পাঠকই লেখক : আমাদের এলাকার এক বড় আপুর হাজব্যান্ড মারা গেছে । ছোট একটা বাচ্চা আছে আপুর।
গল্পটা অনেক দিন আগের তখন আমি সবেমাত্র ক্লাস টেনে পড়ি।
আপু যখন মাস্টার্সের ছাত্রী তখন ওনার হাজব্যান্ড লিভারের কি একটা অসুখে মারা যান। আপু তার হাজব্যান্ডকে খুব ভালোবাসতেন। তাকে বহু বার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো উনার পরিবার। কিন্তু তার একটিই কথা তিনি তার জীবনে আরাফাতের স্থানে আর কাউকে বসাতে পারবেন না । আরাফাতের ছেলেকে মানুষ হিসাবে তৈরী করাই এখন তার প্রধান কাজ।
আপুর হ্যাজবেন্ডের নাম আরাফাত।
আপু থাকতেন তার শ্বশুর বাড়িতে। হাজব্যান্ড আরাফাতের বাবার থেকে বরাদ্দ পাওয়া দুইটি ঘরে। তার যখন বিয়ে হয় তখন শ্বশুড় এ দুটি ঘর এবং একটি বাথরুম এবং রান্নাঘর তৈরী করে দেন। বিশাল বারান্দার মাঝে প্রাচির দিয়ে অন্য পাশের ফ্লাটটা দেন আলামিনকে। উনি আপুর ভাসুর হন।
একদিন গুজব উঠলো আপুর চরিত্র ভালো না। পড়ার নাম করে আপু কলেজে গিয়ে কার সাথে কি করে সহ আরও বহু ক্লেম।
এলাকায় এতো ছি ছি কথা ওঠে যে আপু আর ঐ বাড়ি থাকেন নি, নিজের বাপের বাড়ি চলে যান ছোট ছেলেকে নিয়ে।
বর্তমানে আপু হাই স্কুলের টিচার এবং তার ছেলেটাও বেশ বড় হয়েছে আপু যথারীতি এখনো বিধবাই আছেন।
আপুর কাছে আসল কথা শুনলাম আসলে কি এমন ঘটেছিলোঃ
আপুর ভাসুরটা ছিলেন আস্ত হারামী টাইপের মানুষ। তিনি আর তার বউ চেয়েছিলেন ফ্লাটটি দখল করতে। তারা ভেবেছিলেন আরাফাতের বউ এখনো ইয়াং মেয়ে। তার তো বিয়ে হবেই এবং সে চলে যাবে। দুই রুমের ফ্লাটটা ভাড়া দিয়ে খাওয়া যাবে। কিন্তু আরাফাতের বউ আর কাউকে বিয়ে করবে না এবং সে যথারীতি বাসা দখল করে বসবাস করছে এটা দেখে তার আর সহ্য হচ্ছিলো না।
কি আর করা তার নামে তিনি গুজব সৃষ্টি করে এ কাজ করেছেন। বাট আপু অনেক শক্ত ধাচেঁর মানুষ । তিনি নিজের আত্নসম্মান বাঁচানো এবং তার স্বামীর রেখে যাওয়া ছেলেকে সুস্থ ও নিরাপদে মানুষ করার জন্য বাপের বাড়ি চলে গেছেন । এবং দিব্যি চাকরী করে নিজের পায়ে নিজেই দাড়িয়েছেন । তার ভাই কিংবা বাবার টাকায় তাকে চলতে হয় না । এবং শ্বশুড়ের দেওয়া বাসাটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন ।
আল্লাহর বিচারঃ একজন মেয়ের নামে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে কলংক দিয়েছিলো ওনার ভাসুর। আর ওনার মেয়ে প্রেম করে প্রেগন্যান্ট তার পর তো এলাকায় এই কাহিনী নিয়ে কত কানা ঘুষা।
যে ভালো থাকে আল্লাহ তার সহায় থাকেন। এলাকার লোক এত দিন পর হলেও বলা বলি করে। আরাফাতের বউটারে কলঙ্ক দিছিলো না এই ব্যাটা? দশ বারো বছর পর হলেও বিচার আল্লাহ দেখায়া দিছেন।
আপুকে আমার অনেক ভালো লাগে। কি ভাবে এত ঝড় ঝাপ্টা উপেক্ষা করে মৃত স্বামীর ভালোবাসা বুকে আগলে রেখে বেঁচে আছেন তিনি।
মাঝে মাঝে মনে হয় এরাই আসল মানুষ। যুদ্ধ করে কি ভাবে বাঁচতে হয় তা আপুকে দেখলে শেখা যায়। মন চায় আপুর জুতার ধুলা গায়ে মাখি।
আপুর ছেলেটা খুব লম্বা হয়েছে। আরাফাত ভাইয়ের গঠন পেয়েছে ছেলেটা। মাঝে মাঝে মনে হয় আরাফাত দুলাভাইয়ের ফটোকপি ছেলেটা।
এই পোষ্টটা অফিসে বসে লিখছি। এমনি এমনি চোখে পানি বের হয়ে গেলো। আসলে এত ভালো মানুষদের কাজ কারবার দেখলে আবেগ ঠেকিয়ে রাখা যায় না। সুখের কান্না আসে।
আরাফাত ভাই কি একটা বউ পেয়েছেন।
আর আমরাও পাব নি?
লেখক : Farhad F H Farhad
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস