পাঠকই লেখক ডেস্ক: আজ অনেক দিন পর বন্ধুদের সাথে ঢাকাটা ঘুরেছি। ঢাকা বললে ভুল হবে গুলশান বাড্ডা এলাকা ঘুরেছি। সন্ধ্যার পরে হাতিরঝিলে গিয়ে বসি। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এক বাচ্চা এসে বললো, 'মামা একটা ডিম খান।'
বাচ্চাটাকে দেখে আমরা সবাই চিনলাম। আগে যখন নিয়মিত ওখানে আড্ডা দিতাম তখন প্রায়ই ওর সাথে গল্প করতাম ডিম খেতাম ওর থেকে কিনে। বাচ্চাটা অনেক সুইট আর চঞ্চল। ওকে টান দিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলাম, কয়টা ডিম বিক্রি করলি রে।
ও বললো 'মামা বেশি না। মাত্র একটা। পকেট থেকে ১০টাকা বের করে প্রমাণ করে দিল ও সত্যি বলছে।
বাচ্চাটা আমার সাথে এসে দাড়িয়ে বললো, মামা শরবত খাওয়ান।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কিসের শরবত খাবি। সে লেবুর শরবতের গাড়িটা দেখিয়ে দিলো। আমার বন্ধু অন্তর বললো যা খা গিয়ে।
সে এতোটা খুশি হয়ে একটা দৌড় দিলো তা ছিলো দেখার মতো। সে এক গ্লাস খেয়ে বললো, মামা আরো এক গ্লাস খাওয়ান। অন্তর আবার তাকে এক গ্লাস খাওয়ার অনুমতি দিলো। সে এভাবে তিন গ্লাস শরবত খেলো। তারপর বললাম, শুধু শরবত খেলে হবে না। যা ডিম বেচ গিয়ে। সে চলে গেলো ডিম বেচতে।
তখন আমরা আবার নিজেরদের মতো আড্ডা মারতে শুরু করলাম। মাঝদিয়ে সবাই ঝালমুড়ি কিনে খেলাম ৫ টাকার করে। ঝালমুড়ির কথা এই কারণে বললাম, কেননা একটু পরে সে ডিমওয়ালাকে দেখলাম বড় একটা ঝালমুড়ির প্যাকেট নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। জিজ্ঞেস করলাম, 'কিরে ঝালমুড়ি পাইলি কই?'
সে হেসে হেসে উত্তর দিলো, এক মামা খাওয়াইছে। দুই প্যাকেট। আমার বন্ধু বললো 'তুই খেতে আসছিস নাকি ডিম বেচতে বুঝতে পারছি না। আমি বললাম 'কি কপাল দেখ ও খায় ১০টাকা প্যাকেট ঝালমুড়ি আর আমরা খাই ৫টাকা। বলে সবাই হাসা শুরু করলাম।
একটু পরেই আরো একটা পিচ্ছি এসে বললো 'মামা আলুর চিপস খাবেন'।
ভালো করে লক্ষ্য করলাম ছেলেটা ঠিকমতো হাটতে পারছে না হেলেদুলে পরে যাচ্ছে। চোখ গুলাও লাল। আমার বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, 'কিরে তুই অসুস্থ নাকি?'
ছেলেটা বললো, না।
আমি কপালে হাত দিয়ে দেখলাম গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। বললাম, কিরে জ্বর নিয়ে বের হয়েছিস কেন পড়ে গেলে কি হবে।
সে কিছু না বলে উদাসীন ভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাবখানা এমন যে এখুনি কেঁদে দিবে।
আমার বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, তোর আব্বু আম্মু কই!
সে এবার নিরবতা ভেঙে জবাব দিলো 'আম্মার জ্বর। তাই বের হইতে হইছে আমারই। আব্বা নাই।
আমরা কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনটা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেলো। ওর থেকে সবাই একটি করে আলুর চিপস কিনলাম। এটা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না।
এখন আসল কথায় আসি। ওরা সবাই পথের শিশু। ওদের সাথে কোনো তুলনা নেই। ওদের জীবনটাই এমন। কখনো অনেক আনন্দ আবার বিশাল দুঃখে ভরপুর। আসলে আনন্দ নেই ওরা নিয়মিত আনন্দে থাকার অভিনয় করে। ভুলে যেতে চায় ওরা যে গরীব। ওরা যে পথের শিশু। তবুও নিয়তি বারবার মনে করিয়ে দেয় ওদের। আসুন সবাই এই পথ শিশুগুলোর সাথে একটু ভালো ব্যবহার করি। এতেই ওরা অনেক খুশি। ওদের আর কিছু চাই না। চাই শুধু একটু ভালো ব্যবহার। একটু সহানুভূতি....!
লেখক: সাব্বির আহমেদ শাওন
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস