রবিবার, ০৩ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:৪৩:০৩

ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল

ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল

সাদিয়া সুলতানা : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫। সকালে ঘুম ভেঙেছিল রোমাঞ্চ আর শঙ্কা নিয়ে। খুব ভোরে ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসে চড়ে বসেছিলাম সম্পূর্ণ অপরিচিত ৩৪ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে, যাঁরা আমার মতোই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। একে তো প্রথম ট্রেনভ্রমণ, তার ওপর পরিবারের কাউকে ছাড়া প্রথম ঢাকার বাইরে যাওয়া—দিনটি আমার জন্য বিশেষ না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। আমাদের গন্তব্য সিলেটের শ্রীমঙ্গলে আয়োজিত ইয়ুথ লিডারশিপ বুটক্যাম্প ২০১৫। চার দিনের এই আবাসিক ট্রেনিংটি অনুষ্ঠিত হয়েছে শ্রীমঙ্গলের টি রিসোর্ট, হিল ভিউ রিসোর্ট ও গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার’ (বিওয়াইএলসি)। দেশের সম্ভাবনাময় তরুণদের নেতৃত্বচর্চার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে ২০০৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘অনুসন্ধান, অভিজ্ঞতা ও প্রকাশ’ স্লোগান সামনে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দক্ষ ও আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন নেতৃত্ব তৈরিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইংরেজি, বাংলা ও মাদ্রাসা শিক্ষা—তিন মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের একত্র হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী হিসেবে প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে আমি এই ক্যাম্পে অংশ নিয়েছি। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক হাজারের বেশি আবেদনকারীর মধ্য থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর ১০০ জন তরুণ-তরুণী এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। ট্রেনের চাকা চলতে চলতেই আমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিয়েছিলাম। ঠিক ১২টায় পৌঁছালাম শ্রীমঙ্গল স্টেশনে। বেলা তিনটায় কিছু উপহার হাতে তুলে দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা আমাদের বরণ করে নেন। নেতৃত্বের ওপর আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, কর্মক্ষেত্র পরিদর্শন ও ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত আলোচনা ছিল চার দিনের এই আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রকল্পে। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। শুরুতে আমাদের ১০০ জনকে ১০-১২ জনের কয়েকটি ছোট দলে ভাগ করা হয়। প্রতিটি দলে ছিলেন একজন ‘ফ্যাসিলিটেটর’। আমার গ্রুপের নাম ছিল হরাইজন্টাল এইট। ক্যারিয়ার বিকাশের জন্য সবার পছন্দকে সরকারি, বেসরকারি ও অলাভজনক সেক্টরে ভাগ করে ১৩ ডিসেম্বর সকালে আমাদের ডিসি অফিস, ব্র্যাক ও সামিটের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ছিলাম সামিট ভ্রমণের দলে। পুরো পাওয়ার প্ল্যান্টটা ঘুরে দেখেছিলাম আমরা। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ও প্ল্যান্টের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছিল। ভ্রমণ শেষে রিসোর্টে ফেরার পর পেশা সম্পর্কিত অধিবেশন পরিচালনা করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। ক্যাম্পের একটা মজার অভিজ্ঞতার কথা বলি। সেশন চলাকালে আমাদের প্রত্যেকের টেবিলে কিছু কাগজ, স্ট্র, স্কচটেপ, কাঁচি ইত্যাদি দিয়ে একটা উঁচু অবকাঠামো বানাতে বলা হয়েছিল। যাদের কাঠামোটি সবচেয়ে উঁচু ও মজবুত হবে, তারাই হবে বিজয়ী। সময় ছিল ২৫ মিনিট। শুরু হলো প্রতিযোগিতা। শেষ তিন মিনিটে আমাদের কোনো কথা না বলে শুধু ইশারায় কাজ করতে বলা হলো। এই পুরো কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল, দলগত কাজের মাধ্যমে সবার সিদ্ধান্তকে কীভাবে এক করা যায়, তা শেখানো এবং দলগত কাজে একজন বিরোধী, একজন অনুসরণকারী ও একজন নীরব দর্শকের ভূমিকা কতটুকু, তা বোঝানো। ১৪ ডিসেম্বর গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে আমাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন বিওয়াইএলসির চেয়ারম্যান আখতার মতিন চৌধুরী। অংশগ্রহণকারীদের সনদ প্রদান ও নৈশভোজের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ১৫ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে পেয়েছি বিশেষ উপহার—ছোট্ট চায়ের প্যাকেট। মাত্র চার দিনেই সেখানকার সবার আন্তরিকতায় আমরা এতটাই আপন হয়ে গিয়েছিলাম যে সবাইকে ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ৩ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে