ওকল্যান্ডের পথে পথে
পাঠকই লেখক ডেস্ক: দু’হাজার পনেরো সালের ১১ই ডিসেম্বর ন্যাসভিল থেকে রওয়ানা দিয়ে ১৩ তারিখে ওকল্যান্ড বিমান বন্দরের অ্যারাইভ্যাল এরিয়াতে যখন এসে দাঁড়ালাম, তখন ঘড়িতে বাজে বেলা সাড়ে বারোটা। মানুষের ভীড় ঠেলে ইনফরমেশন ডেস্কে বসা বৃদ্ধ ভদ্রলোককে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সিটি সেন্টারে কীভাবে যাব? তিনি বললেন, ‘‘ট্যাক্সি না বাস?” আমি জানতে চাইলাম, কোনটা কত? এবার উত্তর দিলেন, ‘‘ট্যাক্সি নিলে ৭০ ডলার, আর বাসে গেলে ১৬”। ট্যাক্সি এবং বাস স্ট্যান্ড দু’টোই ইশারায় দেখিয়ে দিলেন। আমি বেরোবার আগে এয়ারপোর্টের শেষ জরুরি কাজটা সারতে ভুললাম না। এক শ’ পঞ্চাশ মার্কিন ডলার ভাঙ্গিয়ে, ১৯৪ স্থানীয় মুদ্রা বুঝে নিলাম। তার আগে হিসেব নিকেশ করলাম, তিন দিনে আমার কত টাকা লাগতে পারে। হিসেবটা যে ঠিকমত মেলাতে পারিনি, সেটা টের পেয়েছিলাম ফিরতি পথে, ওই এয়ারপোর্টের ডিপার্চার লাউঞ্জে বসেই। টার্মিন্যালের বাইরে এসে অকল্যান্ডের নির্মল খোলা হাওয়ায় প্রম নিঃশ্বাসেই বুঝলাম, নিউজিল্যান্ড আর দশ-পাঁচটা দেশের মত নয়! মনে হল যেন একেকটা নিঃশ্বাসে আমার আয়ু বেড়ে যাচ্ছে এক দিন করে! নতুন কোথাও গেলে, প্রম আমার নজর পড়ে সে দেশের ফুল, গাছপালা, ও পাখির ওপর। চোখ মেলে ডানে-বাঁয়ে দেখতে না দেখতেই স্কাইবাস সামনে এসে হাজির। বক্স অফিস থেকে টিকেট কেটে গিয়ে উঠলাম বাসে। ড্রাইভারকে আমার হোটেলের ঠিকানা দেখিয়ে প্রশড়ব করলাম, কোথায় নামব? তিনি বললেন, ‘‘স্টপ টু, দেরি আছে, বসুন’’। বাসে বসে একটু হতাশ হ’লাম। দু’পাশে কাচের জানালায় বড় বড় হরফে এমনভাবে স্কাইবাস কোম্পানির নাম লিখে রেখেছে যে, বাইরের দৃশ্যাবলী ভাল করে দেখা যাচ্ছে না। তবু যা দেখতে পেলাম, তাতেই মুগ্ধ হ’লাম। এয়ারপোর্ট এরিয়া ছাড়ার আগেই যে গাছটা আমার মন কেড়ে নিল, তার সঠিক বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব, আর নাম তো অজানাই! মাঝারি আকারের গাছ, ঘন সবুজ পাতা, ঝাঁকড়া মাথা, তার মাঝে লাল লাল ছোট ছোট ফুল, বেশুমার! অল্প পথ যেতেই পরপর এ গাছ অনেকগুলোই চোখে পড়ল। গাছের পাতা অনেকটা আমাদের দেশের মেহেদি গাছের মত, তবে এ গাছ আরো অনেক বড় হয়। গাছের নামটা জানার জন্য খুব কৌতূহলী হ’লাম, কিন্তু কারো কাছে জানতে চাইলাম না। ভাবলাম, চারদিকে
যে গাছের এত ছড়াছড়ি, তার নাম জানতে অসুবিধা হবে না, সুযোগ আসবে শিগগিরই। বাস চলছে আর আমি দু’চোখ ভরে দেখছি, গাছপালা, লতাপাতা, সাজানো ফুলের বাগান, পাহাড়, সাগর, সবই যেন এক জায়গায় এসে মিশেছে, আমার দৃষ্টি সীমার ভেতরে, একেবারে কাছে। দেখছি আর ভাবছি,
দুনিয়াটা বড় সুন্দর! এ কথা যতটা না সত্য, তার চেয়ে বড়, তার চেয়েও কঠিন সত্য কথা, মনের মাঝে এসেন উঁকিঝুকি মারছে! আমাকে ভাবিয়ে তুলছে! এ সত্য অবধারিত, একে এড়ানোর কোনো উপায় নেই। এ সুন্দর দুনিয়া ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে! এয়ারপোর্ট থেকে শহরের দিকে যতই এগোচ্ছি, প্রকৃতি ও পরিবেশকে পেছনে ফেলে ইটপাথরের সাজনো কৃত্রিম বাগানে ঢুকছি। দু’পাশে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মানুষের থাকার ঘরবাড়ি। বাড়িগুলো আমেরিকা-কানাডার মতই, তবে একটু ছোট আকারের। সবারই বাড়ির সামনে ফুলের বাগান আছে। গোলাপের শাখা-প্রশাখার সাথে প্রতিযোগিতা করে ঘাস আর আগাছা যেভাবে বেড়ে
২
উঠেছে, তাতে বুঝতে আমার বাকি রইল না যে, বাগানগুলো অবহেলা আর অযতেড়ব মুখ ভার করে আছে। হাসিমুখে অতিথিদের বরণ করতে পারছে না। এর কারণ কী, তা আমার মাথায় এলো না। এরই মধ্যে, শহরে আসার আগেই দু’বার গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা দু’দফা নেমে পড়েছেন। এবার আমি কত
নম্বর স্টপে গিয়ে নামব তা জানার জন্য আবার ড্রাইভারের কাছে যেতেই তিনি আমাকে শান্তিতে জায়গায় গিয়ে বসতে বললেন, সামনে, দূরে, অনেক উঁচা একটা টাওয়ার দেখিয়ে বললেন, ‘‘ওর কাছে গেলে আমি তোমার হোটেলের নাম বলব, তখন নেমে পড়বে’’। সিটে ফিরে এসে এদিক ওদিক দেখছি, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান - ডিএইচএল, গুডইয়ার, টয়োটা, ম্যাকডোনাল্ডস, পেপসি, ফেডএক্স, সাবওয়ে ফাস্ট ফুড, স্টারবাক্স কফি শপ, ইত্যাদি, ইত্যাদি। বুঝলাম, ব্যবসার কোনো জাত-পাত নেই, দেশ নেই, সীমানা নেই! যেখানে টাকা আছে, যেখানে মুনাফা আছে, সেখানেই তারা হাজির। তারা দেশপ্রেমের পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ, তারা ট্যাক্স দেয়, ফাঁক ফোকরও খুঁজে, মাঝে মাঝে ধরাও খায়। মুনাফা তাদের কর্ম, মুনাফাই তাদের ধর্ম, এবং এটা সব ব্যবসার বেলা, সব দেশেই সমানভাবে প্রযোজ্য।
আরো দশ-পনেরো মিনিট পর ড্রাইভার কুইন স্ট্রিটের মাথায় সাগর পাড়ে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘উল্টো দিকে তুমি হাঁটতে থাক, পেয়ে যাবে গ্রেইজ অ্যাভিন্যু এবং অ্যামোরা হোটেল’’। রবিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগই বন্ধ। রাস্তাঘাটে মানুষ চলাচলও খুব একটা নেই, তবু ভয় পেলাম না, কারণ আমাকে আগেই বলা হয়েছে, ওকল্যান্ডের রাস্তাঘাট খুবই নিরাপদ। কাঁধে ব্যাগ এবং উঁচা-নিচা রাস্তায় স্যুটকেস টেনে ক্লান্ত হয়ে পড়তেই দেখি আমার পেছন দিক থেকে একটু দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে দুই তরুণী বান্ধবী। তাদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা জান গ্রেইজ অ্যাভিন্যু কোনদিকে? একজন বলল, ‘‘আমরা এ শহরে থাকি না, এসেছি অন্য শহর থেকে ‘রক ফেস্টিভ্যালে’ আমাদের এক বন্ধু পারফর্ম করছে
তো তাই। ওর কনসার্ট শেষ হয়ে গেছে বলে আমরা এখন চলে যাচ্ছি’’। তাদের একজন আমাকে ডান দিকে টাওয়ারটা দেখিয়ে বলল, "This is the tallest structure in the entire Southern Hemisphere!" আমি নাম জানতে চাইলে বলল, ‘‘স্কাই টাওয়ার’’। তৈরি হয়েছে ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। দু’ হাজার তিন সালে যখন প্রম মেলবোর্ন যাই তখন ট্যাক্সি ড্রাইভার একটা হাই রাইজ বিল্ডিং দেখিয়ে বলেছিল, "This is the tallest building in the Southern Hemisphere"। এবার বাড়ি ফিরে গুগুল সার্চ দিয়ে দেখলাম, মেলবোর্ন-এর ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথা ঠিক, এবং ওকল্যান্ডের তরুণীর কথা ঠিক না হলেও বেঠিকও নয়, কারণ দক্ষিণ গোলার্ধের যাবতীয় উঁচু টাওয়ারের মধ্যে ওকল্যান্ডের ‘স্কাই টাওয়ার’ সগৌরবে একটা জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রেইজ অ্যাভিন্যু খুঁজে না পাওয়ার পেরেশানিতে, চকচকে স্কাই টাওয়ার আমার চোখে একটা কংক্রিটের খাম্বা ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। একটু হতাশ হয়ে দুই বান্ধবীর সঙ্গ ছেড়ে আমি উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম। মিনিট যেতে না যেতে, তাদেরই একজন পেছন ফিরে ডেকে বলল, ÔÔHere is Grey's Ave"। মুহূর্তের মধ্যে ক্লান্তি ভুলে গিয়ে জোর কদমে হেঁটে গিয়ে উঠলাম অ্যামোরা হোটেলে। হোটেলের ম্যানেজার সহ ফ্রন্ট ডেস্কে
ডিউটিরত সবাইকেই দেখলাম ভারতীয়। খুব বন্ধু বৎসল। তাদের সাদর সম্ভাষণে পথের ক্লান্তি অনেকটাই কেটে গেল। ডিউটি ক্লার্ক নিধি হাসি মুখে দেরি না করে সব ফরম্যালিটিজ সেরে ‘কার্ড কী’ আমার হাতে গুঁজে দিল।
৩
পরদিন দেখলাম ওখানে একজন চীনা মেয়েও কাজ করে। তার ব্যবহারও খুব ভাল। রুমে এসে গোসল এবং নামাজ সেরে খাবার সন্ধানে বের হ’লাম। যে পথে এসেছিলাম সে পথ ধরে সোজা গিয়ে পড়লাম এক ছোট্ট পার্কে। এখানেও দেখতে পেলাম সেই লাল ফুলওয়ালা সুন্দর গাছ। গাছের পাশে বসা দেখলাম এক ভদ্রমহিলা ও তাঁর কলেজ-পড়–য়া মেয়ে। ভদ্র মহিলার কাছে জানতে চাইলাম গাছটার নাম। তিনি বললেন ‘পটুকাওয়া’। বাড়িতে এসে গুগুল সার্চ দিয়ে দেখলাম বানান "Pohutukawa'', কিন্তু তারা উচ্চারণ করে ‘‘পটুকাওয়া’’ বলে। এটা নিউজিল্যান্ডে বিশেষ যে বারো প্রজাতির গাছ পাওয়া যায় তার অন্যতম। এ গাছের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল, এর ফুল ফুটে সারা বছরে মাত্র মাত্র তিন চার সপ্তাহের জন্য। বড়দিনের দু’সপ্তাহ আগে শুরু হয় এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি হয়ে গেলে পটুকাওয়া গাছে আর ফুল দেখা যায় না, একে একে সব ঝরে পড়ে যায়। ছুটির দিন, পার্কে অনেক লোক বসে আছে, কেউ হাঁটাহাঁটি করছে, কেউ ঘাসে শুয়ে গড়াগড়ি করছে, কেউ বাচ্চাদের সাথে বল খেলছে। এক গাছের তলায় বেঞ্চে বসা দেখলাম একটা পরিবার -স্বামী, স্ত্রী, ও একটা ছোট্ট ছেলে। মহিলাটি হিজাব পরা, সালাম করে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কথা বলে জনতে পারলাম, তাঁরা মালয়েশিয়ান। ভদ্রলোকটি ওকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি-তে (এইউটি) পিএইচডি করছেন। কতক্ষণ কথা বলার পর, তিনি আমাকে একটা টার্কিশ রেস্টুরেন্ট দেখিয়ে দিলেন। সেখান থেকে রাইস, ল্যাম্ব কাবাব, রায়তা, এবং সালাদ নিয়ে হোটেলের দিকে ফিরে আসতে লাগলাম। পথে এক বিল্ডিংএর বারান্দায় এক গৃহহীন লোকের সাথে দেখা। কম্বল গায়ে দিয়ে মেঝেতে বসেই কী যেন খাচ্ছে। ভাবলাম, আগামী কাল তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করব এবং ছবি নেব, কিন্তু পরদিন ওই জায়গায় তার আর দেখা মেলেনি।
হোটেলের কাছে এসে দেখলাম একটা ছোট দোকান, সেখান থেকে পানি, কলা, এবং চারটা কিউয়ি ফল কিনে নিয়ে রুমে ফিরে এলাম। দোকানের মালিক ভারতীয়, যে ছেলে কাজ করে সেও ওই দেশি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমাবো, কিন্তু কেমন করে? তখন ছ’টাও বাজেনি। নিউজিল্যান্ডে মাত্র সামার শুরু
হয়েছে। দিন অনেক লম্বা। ভোর হয় ছ’টায় এবং সন্ধ্যা হয় ন’টায়। নিউজিল্যান্ডে এসে, নিউজিল্যান্ডের কিউয়ি, তাজা কিউয়ি খাওয়ার জন্য তর আর সইছে না! কিন্তু গোল বাধলো কিউয়ি কাটা নিয়ে - কী দিয়ে কাটি, কীভাবে ছিলকা ছাড়াই? আমার সাথে ছুরি তো নেই। অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম, নেইল কাটারের সাথে পাতলা একটা ফাইল আছে, সেটাকে ছুরির মত করে কোনো রকম কাজ সারলাম। তাজা কিউয়ি খেয়ে ভীষণ মজা লাগল, খুব তৃপ্তি পেলাম! আরো ভাল লাগল, কারণ চারটা কিউয়ি-র দাম পড়েছে আমাদের মুদ্রায় মাত্র এক ডলার, যেখানে আমরা ন্যাসভিলে একেকটা কিনি এক ডলার করে। এর পরই ঘুম এসে ভর করল। সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে পারলাম না। পরে ঘুম ভাঙ্গলে মাগরিব এবং এশার নামাজ একসাথে সেরে আবার
দিলাম ঘুম।
পরদিন কনফারেন্স সেরে রুমে ফিরে এলাম বিকেল পাঁচটায়। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটতে বেরোলাম একা একা। এবার যাত্রা শুরু করলাম উল্টো দিকে। গ্রেইজ অ্যাভিন্যু ধরে পিট রোড, তারপর আবার কুইন স্ট্রিটে গিয়ে বাঁদিকে ঘুরলাম। উইকডে-র রোদ ঝলমল বিকেল। অফিস-আদালত শেষে ব্যস্ত মানুষজনের বাড়ি ফেরার পালা। একটা স্বাভাবিক দিনের বৈকালিক নগর জীবনের কোলাহলের মাঝে হাঁটছি আর দেখছি বিচিত্র নারী-পুরুষের বিচিত্র চলাচল। হঠাৎ দেখতে পেলাম ফুটপাতে সিটি কর্পোরেশনের বেঞ্চে ছেঁড়া কাপড়
৪
গায়ে এক বৃদ্ধ বসে আছেন। সামনে রাস্তার ওপর কাগজ পেতে তিনি তার পশরা সাজিয়েছেন। তাঁর পণ্য সামগ্রীর মাঝে আছে সামুদ্রিক ঝিনুক দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ডেকোরেশন পিস। প্রতিটার মূল্য ৫০ সেন্ট মাত্র। কাস্টমার যে-ই এসে তাঁর সামনে দাঁড়ায়, জিনিস কিনুক বা না কিনুক, তার হাতেই তিনি একটা চিরকুট ধরিয়ে দেন। হাতে লিখে কপি করা চিরকুট। আমাকেও একটা দিলেন। অনেক কসরত করেও আমি পড়তে পারলাম না তিনি কী লিখেছেন। বললাম, পড়–ন তো এখানে কী লিখেছেন। তিনি বললেন, "Sorry! My hand writing is not good. I am fighting against the born theifs and
royalties." তারপর তিনি আমাকে এক সংক্ষেপ বয়ান শোনালেন। তাতে বুঝলাম, তিনি বৃটিশ রাণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছেন। তাঁর অভিযোগ, রাণী তাঁদের দেশের কেউ না। রাজতন্ত্র শেষ হয়েছে কত বছর! এখনো কেন তাঁকে টাকা দিতে হবে? যখনই রাজপরিবারের কেউ আসে, তারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড থেকে। এখানেই তাঁর যত আপত্তি। তাঁদের ট্যাক্সের টাকা বৃটিশ রাজ পরিবার কেন এভাবে লুট করে নিতে থাকবে। তাঁর রাগ, এত এত টাকা নেওয়ার পরও বৃটিশ রয়েলটি নাকি নিউজিল্যান্ডারদের সাথে ভেড়ার মত ব্যবহার করে। তিনি এর বিরুদ্ধে আজীবন আন্দোলন করে এ পর্যন্ত সাত সাত বার জেল খেটেছেন। বাকি জীবনে আরো কতবার লাল ঘরের বাসিন্দা হবেন তিনি তা জানেন না।
চিরকুটখানা হাতে নিয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম। প্রমবার সাক্ষাৎ হল এক দার্শনিকের সাথে। এবার দেখা পেলাম এক জন পথ-কবির। দু’-তিন ব্লক দূরে একই রাস্তায় এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের সামনে ফুটপাথে চেয়ার পেতে বসে আছেন এই ভদ্রলোক। পাশে এক ভাঙা কাঠের টেবিলে রাখা হাতে বাঁধানো পাতলা ছোট ছোট (পকেট সাইজ) বই। তিনি বিμি করছেন তাঁর অভিনব কবিতার বইগুলো। তার বেশ-ভূষা, চেহারাসুরৎ দেখে প্রমে ভেবেছিলাম ভদ্রলোক পাগল হতে পারেন। কথা বলে বুঝতে পারলাম না, তিনি পাগল নন, ষোল আনাই সুস্থ আছেন। তিনি বললেন, 'Management of Technology Politics'। কথা বার্তায় বুঝলাম, তিনি ওকল্যান্ডেরই এক বিশ্ববিদ্যলয়ের বিজনেস স্কুলে পড়াতেন। ইদানীং অবসর নিয়েছেন। এখন ওকল্যান্ড থেকে একটু দূরে ছোট এক শহরে থাকেন। এমন বিভাগ অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিনা আমার জানা নেই। তিনি আরো জানালেন, এমএ পাশ করেছেন অনেক আগে। পিএইচডি শুরু করেছিলেন, কিন্তু কোনো অনিবার্য করণে শেষ আর করা হয়নি। তাঁর একেকটা বইএর দাম পাঁচ ডলার করে। একটা বইএ একটা মাত্র কবিতা। তিনি যে শুধু টাকার বিনিময়ে কবিতার বই বেচেন, তাই নয়। তিনি বার্টার ট্রেডও করে থাকেন। আমাকে দেখালেন, একজন এক টুকরা পনির দিয়ে বই কিনেছে, আরেকজন কিনেছে এক বোতল মধু দিয়ে। তাঁর আরেক তাে আমার সামনে এক বাক্স ‘স্ট্রোবেরি’ খুলে ধরলেন। তিনি একটা একটা করে রসাল স্ট্রোবেরি মুখে দিচ্ছেন আর আমার সঙ্গে কথা বলছেন। কেউ বই কিনে, কেউ না কিনেও তাঁকে এটা ওটা দিয়ে যায়।
প্রতিদিন সকাল বেলা আসেন, কেনা-বেচা করে বিকেল বেলা আবার নিজ শহরে বাড়ি ফিরে যান। আমাকে একটা কবিতার বই পড়তে দিলেন। সেখানে লিখেছেন, আগামীতে জাপানের একজন এনজাইমোলজিস্ট এমন এক এনজাইম আবিষ্কার করবে যে, সেটা ‘ওজন লেয়ার’এর ফুটো বন্ধ করে দিয়ে মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে। আমি যখন বললাম, আপনি কেমন করে জানেন যে, একজন এনজাইমোলজিস্ট আসবেন এবং তিনি জাপানেই আসবেন, যিনি মানবকূলকে বাঁচাবেন? তখন তিনি তাঁর জায়গা থেকে একটু সরে এলেন। আমাকে বললেন, জাপান থেকে না হলেও এমন একজন আসবেন যিনি হবেন সকল মানুষের
৫
ত্রাতা। যখন জানলেন আমি একজন বিদেশি, তখন তাঁর অন্য একটা কবিতার বই আমার হাতে বিনা মূল্যে তুলে দিলেন। আমাকে দেওয়া এ পথ-কবির বইএর কবিতাটা আপনাদের জন্য আমি হুবহু নিচে তুলে দিলাম।
HAITUS
David Merritt
''ONCE I STAYED BEDBOUND, ROOTED, USELESS FOR ALMOST 3 MONTHS AND SLEPT AND PUT ON 2 STONE IN WEIGHT AND ALMOST BURNT THE HOUSE DOWN, TWICE. I SAW PEOPLE AS STICK INSECTS THROUGH THE WINDOWS OF A NEWMARKET
COMMUTER BUS, I CONCEIVED A CHILD CALLED LOLA AND BECAME THE SECOND OWNER OF A DOG CALLED JESSIE, WHO TONIGHT, I CAN HEAR BTREATHING IN THE HEATER GLOW DISTANCE. TIME HAS PASSED SINCE I TOOK TO MY BED WITH JOYOUS EXHAUSTION,
TERTIARY BURNOUT AND A PERSCRIPTION TO PROZAC. I KNOW THE PHONE RANG AND I MUST HAVE ANSWERED IT, GIRLFRIENDS,
MATES, SONS, MUM AND MY BROTHER AND SISTER AND TALKED TO THEM ALL IN MY MADNESS AND SADNESS.
I GOT BETTER BY TOUCHING SOIL, PLANTING, SELF MEDICATING AND KEEPING MORE REGULAR HOURS.
I FOUND MY OWN HOME, A FAMILY PLACE BY A RIVER IN A SMALL PROVINCIAL TOWN, WHERE I DROPPED OUT OF SIGHT, SAT TIGHT, WORKED HARD, PAID BILLS AND JUST WAITED.''
লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসী স্টেইট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ। Email:
[email protected]
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস
�