শুক্রবার, ০২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:২৩:৫৩

পৃথিবীতে ‘নরকের দরজা’, জ্বলছে ৫০ বছর ধরে!

পৃথিবীতে ‘নরকের দরজা’, জ্বলছে ৫০ বছর ধরে!

বিচিত্র জগৎ ডেস্ক: জন্ম থেকেই নরকের কথা শুনে আসছি আমরা। তবে সেখানে যেতে চাই না কেউই। কারণ নরকে গিয়ে মানুষ নাকি পাপের শা'স্তি পায়। তাই নরকের দরজার ত্রিসীমানায় যাওয়ার বিন্দুমাত্র বাসনা নেই কারও। কিন্তু আপনি যদি ভূপর্যটক হন, সম্ভব হলে নরকের দরজায় অবশ্যই একবার যাবেন। হলফ করে বলা যায়, নরকের দরজার কাছে গিয়ে, আপনি ম'ন্ত্রমু'গ্ধ হয়ে যাবেন। তবে এ নরকের দরজা, সে নরকের দরজা নয়। এখানে নর'কয'ন্ত্র'ণা নেই, আছে অপার বিস্ম'য় ও সীমাহী'ন মু'গ্ধ'তা।

মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান। এই তুর্কমেনিস্তান একসময় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গ। তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাত থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে আছে দারভাজা গ্রাম। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দারভাজা এলাকায় ১৯৭১ সালে রাশিয়ার অ'নুস'ন্ধা'নকারীরা আবিষ্কার করেছিলেন একটি খনি।

অ'নুস'ন্ধা'নকারীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, এই খনি থেকে পাওয়া যাবে খনিজ তেল। তাই তেল তোলার জন্য আনা হয়েছিল বিশাল বিশাল ড্রি'ল মেশিন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, ড্রি'ল করলেই বে'রিয়ে আসছে বি'ষা'ক্ত গ্যাস। জানা গিয়েছিল খনিটি খনিজ তেলের নয়, এটি আসলে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি।
ড্রিল করার সময় একটি বিশাল এলাকাজু'ড়ে নে'মেছিল ধ'স। তৈরি হয়েছিল, ২২৬ ফুট ব্যাস ও ৯৮ ফুট গভীরতা যু'ক্ত এক বিশাল গহবর। প্রচুর পরিমাণে বি'ষা'ক্ত গ্যাস বের হতে শুরু করেছিল গহবরটি থেকে। গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিল, গ্যাসটি হল ‘মিথে'ন’।

খনি থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাসের বি'ষক্রি'য়ায় মা'রা যেতে শুরু করেছিল পশুপাখি। মৃ'ত্যুভ'য়ে পা'লাতে শুরু করেছিলেন দারভাজা গ্রামের মানুষ। চিন্তায় পড়েছিল খনি কর্তৃপক্ষ। গ্যাস নির্গমণের পথ কিছুতেই ব'ন্ধ করা যাচ্ছিল না।

পশুপাখি, কীটপত'ঙ্গ, স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশকে বাঁ'চাতে এক অদ্ভুত সিদ্ধা'ন্ত নিয়েছিলেন ভূতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞানীরা। আগুন ধ'রিয়ে দিয়েছিলেন বিশাল গহবরটি থেকে বে'রিয়ে আসা মিথে'ন গ্যাসে।

দা'উদা'উ করে জ্ব'লতে শুরু করেছিল বিশাল গহবর থেকে বে'রিয়ে আসা কোটি কোটি ঘনফুটের গ্যাস। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন খনিতে থাকা গ্যাস কিছুদিনের মধ্যেই পু'ড়ে শেষ হয়ে যাবে। নিভে যাবে আগুন। বেঁ'চে যাবে পরিবেশ।

কিন্তু মেলেনি বিজ্ঞানীদের হিসাব। আজও  নেভেনি খনির আগুন। জ্ব'লে চলেছে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে। সেই ১৯৭১ সাল থেকে। যেদিন খনিটির প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার ফু'রাবে, সেদিন নিভে যাবে আগুন। তবে সেটা কবে, তা জানাতে পারেননি ভূতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞানীরা।

এই জ্বল'ন্ত খনিটি আজ  হয়ে উঠছে তুর্কমেনিস্তানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। কারাকুম মরুভূমিতে প্রতিবছর ট্রে'কিং ও ক্যা'ম্পিং করতে আসা হাজার হাজার পর্যটক, ভিড় করেন খনিটি দেখবার জন্য। তারাই খনিটির নাম দিয়েছেন ‘নরকের দরজা’।

তবে নরকের দরজার প্রকৃ'ত রূ'প দেখতে হলে যেতে হবে রাতে অন্ধকারে। রাতে অনেক দূর থেকে দেখা যায় নরকের দরজার র'ক্তি'ম আভা। মিশকাল রাতের পটভূমিকায় খনিটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালে মনে হবে চলে এসেছেন  পৃথিবীর বাইরে।

তবে খুব কাছে যাওয়া যায় না এবং কাছে গিয়ে ১০/১২ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকা যায় না, উ'ত্তা'পের কারণে। তাই বুঝি কোনও রসিক পর্যটক এই বিশাল জ্বল'ন্ত গহবরটির নাম দিয়েছিলেন ‘শয়'তানের সুইমিংপুল’।

তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাদের ইন্টারন্যাশনাল বাস স্ট্যান্ড থেকে ট্যুরিস্ট ট্যাক্সি বা বাসে করে তিন ঘণ্টায় যাওয়া যায় দারভাজা বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে সাত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বা স'রাস'রি গাড়িতেই গেলে পাওয়া যাবে নরকের দরজা।  রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে থাকতে হবে তাঁবুতে। সে ব্যবস্থা করে দেবে স্থানীয় গাইডই। তবে নি'শ্চি'ন্ত থাকুন, রাতটা নরকে নয়, স্বর্গেই কাটাবেন আপনি। সূত্র: দ্য ওয়াল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে