নতুনের দ্বারপ্রান্তে ফিরে দেখা সেই ২০১৫
পাঠকই লেখক ডেস্ক: এসেছে নতুন বছর ২০১৬। নতুন এই বছরকে জানাই স্বাগতম। সময়ের পরিক্রমায় নতুন এই বছরটিও আমাদের মাঝ থেকে একদিন বিদায় নিয়ে যাবে। বিদাই ২০১৫..., হারিয়ে গেছে আমাদের মাঝ থেকে আরেকটি বছর, কতগুলো দিন কত গুলো মুহূর্তও যা আর কখনো ফিরে আসবে না। আমাদের সবার জীবন থেকেও একটি বছর বিদায় নিয়েছে এবং উপস্থিত হয়েছে নতুন একটি বর্ষ। বিদায় ২০১৫, স্বাগতম ২০১৬।
সময়ের পরিক্রমায় নতুন এই বছর ও একদিন আমাদের জীবন থেকে চলে যাবে। আর এভাবেই চলতে থাকবে আমাদের জীবনের গতি। যা হাজার লক্ষ কোটি বছর ধরে চলে আসা পৃথিবীতে চিরন্তন সত্য। বহমান এই সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই অনেকের জীবনে সুখ, শান্তি আর আসে সমৃদ্ধি। যার ফলে অনেকের জীবন হয়ে ওঠে অর্থবহ এবং মূল্যবান। আর যারা এই সময়কে যথাযথ কাজে না লাগিয়ে যদি অপচয় এবং ব্যয় করি মূল্যহীন কাজে, জড়িত হয়ে পড়ে হিংসা, হানাহানি, মারামারি তাহলে জীবন হয়ে পড়ে পশ্চাৎপদ ও দুর্বিষহ। তখন জীবনে নেমে আসে দুঃখ, কষ্ট আর গ্লানি। তাই আমাদের সবার উচিত চলমান এই সময়কে যথাযথ কাজে লাগানো এবং এর মধ্য থেকে সর্বোত্তম ফসল তুলে আনা। তাই বিদায়ী বছরকে পর্যালোচনা করে এর ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা আমাদের জন্য জরুরি, তেমনি নতুন বছরকে যথাযথ কাজে লাগানোর সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও অপরিহার্য। তাহলেই সম্ভব সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়া।
বিদায় ২০১৫ সালের উল্লেখ কিংবা আলোচিত গঠনা যা আলোচিত বা সমলাচিত ছিল চায়ের টেবিল থেকে ফুটফাত এমন কি অফিস আদালত পাড়ায়, বছর শুরুতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি জোট সমাবেশের ঘোষণা দেয়। যার ফলে বিএনপি জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট মুখোমুখি দাঁড়ায় রাজনৈতিক ময়দানে। যদিও অনেকেরই জানা তার পরও আবাও মনে করিয়ে দিতে চাই বর্তমানে সংসদের বিরোধী দল কিন্তু বর্তমান সরকারেরই একটি অংশ। যার ফলে সংসদের বাহিরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সকল ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে সরকার। বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করা হয় সেই সময়। বিএনপি ও তার জোট দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের ডাক দেন সরকার বিরোধী আন্দোলনের। ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দিয়েই ২০১৫ সাল শুরু হয়। এর ফলে দেশে শুরু হয় বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের গন গ্রেফতার। প্রায় তিন মাস ধরে চলতে থাকে এই রাজনৈতিক অচল অবস্থা। গন গ্রেফতারের ফলে এক সময় বিএনপি জোটের আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে যার ফলে এক সময় রাজনৈতিক উত্তেজনা কমে আসে। রাজনৈতিক উত্তেজনার চলার মাঝে মালোয়েশিয়ায় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করেন। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর তার সন্দান মেলে ভারতে। কিন্তু কীভাবে এবং কেমন করে ভারত গেলেন তা এখনো রহস্যঘেরায় রয়ে গেছে। ২০১৫ ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন থেকে সকাল ১১টায় বয়কট করে বিএনপি জোট সহ সকল প্রার্থি। এর ফলে, তিনটি সিটিতেই আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে। যে নির্বাচন জনগণের আগ্রহ ও ইচ্ছাকে ধুলিসাৎ করে দেয়া হয়েছে মনে করেন নতুন ভোটাররা। হয়তবা এই রকম ভবিষ্যতে নির্বাচন নিয়ে আর ভোটারদের কোনো আগ্রহ থাকবে না। যার ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ ও পুতুল হিসেবে পরিচিতি পায় সরকারের। সব চেয়ে যা আলোচিত হয়ে থাকবে হাজার বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে, সেটি হলো সরকার বিরোধী রাজনীতি দমনের জন্য কোন যুদ্ধাপরাধীরদের নয় কেবল মাএ ৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তিনজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ফাঁসি কার্যকর করা হয় এই বছর। বাংলাদেশের প্রধান ইসলামী দল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাবেক মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সেক্রেটারি আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ এবং চট্টগ্রাম থেকে ৬ বার গন মানুষের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির নীতি নির্ধারণী জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
তা ছাড়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত, গুম, খুন, ব্লগার, বিদেশী নাগরিককে হত্যা করা, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি প্রায় ১৮ বছর বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা আসামের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরত পাঠানো অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি নুর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনা। বছরজুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সংঘাতের ফলে নষ্ট হওয়া শিক্ষার পরিবেশ। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন। পোশাক শিল্পেখাতে অস্থিরতার ফলে দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ। ২০১৫ সাল বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বলে সরকার কর্তিক ঘোষনা। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি। ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যা অব্যাহত থাকা এবং জঙ্গিবাদ ও আইএস ছিল বছরজুড়েই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। আরেকটি বিষয় ভারতের সাথে সরকারের বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীর করতে গিয়ে হয়তবা অনেকে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বন্ধুত্ব টাকে গুরুত দিয়েছিল সরকার, যার ফলে দেশপ্রেম ছিল মিথ্যা এমন প্রশ্ন ছিল অনেকের কাছে..!! তিস্তার পানি চুক্তির খবর না থাকলেও চার দেশীয় সড়ক যোগাযোগের নামে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেশের জন্য সুসংবাদ আর দুরসংবাদ এই রকম অনেক অপ্রত্যাশিত গঠনার সাক্ষী হয়ে রবে এই বছরটি।
বিদায়ী বছরের আমাদের অপকর্ম গুলোকে চিরতরে বিদায় করে নতুন বছরে সুন্দর একটি সমাজ রচনা করতে হবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মর জন্য। আর এক্ষেত্রে সরকার এবং রাজনীতিবিদদেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আসুন, বিগত বছরের যা কিছু ভুল তা দূর করে আগামীর দিনকে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি,আরো সুন্দর করি। হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদান একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য কাজ করি। নতুন একটি প্রজন্মকে পরিচয় করিয়েদিই একটি নতুন জাতির কাছে। নতুন প্রজন্মকে রক্ষার মাধ্যমে একটি জাতিকে রক্ষা করি। অতীতের সকল দুঃখ-কষ্ট-গ্লানি দূর হয়ে নতুন বছর সবার জন্য নিয়ে আসুক সুখ শান্তি-সমৃদ্ধি-এটাই প্রার্থনা।
লেখক: রনি মোহাম্মদ, লিসবন পর্তুগাল
�