মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা: জন্মিলে মৃত্যু আছে। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারে না। তবুও হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে মেনে নিতে হয়। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি জাহিদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান শিউলী সারারাত দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তাদের আদরের রাজকন্যা তাসনিয়া শিশু হাসপাতালের আইসিসিইউতে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স কারো আফসোসের শেষ নেই। এতটুকু নিস্পাপ শিশুকে আল্লাহ এত কষ্ট দিল কেন?
২০১৪ সালের ডিসেম্বর ১২ তারিখ তাসনিয়ার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দেরী না করে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদরের কন্যা সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়। কিন্তু ২৫ দিন হাসপাতালে তাসনিয়া জীবন যুদ্ধে জয়ী হলেও ২৬ দিনের মাথায় ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সকাল ৭.৩০টায় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। ছোট্ট শিশু তাসনিয়ার মৃত্যু তার বাবা-মা আজও মেনে নিতে পারেনি।
২০০৯ সালের ৬ আগস্ট যে শিশুটি চাঁদের মত আলোকিত করে পৃথিবীতে এসেছিল সে যে এত অল্প সময় নিয়ে এসেছে তা কে জানে। বাবার কাধে সন্তানের লাশ যে কত কষ্টের আর যন্ত্রণার তা একমাত্র সন্তান হারা পিতাই জানেন। তাসনিয়া এখন বেহেস্তের কলি হয়ে নিকুঞ্জে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে আছে। দুনিয়াতে এই ফুল না ফুটলেও কেয়ামতের বসরার গোলাপ হয়ে তাসনিয়া পরিস্ফুটিত হবে এবং জাহিদ ও তার স্ত্রীর অন্ধকারকে আলোকিত করবে। তাসনিয়া জানে সে আর ফিরে আসবে না। তবুও নিকুঞ্জের জামতলার আকাশের কোনায় কানায় শুকতারা হয়ে জ্বলে ওঠো। সেই তারা দেখে তোমার মা-বাবা ও একমাত্র ভাইয়ের হৃদয় ভরে উঠবে।
৬ জানুয়ারি তাসনিয়ার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। জাহিদ ও তার স্ত্রী গতকাল একফোটা ঘুমাতে পারেনি। তাসনিয়া ইকবালের জন্য দোয়া হবে। সকাল থেকে বাড়িতে হুজুর এসে কোরআন খতম করবে। বাদ জোহরে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। জাহিদ ভাই একান্ত কিছু প্রিয় মানুষ ও এলাকাবাসীকে তার সন্তানের জন্য দোয়া করার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন।
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ২১ বই মেলায় তাসনিয়াকে নিয়ে ছড়ার বই প্রকাশ হবে। তাসনিয়াকে সবার মাছে অমর করে রাখতে তার বাবা জাহিদ ইকবাল ‘তাসনিয়া ইকবাল মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ গঠন করেছে। এভাবে সবার মাঝে ছোট শিশু তাসনিয়া বেঁচে থাকবে আর তার প্রিয় জননীর কাছে কষ্টের স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে। এই তো তাসমিয়া বেঁচে থাকার কিছুদিন আগেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাবা-মা-ভাইয়ের সাথে বেড়াতে গিয়েছিল। ছোট্ট মেয়ে তাসনিয়াকে নিয়ে সাগর সৈকতে মা ঢেউয়ে ঢেউয়ে আত্মহারা হয়েছিল। সেদিনের আনন্দ আজ বিষাদে নীল হয়ে গেছে। সেই ছবি বুকে নিয়ে মা আজো অঝোরে কাঁদে। পৃথিবীতে কোন মা-বাবার বুক খালি করে এত অল্প বয়সে কেউ যেন না ফেরার দেশে না যায়। তাসনিয়ার জন্য আমাদের রইল অজস্র ভালবাসা ও দোয়া। তুমি বেহেস্তে গিয়ে তোমার মা-বাবাকে শান্তি দিও।
৫ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল