পাঠকই লেখক ডেস্ক: আমি রাফিন। সদ্য কলেজে উঠলাম। চারপাশটা বেশ রঙ্গিন লাগছে। মাঠের কোণায় কোণায় জোড়ায় জোড়ায় কপোত-কপোতীর দল। মনটা রঙ্গিনতো.. তাই ইচ্ছে হয় আমারও। বিভিন্ন দিবসে আমার ধনবান বন্ধুরা কতো পার্টির আয়োজন করে। ইচ্ছে হয় আমারও। পড়াশোনা না পারলেও ওরা স্যারদের অনেক সান্নিদ্য পায়। ইচ্ছা হয় আমারও।
এই রকম হাজারো ইচ্ছে আমার ইচ্ছেই থেকে যায়। কারণ আমি কখনো রাতের উজ্জ্বল নক্ষত্র নিয়ে ছন্দ সাজাইনা। কারণ আমার নক্ষত্র রাতের জোনাকিগুলো। কখনো হিমালয়ের উপর থেকে জলপ্রপাত দেখার ইচ্ছে জাগেনা। ছোট্ট কোনো পাহাড়ের বৃষ্টিধারাই আমার ঝর্ণাধারা। আমাকে নিয়ে আমি বেশ আছি।
কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে যাবে। গরিবের বন্ধু বিরল। আমারও তিনটা বন্ধু আছে। আমি না গেলে ওদের হাজারো ইচ্ছে থাকলেও ওরা যাবে না সাফসাফ বলে দিল। এ ইচ্ছাটাকে দমাতে পারলাম না। বাবাকে ফোন দিলাম।
- আব্বু কেমন আছো?
- আমি ভালো তুই কেমন আছিস?
- জ্বি ভালো। কিন্তু তোমার কথা শুনেতো তোমাকে সুস্থ মনে হচ্ছেনা।
- না তেমন কিছু না। প্রেসারের চাপটা আবার বেড়ে গেছেরে। চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা কই পাবো।
(কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম)
- চিন্তা করোনা আব্বু, আগামী মাসের পুরো বেতনটায় ডাক্তার দেখিও।
- তুই না হয় টিউশনির টাকা দিয়ে চলবি। বাড়িতে তোর আম্মু ছোট বোনটা কিভাবে চলবে?
(এবার অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলাম)
- সমস্যা নেই আব্বু মেসে মিল একটা করে দেবো। আমার খাওয়াতে খুব একটা রুচি আসেনা। কিছু টাকা বাঁচবে। আর আমার কাছে জমানো পাঁচশত টাকা আছে সেটাসহ আম্মুকে পাঠিয়ে দেবো। (অনিচ্ছা সত্ত্বেও অস্পষ্ট স্বরে)
- আচ্ছা।
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি বাবা কাঁদছেন। কিন্তু কিছুই করার নেই, বাবা প্রেসারের চাপে একবার স্ট্রোক করেছেন। আরেকবার করলে হয়তো.......! ফোনটা রেখে দিলাম।
না বাবাকে বলা হলো না শিক্ষা সফরের কথা। এ ইচ্ছাটাও ইচ্ছাই রয়ে গেল।
আমার বাবাটা পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানব। হাজারো কষ্টের বিনিময়েও উনার চাওয়া আমাদের মুখের হাসি। কখনো কষ্টগুলো প্রকাশ করেন না। সামান্য কয় টাকা বেতনের চাকরি করেন। নিজের চলা, আমাকে কিছু দেওয়া আর বাড়িতে আম্মুকে দেওয়া সব কিছুর উৎস এই একটা মানুষই। কখনো আমাদের চাহিদা পূরনে বিন্দুমাত্র অনীহা নেই।
আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর একমাত্র সম্বল সম্মান আর শ্রদ্ধাবোধ। যুগযুগ ধরে এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ। কখনো সন্তানের হাতে পিতার খুন আমাদের দিয়ে হয় না। কখনো রাস্তায় গণ-ধোলাইয়ের স্বীকার আমরা হইনা। কখনো আমাদের কেউ মাল বলেনা। বলেনা বখাটে। আমরা না খেয়ে থাকলেও আমাদের নিয়ে বেশ আছি। গর্ব করি কারণ আমি মধ্যবিত্ত।
লেখক: মোস্তফা কামাল রিয়াদ
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস