পাঠকই লেখক ডেস্ক : রিয়ামের আজ এঙ্গেইজমেন্ট। বিয়ে সম্পর্কিত ব্যাপারে অনেকেই টেনশনে থাকে। কিন্তু ওর প্রাণবন্ত হাসি কখনো মলিন হতে আমি দেখি নি। দেখে খুবই ভাল লাগছে। কখনো ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারি না ওর এই হাসির জন্যই। মেয়েটা ঠিক ত্রিশ বছর আগের আমার মতই। ত্রিশ বছর আগে আমিও সারাক্ষণ হাসি-খুশি থাকতাম।
তখন ফেসবুক আর স্কাইপ-এর মত সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তরুণ প্রজন্ম বেশি ব্যবহার করত। এখনকার যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা আমার মাথায় ধরে না। কয়েকবার আমার একমাত্র মেয়ে রিয়ামের কাছ থেকে শিখেছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি। অবশ্য ভুলে যাওয়ার অভ্যাসটা অনেক আগে থেকেই ছিল, এখন একটু বেশীমাত্রায় হয় আর কি।
আমি ফেসবুকের নিয়মিত ইউসার ছিলাম। কেউ একটা মেসেজ অথবা পোস্টে কমেন্ট করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রিপ্লাই দিতাম। পরিবারের সবার ছোট বিধায় কোন কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতাম। তখন প্রথম কম্পিউটার কিনে দিয়েছিল ভাইয়া।
বিদেশে থাকতাম বলে বাংলাদেশের যে কারো সাথেই কথা বলতে পছন্দ করতাম। একদিন আমাদেরই গ্রামের একটা ছেলেকে ফেসবুকে পেয়ে রিকুয়েস্ট পাঠালাম। বাংলাদেশে থাকতে কখনো কথা হয় নি।
কয়েকদিনের মধ্যেই সে আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়। সারাক্ষণ দুজন দুজনের খোঁজ নিতাম।
বন্ধুত্বের পরের পর্যায়ে যা হয় আমারো তাই হলো। তার সাথে কোন কথা না বললে ভালো লাগতো না।
স্কাইপেও মাঝে মাঝে কথা হত আমাদের। আমিতো সবসময়ই হাসতাম। সেই হাসি দেখে বলত; তুমি হাসলে তোমাকে খুব কিউট লাগে, সারাজীবন তোমার হাসি ধরে রেখো। যদিও অফিসিয়ালি কেউ কাওকে প্রপোজ করি নি, দুজনই জানতাম ভালবাসার কথা। এভাবেই কেঁটে যাচ্ছিল সময়।
একদিন ওর ফেসবুক একাউন্ট লক হয়ে যাওয়ায় আমিই ওকে নতুন ইমেইল আর ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিলাম।
ওকে দেখলাম একদিনের মধ্যেই ১০০ এর উপরে ফ্রেন্ড করে ফেলল। আমি অপরিচিতদের ফ্রেন্ড করতে তেমন পছন্দ করতাম না।
কয়েকদিন পর আমাকে বলল ওর ইমেইল চেক করে দিতে কারণ ও ফোন দিয়ে ইজিলি একসেস করতে পারে না। আমি কয়েকবার না করার পরেও ওর রিকুয়েস্টে চেক করতে গেলাম।
দেখলাম সবই ফেসবুকের নটিফিকেশন আর মেসেজ। একটা লোকের মেসেজ আমার চোখে পরল, সেখানে ওই লোক থ্রেট দিল একটা মেয়ের ব্যাপারে। ঐ মেয়েরও কিছু মেসেজ দেখলাম। দেখে স্পস্ট বুঝতে পারলাম যে ওরা দুজনই দুজনকে ভালবাসে এবং ডাইরেক্টলি সেটা বলছে মেসেজ এ।
ও হয় আমাকে ঠকাচ্ছে, নাহয় ঐ মেয়েটাকে ঠকাচ্ছে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। কিন্তু কিছুদিন পরেই ও আমাকে প্রপোজ করে। এরকম দুমুখী সাপের সাথে সারাজীবন কাটানো তো দূরের কথা, আমি শুধুমাত্র বন্ধুও হতে পারব না।
প্রথমে আমি কষ্ট পেতাম, তবে আস্তে আস্তে কষ্টটা ভুলে যেতে পেরেছি। জানি না আমারটা সত্যি ভালবাসা ছিল কিনা, তবে এরপর থেকে কখনো হাসতে পারি নি। না হাসাটাই আমার অভ্যাসে পরিণত হল।
বিদেশে লেখাপড়া শেষে বাংলাদেশেই সেটেল হলাম। পশ্চিমা সংস্কৃতি আমার জন্য নয়।
আমার মেয়ের হাসি দেখে অনেক হাসতে ইচ্ছা করছে। এখন থেকে চেষ্টা করবো হাসার জন্য...
লেখিকা : দিলরুবা আহমেদ পরী।
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি