বিচিত্র জগৎ ডেস্ক : রাতের আকাশ অদৃশ্য। তবু একটু একটু করে মহাকাশেও জমছে স্যাটেলাইট বর্জ্য। মহাকাশে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে ৯ হাজার টন বর্জ্য। এ বর্জ্যে ওজন ৭০০ স্কুল বাসের সমান। এই বর্জ্য জমেছে পুরনো স্যাটেলাইট, বিকল হয়ে যাওয়া স্যাটেলাইট আর রকেটের ধব্বংসাবশেষ থেকে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জন্য এ বর্জ্য হুমকি। জিপিএস কিংবা টেলিকমিউনিকেশন সেবাও ব্যাহত হচ্ছে এই বর্জ্যের জন্য।
সমস্যা আরো গুরুতর হচ্ছে দিন দিন। কারণ মহাকাশে প্রতি বছরই একের পর এক স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে। এলন মাস্কের স্পেস এক্সতো একের পর এক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর প্রয়াসে আছে। এবার মহাকাশের বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। অ্যাস্ট্রোস্কেল নামের এই কোম্পানি মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য কাজাখস্তান থেকে একটি মহাকাশযান পাঠাবে। কোম্পানির প্রধান কার্যালয় জাপানে কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে ব্রিটেনে।
সয়ুজ টু রকেট যাবে মহাকাশে, সঙ্গে থাকবে ১৭৫ কেজির একটি মহাকাশযান আর ১৭ কেজির একটি স্যাটেলাইট। এই মহাকাশযানই পরিষ্কার করবে বর্জ্য। কয়েক মাস চলবে ইঁদুর বিড়াল খেলা। অ্যাস্ট্রোস্কেল মহাকাশযানটির ক্ষমতা পর্যালোচনা করবে। আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়ে গেলে চেষ্টা করা হবে মহাকাশযান থেকে স্যাটেলাইটটি বিচ্ছিন্ন করে পৃথিবীতে নিয়ে আসার এবং জ্বালিয়ে দেয়া হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মাঝে শেষ হবে এই প্রক্রিয়া।
মহাকাশযান আর স্যাটেলাইটটি আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারছে কিনা, তা পুরো অভিযানে খতিয়ে দেখা হবে। এ মহাকাশযানের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৫০০ মাইল। বুলেটের চেয়েও এর গতি থাকবে বেশি। মূলত স্যাটেলাইটেরর ওপর একটি চুম্বকীয় প্লেট রাখা হবে। নতুন সব স্যাটেলাইটের মধ্যেই ডকিং প্লেট থাকবে বলে আশা করছে অ্যাস্ট্রোস্কেল। কোম্পানিটি বলছে, এখনই সময় মহাকাশের আবর্জনা পরিষ্কারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার। মহাকাশের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে আবর্জনা অপসারণ জরুরি।
অন্য স্পেস এজেন্সি আর কোম্পানিও মহাকাশের আবর্জনা পরিষ্কারে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। ইউরোপের স্পেস এজেন্সি মহাকাশের আবর্জনা পরিষ্কার করবে ক্লিয়ার স্পেস ওয়ান পাঠিয়ে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই মহাকাশযান পাঠানো হবে। এই যান ৪টি রোবটিক হাতে মহাকাশের আবর্জনা সংগ্রহ করবে।
নাসার গবেষণা বলছে, বর্তমানে মহাকাশে ২৬ হাজার টুকরা বর্জ্য পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে। এসব বর্জ্য স্যাটেলাইট বা মহাকাশযানের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। ১০ কোটি টুকরা লবণ বা গমের দানার মতো বর্জ্যও মহাকাশে ভাসছে। এগুলো স্পেস স্যুট নষ্ট করে দিতে পারে। নাসা বলছে, ক্ষুদ্র আবর্জনাগুলোই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এগুলো দেখা যাবে না তাই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই মহাকাশযানগুলোর। পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।