পাঠকই লেখক : গত পরশুদিন আমার আম্মুর মোবাইলটা বাসা থেকেই চুরি গিয়েছিল। সেই মোবাইল আবার আজ সকালে নিজে এসে ফেরত দিয়ে গেছে। মোবাইল নেয়ার এবং ফেরত দেবার কাহিনীটা মজার বলবো না হতাশার কি বলবো বুঝতে পারছি না।
আমার আম্মু স্কুলের ছেলে মেয়েদের ড্রয়ইং শিখান। ক্লাশ সেভেনের ছয়টা মেয়ের একটা ব্যাচ আছে, তাদের একজন আম্মুর কাছে মোবাইল চাইলো বাসায় কথা বলার জন্য। তারা চলে যাওয়ার পর দেখা গেলো মোবাইলও নাই! আম্মু মোটামুটি নিশ্চিত হলেন, তাদের কেউ একজনই নিয়েছে মোবাইলটা।
আম্মুর নাম্বারে কল দেয়া হলো। আশ্চর্য ব্যাপার- রিং হলো, এমনকি রিসিভ করে কেটেও দেয়া হলো একবার। আমার মেঝ ভাই ঘোষণা দিল, "নিশ্চয়ই এই মেয়ে তার বয় ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলটা নিসে।"
মেয়েটা মাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ে...জানেও না ঠিক মত মোবাইল নিয়ে অফ করে রাখতে হয় বা সিমটা ফেলে দিতে হয়...বেচারির হয়তো নিজের কোনো সিমও নাই... শুধু জানে, যে ভাবেই হোক একটা মোবাইল যোগার করতে হবে...'তার' সাথে কথা বলতে হবে। হায়রে ভালোবাসা - অকালপক্ব ভালোবাসা।
যাই হোক, আম্মু কাল গিয়ে সিমটা তুলে নিয়ে ফোনে ঢুকাতেই এক আননৌন নাম্বার থেকে ফোন... সেই "বয় ফ্রেন্ডের" ফোন। আম্মু বেশ কিছুক্ষন হু হা করে ঐ মেয়ে সেজে কথা বললেন এবং মেয়ের নাম, বয়ফ্রেন্ডের নাম সব যোগার করলন। ছেলের নাম্বারও সেভ করে রাখা হলো।
এবার মোবাইল উদ্ধার পর্ব... আম্মু প্রথমে ঐ মেয়েটার আম্মুর নাম্বারে ফোন দিয়ে মেয়েটাকে চাইলেন। মেয়েটার সাথে আম্মুর কথা হলো এইরকমঃ
“শুনো। তুমি কাল চুপচাপ মোবাইলটা আমাকে দিয়ে যাবা। তোমার “অমুকের” সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি সব জানি। মোবাইল দিয়ে গেলে তোমার গার্জিয়ানকে কিছু জানাবো না, বুঝতে পেরেছো?”
মেয়েটা বুঝতে পারলো। আজ সকালে সে ফোনটা ফেরত দিয়ে গেছে। ছোটখাট কালো মত মেয়েটা। কোন কথা বলেনি, চুপচাপ আম্মুর কথা গুলো শুনে চলে গেছে মেয়েটা।
ক্লাস সেভেনে পড়া একটা মেয়েকে কেন ম্যাডামের ফোন চুরি করে প্রেম করতে হবে? কে শিখাচ্ছে এই সব আমাদের নেক্সট জেনারেশনকে? আমরাই, নিজের অজান্তেই হয়তো! মাত্রই কৈশরে উত্তীর্ন হওয়া একটা ছেলে বা মেয়েকে পাশে নিয়ে আমরা যখন প্রেমের নাটক-সিনেমা দেখছি বা হাতে তুলে দিচ্ছি প্রেমের উপন্যাস, কি নিচ্ছে বা শিখছে তারা সেসব থেকে, তার খোঁজ কেউ রাখে না।
লেখক : মোঃ আসিফ উর রহমান
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি