে দেখলেন সব কিছু আগের মতোই আছে। তাহলে এ যাত্রায় সত্যিই বেঁচে গেলেন। নিজের কোম্পানির আরেকটি প্রপার্টি প্রজেক্টের মিটিং আজ, আবারো অবৈধ জায়গায় গড়ে উঠবে প্রপার্টি।
ঘণ্টাখানেক যেতে না যেতেই দুঃস্বপ্নের সবকিছু আবার হারিয়ে যেতে শুরু হলো, রহমান সাহেব ফিরে এলেন তাঁর পুরনো জীবনে, ঘুড়ি হয়ে আকাশে উড়ছেন আবার, অথচ ভুলে যান সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরেই সেই সুতোর নাটাই, একদিন সত্যি সত্যিই সেই সুতোয় টান পড়বে। মৃত্যুর মাঝে বেঁচে থাকা।
লেখক: আরাফাত তানিম
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি