পাঠকই লেখক ডেস্ক : লোকাল বাসে জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সুমন। তার মন অনেক ভালো। আজকে আরেকটা মেয়েকে ছেঁকা দিতে পেরেছে। এই নিয়ে ১১ জন হল। মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে কয়েকদিন পর তাকে ছেঁকা দেয়ার মাঝে পৈশাচিক আনন্দ খুজে পায় সে।
কিন্তু আজ থেকে ৫ বছর আগেও সে এমন ছিল না। একটা মেয়েকে অনেক বেশী ভালোবাসতো সে। তাকে নিয়ে পুরোটা জীবন থাকার স্বপ্ন দেখেছিল সে। কিন্তু মেয়েটি তার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সেই থেকে মেয়েদের প্রতি তার অনেক ঘৃণা।
রিতু ফোন হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদছে আর বারবার সুমনের নাম্বারে ডায়াল করছে। প্রায় আশিবার ডায়াল করার পর সুমন ফোন ধরল।
-প্লীজ সুমন, প্লীজ, তুমি এমন কর না। হাউমাউ করে কেঁদে বলল রিতু।
-আমি কেমন করছি? অবাক হওয়ার ভান করলো সুমন।
-ফোন ধরছ না আমার।
-তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। আমি কেন তোমার ফোন ধরবো?
-প্লীজ, একটু বুঝার চেষ্টা কর। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।
-আমার কিছু করার নেই। ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল সুমন।
-তাহলে অন্তত একবার আমার সাথে দেখা কর। শেষবারের মত। আর কোনদিন কোন অনুরোধ করব না।
-ঠিক আছে। কালকে বিকালে দেখা করব। কিন্তু মনে রেখ এটাই শেষ।
ফোন রেখে দিল সুমন।
পরদিন রাত ৮ টা : সারাদিন ক্লাসের পর বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল সুমন। ক্লাসের এক ফাঁকে রিতুর সাথে দেখা করে এসেছে। একদিনেই যেন মেয়েটার বয়স ১০ বছর বেরে গেছে। সারারাত কেঁদেছে বুঝাই যাচ্ছিল। সুমনের হাতে একটা প্যাকেট দেয় রিতু।
-প্যাকেটের ভিতর কি আছে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেশ করে সুমন।
-রাতে খুলে দেইখো। বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে রিতু।
প্যাকেটটার কথা মনে হতেই হাত বাড়িয়ে ব্যাগের চেইন খুলে প্যাকেটটা বের করে আনল। প্যাকেটের মোড়ক খুলে বুঝতে পারে যে এটা রিতুর ডায়েরী। অনেক অবাক হয় সুমন। বিছানার কোণায় বসে একটার পর একটা পাতা উল্টাতে থাকে সুমন। যতই পাতা উল্টাতে থাকলো তার শ্বাসপ্রশ্বাস ততই গভীর হতে থাকলো। ডায়েরী প্রতিটি পাতায় তার প্রতি রিতুর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উল্টাতে উল্টাতে শেষ পাতায় এসে পড়লো। সেখানে লেখা আছে, "তুমি যখন ডাইরিটা পড়বে তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে থাকবো। আর কোনদিনই তোমাকে বিরক্ত করব না। ভালো থেকো।"
কথাটার মর্মোদ্ধার করতে কষ্ট হল না সুমনের। তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে রিতুর নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু নাম্বার বন্ধ। পাগলের মত রিতুর এক বান্ধবীর মোবাইলে কল করলো। অনেকবার কল করার পর ধরল সে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিতুর মৃত্যুর কথা জানাল সে। বাকরুদ্ধ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো সে।
২ মাস পর : খুব স্মৃতিময় একটা জায়গায় বসে আছে সুমন। প্রায় সময়ই এই জায়গায় এসে বসে থাকে সে। সে আর রিতু এখানে প্রথম দেখা করেছিল। ৫ মাসের রিলেসনে মাঝে মাঝেই এখানে দেখা করতো তারা। সুমন বুঝতেই পারেনি রিতু তাকে এতটা ভালবেসেছিল। মেয়েদের প্রতি তার ঘৃণার কারনেই হয়তো তখন বুঝতে পারেনি। আর কোন মেয়ের সাথে না জড়িয়ে পুরোটা জীবন রিতুর স্মৃতি নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। সিদ্ধান্তটা কতটা বাস্তবসম্মত সেটা নিয়ে ভাবার চেষ্টা করেনি কখনও।
হঠাৎ করে কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকাল। ভূত দেখার মত চমকে উঠলো সে। রিতু হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
-এটা কীভাবে সম্ভব? আমি ভুল দেখছি না তো? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো সুমন।
-না, তুমি ভুল দেখছ না। আমি মরিনি। কখনও মরার চেষ্টাও করিনি।
-তাহলে তোমার বান্ধবী যে বলল?
-তাকে আমি শিখিয়ে দিয়েছিলাম কি বলতে হবে তোমাকে। মুচকি হেসে বলল রিতু।
-কিন্তু এইসব কেন করলে?
-আমি যখন উল্টাপাল্টা একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই তখনই তোমার একটা বন্ধু কোথা থেকে জানি আমার নাম্বার জোগাড় করে আমকে ফোন দেয়। তোমার অতীত ইতিহাস সব খুলে বলে আমাকে। তুমি যে শুধু একটা মেয়েকে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রেম কর সেটা আমি জানতে পারি। আমি তোমাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নেই। এই ২ মাস আড়ালে থেকে অন্যদের কাছ থেকে তোমার খোঁজ-খবর নিতাম। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সংশোধন করেছ। এই কাজটা না করলে হয়তো তোমাকে কখনও এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যেত না।
কোন কিছু না বলে রিতুর দিকে তাকিয়ে থাকলো সে।
-পৃথিবীর সব মানুষ এক না। একজনের অপরাধের জন্য নিরপরাধ অন্য আরেকজনকে শাস্তি দেয়া উচিত না। হয়তো তোমার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে অনেক মেয়েই ছেলেদের প্রতি প্রতিশোধ প্রবণ হয়ে পড়েছে। তার জন্য তো তুমি দায়ী থাকবা।
-হুম, কিন্তু যতই নিজেকে সংশোধন করিনা কেন আমার ইতিহাস জানার পর তো আমাকে আর ভালবাসার কথা না।
-একটা মানুষ যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় তাহলে তাকে ক্ষমা করা উচিত। আমার মুখ দেখেও কি বুঝতে পারছ না আমি কি চাচ্ছি? হেসে বলল রিতু।
সম্মোহিতের মত রিতুর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল সুমন। সেই চোখে তার জন্য ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হল না সুমনের। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল তার।
লেখক : Md Zobair Islam
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি