পাঠকই লেখক ডেস্ক : আমি বসে আছি নির্ধারিত জায়গায় । ঠিক এমন সময় মেয়েটা আমার সামনে এল। বেগুনী রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । মেয়েটির মুখে একটু হাসি লেগে আছে । বলবো না মেয়েটি অনেক সুন্দর । তবে প্রথম দেখাতে যা কারো ভাল লাগবে । মেয়েটি চুল বেশ লম্বা আর ঘন সাথে মেয়েটি চোখ জুড়ে এক আশ্চার্য গভীরতা ছিল। বিষন্নতার গভীরতা !
মেয়েটি আমার সামনে এসে হাজির হল ।
-নীরা ?
-হুম । বসবো ?
-আরে তুমি আমাকে দাওয়াত দিয়ে আনিয়েছ ? অনুমুতি তো আমার নেওয়া উচিৎ ।
-হাহাহাহাহা
এভাবে দিন এগুতে লাগলো ।আমরা অনেক কথা বলতে শুরু করলাম। নীরা ওর পুরানো দিনের
কষ্টের কথা গুলো বলতো আমি শুনতাম। আমি আমার কথা বলতাম । ও শুনতো । দিন ভাল যাচ্ছিল একদিন
নীরা হঠাৎ অদ্ভুদ একটা কথা বলল।
-শুনো ?
-হুম।
-চল নিজেদের রিলেশনশীপ স্টাটাস বদলে ফেলি।
-কি দেবো তাহলে ?
-কদিন তোমার গার্লফ্রেন্ড হতে ইচ্ছে করছে । মিথ্যে মিথ্যি বানাবা আমাকে তোমার
গার্লফ্রেন্ড ।
-হ্যা - কেন নয় ?
আমার কাছে ফেসবুকটা কোন কালেই খুব বেশি সিরিয়াস কিছু ছিল না। কি বা যায় আসে তাতে। দিন ভালই
কাটতে লাগলো । এভাবেই দিন কাটছিল। ভালই কাটছিল।
দুই
-হ্যালো !
-কে বলছেন ?
-আবির বলছো ?
গম্ভীর গলায় কোন লোকের কন্ঠ !
কে হতে পারে ?
আমি বললাম
-হ্যা ! কে ?
-আমি নীরার বাবা ।
আমি বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম। নীরার বাবা ! আমার কাছে কি ?
খাইছে রে ...।
ওনার মেয়ের সাথে আমার রিলেশনশীপ দেখছে নিশ্চই কিছু মনে করছে । এবার আমাকে ঝাড়ি দিবে । আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
-তোমার সাথে কি দেখা করা যাবে ?
খুব ইচ্ছা হল যে বলি যাবে না । আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই
না । কেন দেখা করবো ? ঝাড়ি খাওয়ার জন্য ? মোটেই না।
বললাম -জি , কেন যাবে না ? বলেন কোথায় আসতে হবে ?
-তোমাকে কোথাও আসতে হবে না ।
তুমি তোমার বাসার ঠিকানা বল আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি।
-জি !! একটু ইতস্তত করতে করতে বাসার ঠিকানা দিলাম। কালো রংয়ের পাজেরো গাড়িটা যখন আমার সামনে এসে দাড়ালো আমার বিশ্ময় খানা আরও একটু বাড়লো ! তারপর যখন নিরার বাবার অফিসে হাজির হলাম মনে মনে বললাম এ কোথায় এসে হাজির হলাম ! মাই গড !! কোন দিন তো মনে হয় নীরাদের অবস্থা এমন হাইফাই ! অবশ্য এটা নিয়ে কোন দিন কথাও হয় নি। ভদ্রলোক আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলেন কিছুটা সময় ধরে। মনে হল যেন আমাকে পেদানী দিতে কি পরিমান বেত লাগবে সেই হিসাব যেন করতে লাগলো। খাইছে রে ! দৌড় মারবো ?
নীরার বাবা বলল -তুমি আসাতে খুব খুশি হয়েছি।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম। কি বলবো কিংবা কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না ।
নীরার বাবা বলল-দেখো মেয়ের ফেসবুক প্রোফাইলে উকি মারা কোন বাবার পক্ষে ভাল কথা না ! কিন্তু তুমি নিশ্চই জানো আমার মেয়েটা এর আগে দু’দুবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। আমি জানি ব্যাপারটা। নীরা নিজেই আমাকে বলেছে। ওর যখন প্রথমবার ব্রেকআপ হয় তখন নীরা খুব বেশি আপসেট হয়ে পড়ে।
নীরার বাবা বলল -জানো তো ! আমি খুবই সরি, তুমি নীরা কে আমাদের এই মিটিংয়ের কথা বলবে না প্লিজ।
-আচ্ছা ! সমস্যা নেই !
-প্লিজ বলবে না । ও তাহলে খুব বেশি রাগ করবে ।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নীরা বাবা বলল -তুমি ওকে ছেড়ে যাবে না তো বাবা ?
নীরা সাথে আমার সম্পর্কটা যে আসল নয় এই কথাটা আমি নীরার বাবাকে বলতে পারলাম না।
উনি যখন বললেন আমার মেয়েটা কে ছেড়ে যাবে না তো বাবা, ওনার কন্ঠে কিছু একটা ছিল ! আমি কিছুতেই বলতে পারলাম না যে আপনার মেয়ের সাথে আমার কিছুই নেই। আমরা দুজনেই এমনি টাইমপাস করছি।
-দেখো, এর আগের বারের শক ও অনেক কষ্টে সহ্য করেছে। এবার পারবে কি না আমি জানি না । তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দেবো, কেবল এবার আমার মেয়েটাকে ছেড়ে যেও না ।
ভদ্রলোক আমার হাত ধরে এমন ভাবে অনুরোধ করতে লাগলো আমি সত্যি সত্যই লজ্জায় পড়ে গেলাম। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । কথা দিলাম যে নীরাকে কে ছেড়ে যাবো না । অদ্ভুদ এক অনুভুতু হতে লাগলো ।
তিন
সব থেকে বড় ঘটনা টা ঘটলো আরও একমাস পরে। বাড়ি থেকে বাবার জরুরী ফোন পেয়ে বাসায় হাজির হলাম। বাসায় গেট দিয়ে ঢুকতে আরেকবার ধাক্কা গেলাম। উঠানে বাবার সাথে নীরার বাবা বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে ! দুজনের হাতে চায়ের কাপ । আমার দিক তাকিয়ে দুজনেই খানিকটা হেসে উঠলো ।
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে । এই লোক কেন এখানে ? ঘরের ভিতর ঢুকে দেখি আমার ছোট বোন আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে ! আমার নিজের ঘরে গিয়ে দেখি আমার খাটের উপর নীরা বসে আছে !
আমাকে দেখে বলল -বাহ ! আমাকে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ না দিলেও পারতে !
-সার প্রাইজ !
-বারে ! আমাকে সত্যি সত্যি পছন্দ কর এটা আমাকে বললেই পারতে ! আমার বাবাকে বলতে হবে তাই বলে ? তার উপর আজকে বাবার সাথে পরামর্শ করে এখানে নিজেদের বাসায় আমাকে নিয়ে এসেছ ? আর এখন নিলুর কাছে শুনলাম আজ
নাকি আমাদের বিয়ে হবে ?
-বি….।
পুরো শব্দটা আমার মুখ দিয়ে বেরও হল না ! খাইছে ! কি হইতাছে !
সব নীরার বাবার কাজ । আমার মুখের কথা ঠিক তার বিশ্বাস হয় নি । একেবারে আমার বাবাকে পর্যন্ত পটিয়ে ফেলেছে । কোন প্রকার রিস্ক নেয় নি । নীরা কেও নিশ্চই ওভাবে বলা হয়েছে । সত্যি সত্যি রাতের মধ্যে নীরা সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল ।আমি কিছু বলতে পারলাম না । বলতে পারলাম ইহা ঐ ভদ্রলোকের ষড়যন্ত্র । আমি এখন বিয়ে করতে চাই না ...... চাই না….আমাকে কেউ বাঁচাও !
লেখক : ছন্নছাড়া বেনজামিন আবির।
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস