সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫১:২৯

মায়ের দু'ফোটা চোখের জল

মায়ের দু'ফোটা চোখের জল

পাঠকই লেখক ডেস্ক: - কোথায় যাচ্ছিস বাবা?

- এইতো পড়া আছে।

- তোর জন্য তো চা দিয়েছি!

- যখন দিতে বলি তখন তো দাও না, আর এখন খাবোনা বলে দিচ্ছো! (রাগান্বিত কন্ঠে)

- আমি একটু ঘুমিয়ে ছিলাম বাবা। তাই তোকে তখন চা করে দিতে পারিনি।

- হয়েছে, সারা দিনই তো ঘুমিয়ে কাটাও।

মা বাকরুদ্ধ। অভিমানী ছেলে ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে হনহন করে হেঁটে বের হয়ে গেল। অন্যদিকে মা অনেকটা দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখেই অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলেকে বিদায় দিল। হয়তো ছেলে তার নিজের অগোচরেই মাকে অনেকখানি কষ্ট দিয়ে গেল!

শীতকাল শেষ। বসন্তের ষষ্ঠ দিন আজ। সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে ঠিক মুষল ধারে নয়। তাছাড়া শৈত্যপ্রবাহের ফলে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। হৃদস্পন্দন অতিমাত্রায় উন্নিত হয়েছে। হাত দুটো প্রায় অসার। খুব বেশিই ঠান্ডা লাগছে আজ।

রাস্তার দুই ধারে সোডিয়াম বাতি গুলো জ্বলে উঠলো। হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে। হাত দুটো পকেটে গুঁজে কাঁদামাখা পিচ্ছিল পথ ধরে হাঁটা শুরু করলো অনিক।

হঠাৎ করেই এক অবিশ্বাস্য শক্তি তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে দেয়।

- ভাই আস্তে!

- আআআ...!

- কেমন লাগছে আপনার?

- মাথায় একটু ব্যাথা লাগছে। আমি কি হাসপাতালে?

- জ্বি। একটা গাড়ি আপনাকে ধাক্কা দেবার ফলে আপনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং আপনার মাথায় আঘাত পান। তারপর আপনাকে এখানে নিয়ে আসা হয়।

অনিক এখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই তার। নিজেকে শুধু অপদার্থ, কুলাঙ্গার, অপরাধী মনে হচ্ছিল তার নিজেকে। সে এখন শুধুমাত্র একটি কথাই ভাবছে, তার মায়ের কথা। বোধহয় সে খুব একটা ভুল ভাবছে না। হয়তো তার মায়ের প্রচ্ছন্ন অশ্রুপাতের পরিনাম সরূপ তার এই দুরবস্থা।

কে জানে! হয়তোবা এর চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারতো অনিকের। হয়তো শুধুমাত্র মায়ের অমূল্য ভালোবাসার জোরেই সে আজ বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু মায়ের দু'ফোটা চোখের জলই তার জীবনকে শেষ করে দিতে যথেষ্ট ছিল।

আমরা আমাদের গর্ভধারিণী মায়ের সাথে অনেক সময়ই অনেক ছোট ব্যাপার নিয়ে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিয়ে থাকি। কিন্তু তখন আমরা ভুলে যাই যে, মায়ের একটা দীর্ঘশ্বাস আমাদের জীবন কেঁড়ে নিতে যথেষ্ট। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের সতর্ক থাকা উচিৎ এবং মায়ের প্রতি কখনও হীন মনে করা বা অবহেলিত কর্ণপাত করা উচিৎ নয়।

অভিশাপ! শব্দটি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। কিন্তু এটা যদি মা কর্তৃক হয় তবে তা পৃথিবীব্যাপী সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আমি মনে করি। তাই আমাদের যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সৃষ্টিকর্তা যেন আর কাউকেই অনিকের মতো দুর্ভাগ্য দান না করুক, তাই প্রার্থনা করি।

তবে একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যদি পৃথিবীতে কোনো নিরাপদ, শান্তিময়, অতুলনীয়, স্বর্গতুল্য স্থান থেকে থাকে তবে তা অবশ্যই মায়ের কোল। তাই সবার আগে মাকে ভালোবাসতে শিখা উচিৎ।

লেখক: জিয়াউল হক
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/বিএসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে