পাঠকই লেখক ডেস্ক: পাশের রিকশায় লুবনার মতো একটা মেয়েকে দেখে চমকে ওঠে রাব্বী। বন্ধুদের কাছে শুনেছে লুবনার অনেক ছেলের সাথে রিলেশান। কিন্তু লুবনাকে রাব্বী চেনে। সুন্দরী বলেই এতো অপবাদ। পরীক্ষা করে প্রমাণ পেয়েছে অনেকবার। মেয়েটার দোষ নেই।
জ্যামে পড়ে পাশের রিকশায় লুবনার স্বর শুনে ভড়কে যাবার পর রাব্বী খানিকটা অসহায় বোধ করতে থাকে। ৫ বছরের রিলেশান ওদের । ক্লাস নাইনে থাকতে লুবনা আর রাব্বী একই কোচিং সেন্টারে যেতো । প্রায় দিন পাশাপাশি সিএনজিতে বসতো।
রাব্বী খানিকটা লাজুক প্রকৃতির। তাই একটু সরে বসতো। ফান বা অন্য যাই উদ্দেশ্যেই হোক লুবনা চেপে বসতো আরো। সেটা অন্য কারো সাথে করতো না। ছোট বেলার বন্ধু বলেই এতোটা চিনতো রাব্বীকে ।
একদিন হাতটাও ধরেছিলো। আর রাব্বী অবাক হয়ে হাতটা অন্য হাতে ধরে রেখেছিলো। বুকের মধ্যে বান ডেকেছিল ভালোবাসার। রাব্বীই প্রপোজ করে লুবনাকে। কয়েকদিন ঝুলিয়ে রাজি হয় লুবনা।
ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়া আর শপিং পাগল মেয়েটার পিছে টাকা উড়াতেই বেশি পছন্দ করতো রাব্বী। লুবনা বাঁধা দিতো। বলতো এতো আস্কারা দিয়ো না।
প্রথম চুমু ক্যাফের আলো আঁধারীতে। পারিবারিক ভাবেই বিয়ে ঠিক দুজনার। এমনকি ফিজিক্যাল রিলেশানও আছে। তবু?
রাব্বী আর ভাবতে পারে না । পকেটের ফোন বের করে লক খুলে ওয়ালপেপারে দেয়া লুবনার মুখটা দেখে কষ্ট লাগে। নিশ্চিত হতে ফোন দেয়। পাশের রিকশায় ফোন বাজে ।
হ্যাঁ, লুবনার ফোন বাজছে। কারণ রিংটোনটা চেনা ।
লুবনা পাশের ছেলেটিকে বলে, ছাড়ুন।
আর্তনাদ করে লুবনা। ছেলেটা হয়তো থামতে চায় না। আহ করে একটা অস্ফুট শব্দ করে লুবনা বলে, কি হচ্ছে এসব! আপনি আমাকে প্লিজ স্পর্শ করবেন না এভাবে। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে !
রাব্বী ফোন রেখে দেয়। লুবনাকে সে ভালোবাসে। সন্দেহও করতে গিয়েও পারে না। কারণ জানে লুবনা এমন নয়। ভাবে হয়তো অন্য কেউ হবে। লুবনার অনেক সাহস। সে এমন অন্যায় সহ্য করবে না ।
ততক্ষণে জ্যাম ছেড়ে রিকশা এগিয়ে চলছে বহুদূর ।
দু'মাস পরের ঘটনা! লুবনার স্ক্যান্ডাল ভিডিও বেরিয়ে পড়ে। সাথে খবর; লুবনা প্রেগনেন্ট ।
সব ভুলে গিয়ে রাব্বী আবার লুবনাকে ফোন দেয়। লুবনা ফোন ধরে না প্রথমে । কয়েকবার রিং হবার পরে ধরে।
কাঁপা কন্ঠে বলে,
- হ্যালো। তুমিও কিছু বলবে? বলো।
- তুমি প্রেগন্যান্ট?
- হ্যাঁ ।
- আমি যদি সন্তানটার বাবার পরিচয় দিতে চাই রাজি হবে?
- না ।
- কেন?
- কারণ সন্তানটা তোমার নাও হতে পারে।
- প্লিজ ।
- আমি ভুল করেছি আর তুমি উপহাস করছো?
- আমি আসছি । তুমি লাল শাড়ি পড়ে থাকো ।
- আমি জানি তুমি আসবে না। বড্ড দেরী করেছি আমি। তোমায় অনেক কিছু বলার ছিল। তোমায় ভালোবাসতে পারিনি। প্লিজ ক্ষমা করো না আমায় অভিশাপ দিয়ো।
বলেই ফোন কেটে দেয়। গুছিয়ে লাল শাড়ি পড়ে। বড় করে টিপ দেয় লুবনা। কয়েক ঘন্টা পর রাব্বী আসে। এসে দেখে অনেক ভীড়। এম্বুলেন্সের শব্দ আর ভীড় ঠেলে যেতে শোনে ছাদ থেকে মেয়েটা লাফিয়ে পড়েছে।
লাল শাড়িটা রক্তে ভিজে আরো লাল হয়েছে। হাতের মুঠোয় ধরা একটা চিঠি পায় রাব্বী।
প্রিয়তমমেষু,
কয়েকজন কলিগ অফিসের একটা পার্টিতে আমায় ধর্ষণ করে ক্যামেরায় ধারণ করেছিলো নগ্ন দৃশ্য। আমি শরীর দিতে বাধ্য হয়েছি। শুধু তাদেরকেই না অনেক মানুষকে। আমি সেই সন্তানকে তাই পিতার পরিচয় দিতে পারি না।
আমায় ক্ষমা করো দিয়ো ।
ইতি
লুবনা ।
রাব্বীর হাত থেকে চিঠিটা পড়ে যায়। চোখে ভাসে মেয়েটার মিষ্টি হাসি। সাহসী মেয়েটার লাশ নিয়ে যায় লাশকাটা ঘরে। রাব্বী কিছুই করতে পারে না।
জোছনা করেছে খুব। রাব্বী এলোমেলো পা ফেলে হাঁটে। চিৎকার করে বলতে চায়... লুবনা আমায় ক্ষমা করে দিয়ো। লুবনা কি শুনছে ?
লেখক: কাব্যপ্রেমী রিফাত
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি