সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৭:১৬

বাবা টা...!

বাবা টা...!

পাঠকই লেখক ডেস্ক: ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উঠিয়েই বাবাকে ফোন করতো। বাবা হেসে বলতো, বুঝছি মা টাকাটা উঠিয়েছো এইমাত্র, তাইনা?

মেয়েটি কপট রাগ করে বাবাকে বলতো, কি ভাবো বাবা তুমি আমাকে? আমি কি শুধু টাকার জন্যই তোমাকে ফোন দেই?

এইমাত্র টাকা তুলে ফোনটা হাতে নিয়েছে বৃষ্টি। এখানে তার পুরো মাসের খরচের চেয়ে একটু বেশিই আছে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে অন্য এক শহরে থাকে বলে একটু বেশি করে টাকা পাঠায় বাবা।

কন্ট্যাক্ট লিস্টে যেতেই এ দিয়ে সেভ করা আব্বু লেখা দেখতে পেয়েও বৃষ্টি ডায়াল করতে পারে না। চোখ দুটিও ঝাপসা হয়ে আসে। বাবার নাম্বারে কল দেয় না আর বৃষ্টি। মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় টাকা পাবার কথা।

তারপর চোখ মুছতে মুছতে হলের দিকে এগিয়ে যায় বৃষ্টি। বাবাকে আর কল করা হয় না, হবেও না আর কভু। কারণ তার বাবা যেখানে আছেন সেখানে এখনও কোনো অপারেটর তাদের নেটওয়ার্ক দিতে পারেনি পারবেও না কখনও। তবুও বৃষ্টি নাম্বারটি মোবাইলে সেভ রেখে দিয়েছে, কিছু নাম্বার যে মুছে ফেলা যায়না..

হুট করে বন্ধ হয়ে গেল ভার্সিটি। হলে থেকে কি লাভ তার চেয়ে বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক। ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে গেছে বৃষ্টি।

গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে সেই কবে অথচ এখন পর্যন্ত একটি বারও বাবা টা ফোন দিল না। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছুড়ে দেয় বৃষ্টি। এই দীর্ঘশ্বাসটি ঠিকই বাবার কাছে যাবে বাবাও ঠিক দোয়া করে দিবে সেখান থেকে। এই দোয়া আশির্বাদ গুলো পাঠাতে কোনো নেটওয়ার্কের দরকার হয় না। এগুলো ঠিকঠাক ভাবেই পৌঁছে যায় প্রাপকের কাছে।

তার মন বলছে বাবা হয়তো ব্যস্ততার কারণে ফোন করতে পারেনি কিন্তু স্টেশনে এসে ঠিকই চমকে দিবে বৃষ্টিকে। বৃষ্টি গাল ফুলিয়ে থাকবে তখন, বাবার সাথে কথা বলবে না। যাত্রা পথে একবারও ফোন না দেয়ার অপরাধে। বাবা বকবক করে যাবে পাশে থেকে।

- আইসক্রিম নিবো মা?

- না।

- এতো ব্যস্ত ছিলাম তোকে ফোন দিতে পারিনি। আরেকটু আগে এলে তো নিতেও আসতে পারতাম না।

- না আসলেই পারতে...!

গাড়ি থামতে বৃষ্টি কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে। স্টেশনের পাশে ছোট ভাই বাদল দাড়িয়ে আছে তাকে নিয়ে যেতে। ঠিক এখানটায় দাঁড়িয়ে থাকতো তার বাবা। বাদল এগিয়ে এসে ব্যাগটা নিয়ে নেয়।

- কেমন আছো আপু? এতো দেরি হলো যে? রাস্তায় বুঝি অনেক জ্যাম?

বৃষ্টি হু হা করে এদিক ওদিক তাকায়। এই বুঝি বাবা এসে বলবে, 'মা, আমার দেরি হবে জানতাম। তাই বাদলকে আগে থেকে রেখে গিয়েছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি তো? পথে খেয়েছিস তো?

না, কেউ আসে না। দু ভাই-বোন ট্যাক্সিতে উঠে রওনা দেয় বাসার দিকে। দুজনই চুপচাপ। বাসায় পৌঁছে সোজা বাবার রুমের দিকে যায় বৃষ্টি। না রুমেও নেই বাবা। কিভাবে থাকবে বাবা? তার বাবা টা যে শহরে গেছে সে শহরের রাস্তা গুলো সব ওয়ান ওয়ে। সে শহরে শুধু যাওয়ায় যায়, বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা নেই। একদমই নেই...!

বৃষ্টির আর্তনাদে ভারী হয়ে গেছে বাসার পরিবেশ, সবার চোখের কোণে জলরাশি, শুধু বাবা টা নেই। শুধু বাবা টা ...

(গল্পের বৃষ্টি টা আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ, বৃষ্টির আজ জন্মদিন। বাবাহীন প্রথম জন্মদিনটা অনেক দুঃখের হবে জানি। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে বৃষ্টি, সেই চলে যাওয়ার মিছিলে আমি থাকবো, তুমি থাকবে, সবাই থাকবে, হয়তো কেউ আগে কেউ পরে শুধু এটুকুই। ওপারে তোমার বাবা অনেক ভালো থাকবেন এ কামনা করছি আল্লাহ পাকের কাছে। একটু ও মন খারাপ করবে না .. শুভ জন্মদিন, ভালো থেকো সবসময়)

লেখক: জাহিদুল আলম জাহিদ
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে