নাজমুন নাহার : মেয়েটা তার শরীরকে বাঁকিয়ে ছবি তুললো। চুল গুলো পিঠে ঠিক ঝর্ণার মত না। অনেকটা অবাধ্য পাখির মত – শুধুই ওড়াওড়ি। মন্তাজ ছবিটাকে কেটে প্রথেমে দু’টুকরো করলো। ম্যাচ জ্বাললো। সোজা করে ধরে নীচ থেকে আগুন লাগালো ছবিটাতে - দাউ দাউ করে জ্বলছে ছবিটা।
খিক খিক করে হাসলো মন্তাজ – এইডারে শেষ করতে হইবো আমার -মন্তাজের বউ ঘরে ঢুকে মন্তাজকে এভাবে খিক খিক করে হাসতে দেখে, আপন মনে কথা বলতে দেখে খেঁকিয়ে উঠলো-‘কি রে বাজার করতে যাছনা কে রে? তোর মাতা রাইন্ধা দিমু দুফরে খাওনের বেলায়’?
মন্তাজ চুপ করে যায় – সে বউকে খুব ভয় পায়। কিন্তু পকেটে আছেই মাত্র দশ টাকা। কাল সব টাকা সে শেষ করেছে ওই মাতারির পিছনে। হায়রে মাইয়ালোক। কত যে জ্বালা এই মাইয়ালোক লইয়া।
মন্তাজের বউ ঘরে ছাই পড়ে থাকতে দেখে দ্বিগুন রেগে গেলো। তার পরিষ্কারের বাতিক আছে। মন্তাজ ভয়ে ভয়ে তাকালো তার বউ এর দিকে - আজকের অন্ধকারটা ভয় ধরানো – মন্তাজ এক পা দুপা করে হাঁটে । ওই ছায়ায় ওই লোকটা আর মাইয়ালোকটারে শিকার করতে পারলে তার কয়েকদিন আর চিন্তা থাকবে না।
মেয়েটা আর ছেলেটা কাঁদছিলো – আসলে মন্তাজ বুঝতে পারছে না আদৌ এরা কাঁদছে কিনা, খুন খুন করে আওয়াজ আসলো কাঁদার – বিলাপ আর কান্দন কি এক জিনিস? তার বউ হাসিনা মাঝে মাঝে বিলাপ করে কাঁদে।
বাড়িতে তার মা – বাপ আছে। একদিন অন্ধকারে মন্তাজ তাকে এনেছিল শহরে। কিন্তু ইচ্ছা ছিলো বিক্রি করে দেবে। সেই রাতে কি হইলো কে জানে। হাসিনার রূপ তার কাছে মনে হয়েছিল আগুনের মতন। সে বিক্রি করতে পারলো না। রেখে দিলো। বিয়ে করলো।
সন্তানাদি হয় নাই। কিন্তু জিভের ঝাল বেড়েছে তিন গুন চার গুন।
মনে হয় এই মেয়েলোকের জিভে সাপ ঘুমায়। ফোঁস করে ওঠে কথা বললেই। আরে বাবা তোরে বিয়া কইরা ইজ্জ্বত দিছি আর তুই আমার লগে ফোঁস ফাঁস করছ! -কিন্তু ছেলেমেয়ে দুটো আসলেই করছে কি?
মন্তাজ পায়ে পায়ে এগুলো এদের দিকে –যদি পোলাডারে ধরা যায় কিছু থাকে তবে নিয়া নিবে সব। কোনো খুনাখুনিতে সে নাই। বহুত ঝামেলার ব্যপার। কোর্ট কাছারি পুলিশ!! মাইয়াডারে যা করবার করবে। সে ছুড়িটা বের করলো। খাপ থেকে বের করলো আবার বন্ধ করলো। আবার খুললো। মাঝে মাঝে বুকের ভেতর ধ্বক করে ওঠে। তার এরকম লাগার কথা না। এইটা তার পুরান কাজ কারবার। আজকাল একটু অবশ লাগে হাত আর বুকের ভেতর। সে ছুরিটা আবার বের করলো। অন্ধকারে ফুঁড়ে সে এদের সামনে দাঁড়ালো -ছুরির ফলা এই ঘন অন্ধকার রাতেও জ্বলতে লাগলো। মেয়েটা মনে হয় ভয় পেল। ছেলেটা দাঁড়িয়ে রইলো। নড়লো না। মন্তাজ ছেলেটাকে ধাক্কা দিলো। ছেলেটা পড়ে গেলো। নাকি পড়ে গিয়ে মরে গেলো বুঝতে পারল না।
মেয়েটা খিক খিক করে হাসতে লাগলো – মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে-মন্তাজের দিকে তাকিয়ে অন্ধকারে মেয়েটার চোখ জ্বলতে লাগলো বেড়ালের চোখের মতন। হায় আল্লাহ রে ভুত নিহি!! মন্তাজ দৌড়াবার জন্য চেষ্টা করলো। কিন্তু কি হলো কে জানে! তার পা যেন আটকে গেলো মাটির সাথে। (চলবে)–
২১সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন