বিচিত্র জগৎ ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার একজন নারীকে একসঙ্গে একাধিক পুরুষকে বিয়ে করার বিষয়টি বৈ'ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এরপর দেশটির রক্ষণশীল সমাজে প্রতিবা'দের ঝ'ড় উঠে'ছে। এ প্রস্তাবে এত ব্যাপক প্রতি'বাদের ঝ'ড় ওঠায় অনেক বিশ্লে'ষকই বি'স্মি'ত নন। এ বিষয় নিয়ে কাজ করেন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ কলিস মাচোকো বলেছেন, এই আ'প'ত্তির মূলে রয়েছে পুরুষ নি'য়ন্ত্রি'ত সংস্কৃ'তি। আফ্রিকান সমাজ এখনও সমান অধিকারের জন্য তৈরি হয়নি।
বিশ্বে খুবই উদারপ'ন্থি সং'বি'ধান যেসব দেশে রয়েছে, তার একটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির সং'বি'ধানে স'মকা'মী নারী ও স'মকা'মী পুরুষের মধ্যে বিয়ে এবং পুরুষদের জন্য বহুবি'বাহ বৈ'ধ। টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ব্যবসায়ী মুসা এমসেলেকুর চার বউ। কিন্তু তিনি নারীদের বহু'বিবাহের বি'রো'ধী। এটা আফ্রিকার সং'স্কৃতিকে ধ্বং'স করে দেবে বলে দা'বি করেন তিনি। এদের সন্তানদের কী হবে, তারা কীভাবে জানবে তাদের পিতা কে- এমন প্রশ্ন তু'লেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় রিয়ালিটি টিভির পর্দায় তার একাধিক স্ত্রীর সাথে সংসার বিষয়ক অনুষ্ঠান করে তারকা খ্যাতি পেয়েছন তিনি। "নারীরা এখন পুরুষের ভূমিকা নিতে পারে না। এমন কথা কেউ আগে কখনও শোনেনি। মেয়েরা কি এখন বিয়ে করার জন্য পুরুষদের লো'বো'লা (দেনমোহর) দেবে? পুরুষরা ওই নারীর পদবি (সা'রনেম) গ্রহণ করবে এমনটাই কি এখন আশা করা হবে?" প্রশ্ন করেন তিনি।
অধ্যাপক মাচোকোর জন্ম প্রতিবেশী জিম্বাবুয়েতে। সেখানে নারীদের বহু'বিবাহ নিয়ে তিনি গবে'ষণা করেছেন। এমন ২০ জন নারীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন যাদের একাধিক স্বামী রয়েছেন। এ ছাড়া এ রকম ৪৫ জন স্বামীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন যারা অন্য স্বামীদের সঙ্গে মিলে স্ত্রীর ঘর করেন।
এধরনের বিয়ে জিম্বাবুয়ের সমাজে অগ্রহ'ণযোগ্য এবং আইনগতভাবে স্বীকৃ'ত নয় বলেছেন অধ্যাপক মাচোকো। "নারীদের বহু'বিবাহ যেহেতু সমাজের একটা অংশ ভাল চোখে দেখে না, তাই সেখানে এধরনের বিয়ে হয় গো'পনে, এধরনের সংসারের খবরও গো'পন রাখা হয়," তিনি বলছেন। "কেউ যদি এধরনের সংসার দেখলে প্রশ্ন তোলেন- বিশেষ করে এমন কেউ যাদের তারা চেনেন না বা বিশ্বাস করেন না, তারা এরকম কোন বিয়ের কথা পু'রোপু'রি অস্বী'কার করে যান। তাদের মধ্যে প্রতি'শো'ধ বা নি'র্যাত'ন ও হ'য়রা'নির ভ'য় কাজ করে।"
প্রফেসর মাচোকো যাদের ওপর তার গবে'ষণার কাজ করেছেন তাদের সবার ক্ষেত্রেই স্বামীরা স্ত্রীর ঘরে একসাথে থাকেন না। তারা থাকেন আলাদা আলাদাভাবে সমাজ যাতে তাদের বিয়ের কথা না জানে। কিন্তু তারা সবাই একই স্ত্রীর সাথে সং'স'র্গ করেন এবং স্বামীরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে খো'লাখু'লিই কথাবার্তা বলেন। "এদের মধ্যে একজন নারী বলেন তার বয়স যখন ১২, যখন তিনি স্কুলের ছাত্রী, তখন থেকেই তিনি একাধিক পুরুষকে একসাথে বিয়ে করার চি'ন্তা লালন করতে শুরু করেন। লেখাপড়ার সময় তিনি জেনেছিলেন, মৌচাকে রানি মৌমাছি থাকে একজন আর তাকে ঘিরে থাকে ব'হু পুরুষ মৌমাছি। তারা সবাই একসাথে ওই রানির সঙ্গে স'হবা'স করে," বলছেন প্রফেসর মাচোকো।
প্রা'প্তবয়স্ক হবার পর ওই নারী একাধিক পুরুষস'ঙ্গীর সাথে যৌ'ন সং'স'র্গ শুরু করেন। ওই পুরুষরা সবাই পরস্পরকে চিনতেন এবং বিষয়টা জানতেন। "তার বর্তমানে যে নয়জন স্বামী রয়েছেন, তাদের মধ্যে চারজন ওই পুরনো দলে ছিলেন।" জিম্বাবুয়েতে অধ্যাপক মাচোকো দেখেছেন, নারীদের বহু'বিবাহের ক্ষেত্রে সাধারণত নারীরাই সম্পর্ক শুরু করেন এবং পুরুষদের সবাইকেই বিয়ের পর তার সাথে স'হবা'সের আমন্ত্রণ জানান। কেউ কেউ বিয়ের জন্য নারী দেনমোহর দেন, কেউ আবার তা না দিয়ে ওই নারীর জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের অংশ বহন করেন। ওই নারী যদি দেখেন তার কোন স্বামী, অন্য স্বামীদের মধ্যে ঝ'গ'ড়া বা'ধাবার বা তার সংসারে অ'শান্তি সৃষ্টির করছেন, তাকে ঘর থেকে তা'ড়িয়ে দেওয়ার ক্ষ'ম'তাও ওই নারী রাখেন।
অধ্যাপক মাচোকো বলছেন, তিনি যাদের সা'ক্ষাৎকার নিয়েছেন তারা বলেছেন অন্য স্বামীদের সাথে মিলে এক বৌ-এর ঘর করার পেছনে তাদের মূল কারণ ছিল ওই নারীর প্রতি তাদের ভালবাসা। তারা কেউই ওই নারীকে হা'রা'নোর ঝুঁ'কি নিতে চাননি।
কয়েকজন পুরুষ বলেছেন তারা তাদের স্ত্রীদের যৌ'ন চাহি'দা মে'টাতে অ'ক্ষ'ম ছিলেন, কিন্তু ডি'ভো'র্স মে'নে নেবার বদলে বরং অন্য স্বামীদের সাথে মিলেমিশে থাকাটাই ভাল বলে মে'নে নিয়েছেন। কোন কোন পুরুষের সিদ্ধা'ন্তের পেছনে কারণ ছিল তাদের ব'ন্ধ্যা'ত্ব। স্ত্রী যাতে সন্তানধা'রণ করতে পারেন তার জন্য স্ত্রীর আরেক বিবাহ তারা মে'নে নিয়েছেন। এভাবে ওই ব'ন্ধ্যা পুরুষরা সমাজে নিজেদের "মুখ র'ক্ষা" করেছেন এবং তাদের "পৌ'রুষের" অভাব নিয়ে সমাজে আলো'চনার হাত থেকে বেঁ'চেছেন। অধ্যাপক মাচোকো বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় নারীদের বহু'বিবাহ সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন। তবে, নারী পুরুষ সমানাধিকার নিয়ে আ'ন্দো'লনকারীরা নারীর সমানাধিকার ও ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেবার দাবিতে নারীদের বহু'বিবাহকে আইনি স্বী''কৃতি দেবার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দেশটির বর্তমান আইনে একাধিক নারীকে বিয়ে করার অধিকার আছে শুধু পুরুষের।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গ্রিন পেপার নামে সরকারি ন'থিতে এই প্রস্তাব অ'ন্তর্ভু'ক্ত করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে শ্বেতা'ঙ্গ সং'খ্যাল'ঘুদের শাস'নকালের অব'সা'নের পর এই প্রথম দেশটির বিবাহ আইনে বড় ধরনের র'দব'দল আনার পরিক'ল্পনা সরকার নিয়েছে। তাই সরকার এই নথিটি জনসাধারণের মতামত জানানোর জন্য উন্মু'ক্ত করে দিয়েছে। "এই গ্রিন পেপারের মূল লক্ষ্য হল মানবাধিকার পরিস্থি'তির উন্নয়ন। কাজেই মানবা'ধিকারের এই দিকটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ," বলছেন শার্লিন মে, যিনি নারীদের জন্য একটি আইনি কেন্দ্রে উইমে'ন্স লি'গ্যা'ল সেন্টা'রের আইনজীবী। এই সংস্থা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। "আইনের সং'স্কা'র যেখানে লক্ষ্য সেখানে পুরুষদের দৃ'ষ্টিভ'ঙ্গিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে নারীদের অধিকার যাতে ক্ষুণ্ন' না হয় সেটাও দেখতে হবে," তিনি বলেন।
বিভিন্ন স'ম্প্রদায়ের প্রতিক্রি'য়া
এই ন'থি'তে মুসলিম, হিন্দু, ইহুদী এবং রাস্ট্রাফেরিয়ান সব জনগো'ষ্ঠীরই বিবাহকে আইনগত স্বীকৃ'তি দেবার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স'ম্প্র'দায়ের মানুষ এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও ধর্মীয় নেতারা নারীদের বহু'বিবাহকে আইনগত স্বীকৃতি দেবার বিষয়টিকে নি'ন্দা জানিয়েছেন। বিরোধী দল আফ্রিকান ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রাটিক পার্টির নেতা রেভারেন্ড কেনেথ মেশো বলেছেন এই পদক্ষেপ "সমাজ ধ্বং'স" করে দেবে। "এমন পর্যায়ে আমরা পৌঁছব যখন একজন স্বামী স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করবেন, 'তুমি অন্য স্বামীর সাথে বেশি সময় কা'টাও, আমাকে যথেষ্ট সময় দাও না' তারপর দুই স্বামীর মধ্যে শুরু হবে দ্ব'ন্দ্ব," তিনি বলছেন।
ইসলামিক আল-জামা পার্টির নেতা গানিয়েফ হেনড্রিক্স বলেছেন: "চিন্তা করে দেখুন, ওই নারীর সন্তান জন্মের পর ডি'এ'নএ পরীক্ষা করে নির্ধা'রণ করতে হবে কোন স্বামী ওই সন্তানের বাপ!"
শিশু ও পরিবার
মি. এমসেলেকু যু'ক্তি দেখাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় সমানাধিকার নীতির নামে "বা'ড়াবা'ড়ি করাটা" সঠিক হবে না। "বিষয়টা সংবিধানে আছে বলেই যে সেটা আমাদের সমাজের জন্য ভাল এমনটা মনে করার তো কোন কারণ নেই।" তাকে প্রশ্ন করা হয় তার নিজের তো চারজন স্ত্রী। তাহলে একজন নারীর বেলায় এই বৈ'ষ'ম্য কেন? নারীর চারজন স্বামী থাকলে সমস্যা কোথায়?
তার উত্তর ছিল: "আমার চারটে বিয়ে, তাই এ ব্যাপারে আমার মতামতকে অনেকে বলছে ভ'ণ্ডা'মি। কিন্তু আমার জবাব হল নারীদের জন্য বহু'বিবাহ আফ্রিকান সমাজ ও সংস্কৃ'তির বিরো'ধী। আমাদের সংস্কৃ'তিকে আমরা বদ'লাতে পারি না।"
কিন্তু অধ্যাপক মাচোকো বলছেন নারীদের বহু'বিবাহ প্র'থা একসময় চালু ছিল কেনিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং নাইজেরিয়ায়। গ্যাবোনে নারীরা এখনও বহু'বিবাহ করে, সেটা ওই দেশে আইনসি'দ্ধ। "খ্রিস্টান ধর্মের আগমন এবং ঔপনিবেশিক শাসন, সমাজে নারীর ভূমিকাকে খা'টো করে দিয়েছিল। তাদের সমান চোখে দেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর সমাজে আ'ধিপ'ত্য প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল বিবাহ প্র'থা।" প্রফেসর মাচোকো বলেন একাধিক স্বামীর সাথে নারীর স'হবা'সের মধ্যে দিয়ে জন্মানো সন্তান নিয়ে যেসব উ'দ্বে'গ সমাজে প্রকা'শ করা হয় তার কারণ হল পিতৃতা'ন্ত্রিক সমাজব্যব'স্থা। "এ ধরনের সংসারে জ'ন্মা'নো শিশু নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন? যে শিশু ওই নারীর গ'র্ভে আসছে সে তো তার পু'রো পরিবারেরই সন্তান।" সূত্র: বিবিসি।