সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৫৪:১৪

অভিমানী

অভিমানী

পাঠকই লেখক ডেস্ক: টিভিটা খুলেই চোখ পড়লো নিউজ স্ক্রলের দিকে। কারওয়ান বাজার মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো সমস্ত শরীর। লিখন তো ওইদিক দিয়েই অফিসে যায়…। ওর কিছু হয়নি তো? দৌড়ে মোবাইলটা নিয়ে ফোন করলাম লিখনের ফোনে। মনে হল অনন্তকাল ধরে রিং হচ্ছে। নো আনসার! কাঁপা কাঁপা হাতে আরেকবার ফোন করলাম।

হ্যালো...!

তুমি ঠিক আছো? ওর কণ্ঠটা শুনে মনে হলো জীবন ফিরে পেলাম!

কেন, আমার আবার কখন কি হলো? আমি মিটিংয়ে। অফিস টাইমে যে কেন ফোন করো, বুঝিনা। কি বলবে একটু তাড়াতাড়ি বলো।

না, কিছু বলবোনা।

ওকে, টা টা।

কতোটা নিষ্ঠুর হয়ে গেছে লিখন আজকাল। আমি তো ওকে লাঞ্চ ব্রেক ছাড়া ফোনই করিনা, আজ করেছি কতোটা টেনশনে পড়ে তা যদি ওকে বোঝাতে পারতাম। এমন রুক্ষ ব্যবহার করার কি খুব দরকার ছিল?

লাঞ্চের সময়ও তো প্রতিদিন আমিই ফোন করি। ও খাওয়া-দাওয়া করলো কিনা না জানা পর্যন্ত কিছুই মুখে তুলতে ইচ্ছা করে না। কই ওতো কোনদিন জানতে চায়না আমি খেয়েছি কিনা। অফিস থেকে আসার কথা সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে, মাঝে মাঝেই আটটা-নয়টা বাজে। আমি তো রাগ করিনা, ঝগড়াও করিনা।

শুধু একদিন ভেবেছিলাম কথা বলবোনা ওর সাথে। কিন্তু আমার এই অভিমান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না। সেদিন ও অফিসিয়াল ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, আমি কথা বলছি কিনা এইটা খেয়ালই করলোনা। ওতো এমন ছিলনা। আমাদের ভার্সিটি লাইফের প্রেম। অনেক প্ল্যানিং ছিল বিয়ে নিয়ে।

আমি নতুন নতুন রান্না করে ওকে খাওয়াবো, খেতে যেমনই হোক ও প্রশংসা করবে, যতো ব্যস্ততাই থাকুক অফিস থেকে আসার পর আমরা অনেক অনেক গল্প করবো। আর ছুটির দিনগুলো বেড়াতে যাবো দূরে কোথাও। একসাথেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি আমরা। কিন্তু সংসারে সময় দিতে পারবোনা ভেবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরি না করার।

ইচ্ছা ছিল আগে সংসারটা গুছিয়ে নিয়ে তারপর ওসব চাকরির চিন্তা করবো। ওর নতুন চাকরিজীবন, আমি পাশে না থাকলে কি ও পারবে এতোটা প্রেশার নিতে? ওর চাকরির তিন মাস হতে চললো, এখন ওর ব্যস্ততার মাঝে আমাকে কোথাও খুঁজে পাইনা। তবু অপেক্ষা করি, হয়তো আসবে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দিন।

একটা বাজে, ওর লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, আবার কি ফোন করা ঠিক হবে? দোটানার মধ্যেও ফোন টা করেই ফেললাম।

- সীমা, আমি জরুরি মিটিং এ আছি, প্লিজ এভাবে বারবার ফোন করোনা।

-তুমি কি লাঞ্চ করেছ?

-না, দেরি হবে।

-কখন খাবে? শরীর খারাপ করবে তো।

-উফ, তুমি কেন আমার সিচুয়েশনটা একটুও বোঝার চেষ্টা করোনা বলতো? এখন রাখলাম, আমার মিটিং শেষ হলে খেয়ে নেব। বাই।

মনের অজান্তেই চোখ জলে ভিজে উঠলো। আমি কি সত্যি পারছিনা ওর যোগ্য সহধর্মিনী হতে? সারাটা দিন কাঁদলাম। কারো সাথে শেয়ার করতেও ভালো লাগেনা, যদি কেউ আমাদের ভালোবাসাকে ছোট করে! প্রেমের বিয়ে সুখের হয়না- এই উদাহরণের মধ্যে যদি কেউ আমাকে ফেলে!

আমার একটুও ভালো লাগবেনা। ও তো আমাকে বলে ছিল চাকরিটা পার্মানেন্ট না হওয়া পর্যন্ত ওকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে, আমাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আমিও বুঝি, তবু মনে হয় ও কি আমাকে আর একটু বেশি সময় দিতে পারতোনা?

কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওহ, ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। পাঁচটা বাজে। কিন্তু এখন আবার কে এলো? দরজা খুলতেই দেখি অবাক হয়ে গেলাম, লিখন!

- তুমি? এতো তাড়াতাড়ি?

- আই লাভ ইউ, মাই ডিয়ার ওয়াইফ!

- মানে? আর তোমার হাতে এতো গোলাপ কেন?

- তোমার জন্য, তোমার মনে নেই? আজ কতো তারিখ? আজ আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার তারিখটা তুমি কি ভাবে ভুলে গেলে?

- সরি, মনে ছিলনা, কিন্তু তোমার কিভাবে মনে থাকলো?

- তুমি তো জানো, আমি কাজের মধ্যে থাকলে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কিছু ভাবতে পারিনা, একটা এসাইনমেন্ট ছিল, আজ প্রেজেন্ট করলাম, সবাই খুব প্রশংসা করেছে, আমার চাকরি পার্মানেন্ট উইথ প্রমশোন ফ্রম নেক্সট মান্থ!

- সত্যি?

- হ্যাঁ, আর আমার এই সব কিছুর ক্রেডিট তো তোমার সোনা……। আমি তোমাকে কতোটা ভালবাসি তা তুমি কখনই জানবেনা, আমি তো সেভাবে এক্সপ্রেস করতে পারিনা। তুমি আমার উপর অনেক অভিমান করো তাই না? সরি…আচ্ছা, তুমি আমার সরি গ্রান্ট করেছো কিভাবে বুঝবো? বোঝাতে হলে চটপট রেডী হয়ে এসো, আজ বাইরে ডিনার করবো, ক্যান্ডল লাইট ডিনার।

আমি জানিনা কেন অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম, সারাদিন কষ্ট পেয়ে অনেক কেঁদেছি আবার এখন কাঁদছি অনাবিল আনন্দ নিয়ে। কি বলবো আমি লিখনকে? নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিলো। কি নাকি ভেবেছি এতোগুলো দিন, অকারণে কষ্ট পেয়েছি।

কি হলো, এতো কাঁদছো কেন? এখন কান্নার আবার কি হলো? কিছুই বলতে পারছিলাম না, শুধু ফিসফিস করে বললাম, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আর সবসময় বাসবো…।

লেখিকা: পিংকি সাহা
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে